চিবুক
নির্লিপ্ত দেহভঙ্গিমায় সারসের সন্ন্যাসকাল পূর্ণ হলে
আরও এক অন্তর্মুখী আশ্রমের দেখা পাই। মন্ত্র ও
গান ঘুরছে।
থম মেরে আছে মনসার রাগ শুষে নেয়া দুপুরপ্রতিমা।
অশ্বত্থে কোটরে বিরক্ত পেঁচা অন্ধকার
খুঁজে বেড়ায়। সতীর চিবুকের সন্ধানে
মাদারগঞ্জের শিব।
ভরদুপুরে সূর্য গিলে খেয়ে
কেউ একজন
উন্মাদকণ্ঠে ডেকে চলেছে, রাখাল, রাখাল…
রাখাল পীরের হাটি
মূল চরিত্রে অভিনয় করতে করতে
মাঝে মাঝে পার্শ্বচরিত্রে চলে যেতে হয়
ধর্মরক্ষা বলে একটা কথা আছে
নিধুবনে তাই কৃষ্ণকে
. ঢুকে পড়তে হয় কালির চরিত্রে
রাখাল সে জেনে গেছে
জীবনকে টেনে নিয়ে যায় প্রেম
দেহের আড়ালে কামের প্রতিমা জেগে থাকে
মারোয়া আর চামরের খেলায়
মুখোশের কোনো ক্লান্তি নেই
করোনা কালেও রাখাল পীরের হাটিতেই
. আনুভূমিক লোকাচারেই আমাদের মুক্তি
নিঃসঙ্গ বৈশাখ
বৈদ্যুতিন আলোতে ভাসছে প্রতিমার অন্ধকার।
সংকট থেকে দেবতারও মুক্তি নেই;
বসন্তে প্রেম আর অভাব জেকে বসে কৈলাশে।
. পার্বতী এবার আমাদের মহেশপুরে
. অন্নদান কর্মসূচির ঘোষিত সামাজিক দূরত্বে
প্রায় নিঃসঙ্গ হয়ে আছেন এই বৈশাখে!
দেবীর একপাশে ভূমিতে নন্দনতাত্ত্বিক; অন্যপাশে
মাচায় বসে ঋষি বিড়াল
. তাকিয়ে থাকে পুরাণের রাজনীতি
আর ভাইরাসের মহিমার দিকে…
জেব্রাক্রসিং নেই
ক্রসিংয়ে কেউ জেব্রা দেখে না
অথচ আমি জেব্রার পিঠে বসে আছি
ভ্রমণের আমন্ত্রণ জানালেই
আমি কাঙাল হরিনাথ
কুমারখালি পেরিয়ে রংপুরে ছুটে আসি
নীলচাষ,কুসীদজীবী আর লোকসংস্কৃতি;
পাতার পর পাতা ভরে গেছে সংবাদ প্রভাকর
লালন নেই, আছে গান
সাইয়ের খোঁজে আমি তাই জেব্রার পিঠে
ধূলো উড়িয়ে চলি বিশদ বাংলার পথে
আমার পথে কোনো জেব্রাক্রসিং নেই!
ভাঙা বান্নির স্নান
ঝোলে ভাসছে বৈরালী মাছ;
মৃত কিন্তু সম্ভাবনাময়…
এই বৈশাখে আমরা নগর সন্ন্যাসী
ধূলির সমুদ্র পেরিয়ে
দ্বীপনগরে পৌঁছে যাই
আমাদের পিঠে অর্থনীতির চাকা
চরক টানে ঘুরতে থাকে
কলার পাতায় যাবতীয় উপাচার ভাসিয়ে
স্নানশুদ্ধ হয়ে নিই আত্রাই-কাঁকড়া জলে
পোড়া ছাইয়ের পাশে ভেণ্ডাপাতার ছায়া
একঝাঁক প্রতিমার দিকে তাকিয়ে
লিঙ্গ বৈষম্যের কথা ভুলে যাই
বটের বুক খুঁড়ে ঝোলানো মাটির ভাণ্ড থেকে
টিপটিপিয়ে পড়ে জল
অনেক দূরে বাঁশবাগানে দিনরাত্রি জড়িয়ে
বসে থাকেন মহাদেব
ঝোলে ভাসছে বৈরালী মাছ
ভাঙা বান্নির স্নান
আমাদের বাড়ি ফিরতে দেরি হয়ে যায়!
অফুরন্ত কারাম
খইগাছে রোদ টাঙিয়ে কর্মবন্দনা করে করে
আমাদের জীবনে সন্ধ্যা নেই; ক্লান্তিটুকু মুছে
নেবার নেই কোনো সংগীত!
আছে শুধু অহংরতির সাজানো বাগান;
কামনার আঙুলগুলো বাদুড়ের
মতো নষ্ট করে আয়ুর ফল;
দেখি, পারদ আয়নায় দৃশ্যবন্দি হয়ে আছে
আমাদের পাথরের মুখ
অফুরন্ত কারামের পাতায় ধরমেশ ঠাকুরের ছায়া
আমাদের চোখে সংবেদনের আলো নিয়ে এলে
কীর্তনের সুরে জেগে ওঠে সন্ধ্যার ওঁরাওপাড়া
আজ সুফি-আলো দয়ানন্দের সহজ প্রাণের খোঁজে
কে কালী, কে শ্যামা—বিভেদের পর্দা তুলে ফেলে
শূন্যের ভেতর অসীমের শক্তি ধ্বনিপুঞ্জে নিয়ে
জেগে ওঠে আলো ডোবা সন্ধ্যার ধুমল প্রান্তে…