শকুন
দুপুরের রোদ কাঁপে কাকের ডানায়
. আণবিক আঁধারের ভুল সহোদর,
সারাটি জনম শুধু আগুনবারুদ গোলা;
প্রতিটি জরায়ূ ভ্রূণে মিসাইলবোমা—
. যুদ্ধের উত্তরাধিকার।
পৃথিবীর চোখেমুখে বিবমিষা ঘুম; গোলাভরা ট্যাংক
অজগরের মত ছোটে, স্কুলে মসজিদে খুনের আগুন,
. বাদামি আলোয় আজ কাঁদছে আকাশ;
চারদিকে কাক আর ক্ষুধার্ত শকুন
. বিপন্ন পৃথিবী জুড়ে ভাগাড় বিশাল।
কমলা রঙের রোদ তবুও হৃদয়ে জাগে
শহরের পোড়া মুখ গোঙায় শিশুর আর্তস্বরে,
. মায়ের রক্তের ধারা সড়কে প্লাবন নামে।
আমাদের ঘরে ঘরে নেমেছে শকুন; সম্মুখে
নেপথ্যে তারা ডানা মেলে নাচে―নামছে মিছিল
. ফের মৃত্যুমড়কের।
বাংলা ছাড়ো
স্বাধীনতা আসে পলাশের রঙে লাল সবুজের দেশে,
কিষাণীর বুকে সোনার হাঁসুলি আগুনের মতো হাসে।
আমার বোনের দিঘল কাজল কেশ আঁকে মেঘ রাত,
স্বাধীনতা বোঝে পালোয়ান বাহু টান টান দুটো হাত।
সোনার টুকরো জাদু ছেলেমেয়ে স্বাধীন সাহসে বাঁচে,
আগামী তাদের হাত ধরে টানে স্বপন দুচোখে নাচে।
স্বাধীনতা দেখো আমার মায়ের শাড়ির আঁচল লাল,
বাবার দুচোখে চশমায় আঁকা নিবিড় মায়াবী জাল।
স্বাধীনতা আসে তামাম শহরে নগরে পাহাড়ে গ্রামে,
শ্লোগান মুখর সবুজ পতাকা লড়ে প্রেমে আর ঘামে।
আমার সামনে তবু তুমি আজ দাঁড়িয়ে স্বপন কাড়ো,
রাজাকার তুই গোখরো হায়েনা এখুনি বাংলা ছাড়ো।
বার্ন ইউনিট
সড়কশালিক গোঙায় শীতার্ত দেহে―কাক ও শকুন ছোঁড়ে তাজা ককটেল; দীর্ঘশ্বাস বাড়ে―মধ্যাহ্নেই রাত। অচিন আজাব― পোড়ারুটিকালো দগদগে মুখ, বিদঘুটে ক্ষত পোড়া বুক হাত কালশিটে পিঠে তুমি শুয়ে আছ; তুমি আজ হনুফা বেওয়া―অসমাপ্ত যুদ্ধদগ্ধ জননী আমার। তোমাকে তাকালে ঢাকার চেহারা ফুটে ওঠে তোমার দুচোখে; বিলাপ ও বেদনার রাতজাগা চোখে বিমর্ষ ডাক্তার―সফেদ সেবিকা ঘড়ির দোলক অবিরাম ঘোরে।আমাদের ঘুম নেই―তুমি তো মিমির জন্যে কাঁদো, ওর পরীক্ষার কথা ভাবো, অথচ সে জয় আর জাগরণের নেশায় আলপনা আঁকে; তোমার শরীরে নেচেনেচে বাড়ে বিষ আর ব্যথা; ভেজা চোখে বীভৎস মুখে আর্তস্বরে কাঁপে বার্ন ইউনিট, হাসপাতাল, সমগ্র শহর। পেট্রোল বোমায় জ্বলে আয়েশা আজাদ―গণতন্ত্র উল্কি আঁকে শাহবাগে, সংসদে, লাশকাটাঘরে।