আর কারে তুই ভরসা করিস
আর কারে তুই ভরসা করিস ওরে আমার মন
সবাই তোকে পর করেছে নেই তো আপন জন।
তোর আছে আজ শূন্য আকাশ, ধূ-ধূ তেপান্তর
ও তুই অনাথ বলে ঘর পেলি না, রইলি যাযাবর।
দুঃখরে তুই সঙ্গী করিস, কান্নারে তোর ধন।
সুরের নেশায় ডুবলি বলে ঘর হলো তোর পর
পথে পথে ঘুরলিরে তুই কাঁদলি জনম ভর।
মনের মানুষ পর হলো তোর, খবর পেলি নারে
আর কি তারে খুঁজে পাবি, এই ভবসংসারে?
যে গেছে সে পর হয়েছে, ভুলেছে দিন ক্ষণ।
নাগরিক রাতের বয়স
এই নাগরিক রাতের বয়স বাড়লে তারার ভিড়ে
অভিমানে চাঁদ মরে যায় কালো মেঘের তীরে।
মনের মানুষ হারিয়ে গেলে আর কি ভালোবাসে
যে চলে যায় আঘাত দিয়ে সে কি ফিরে আসে?
চির দুঃখী বাঁচতে কি চায় কারও ভুবন ঘিরে?
হয়তো কারও ঘুমের ঘোরে স্বপন দেখার ছলে
মনের গোপন কথাটি তার গোপনে যায় বলে।
হয়তো আকাশ ভেঙে পড়ে একফালি রাত কেটে
হয়তো বা সে আঘাত পেয়ে যায় ফিরে যায় হেঁটে
কালো কোকিল ডাক দিয়ে যায় বাউল সাথীটিরে।
আবহমান
আকাশে ফুটেছে ফুল আলেয়ার নামে
নেমেছে প্রেমের চাঁদ মেঘেদের খামে।
মেঘে-মেঘে রটে গেলে প্রণয় খবর
তারাদের গ্রামে ছোটে প্রেমিকপ্রবর।
হৃদয়ে হৃদয়ে বাজে নূপুরে-নূপুর
বৃষ্টিভেজা মন খোঁজে ঝুলন্ত দুপুর।
প্রেমিক পুরুষ গেলে প্রেমিকার পানে
চতুর রাধিকা ছোটে বণিকের টানে।
রাত যত বাড়ে তত প্রেমিকের মনে
কতশত শঙ্কা জাগে ক্ষণে-প্রতিক্ষণে
সুদূরে প্রেয়সী গেছে হলো বহুদিন
বুকের পাঁজরে তাই ব্যথা চিনচিন।
লাইলীকে খুঁজে-খুঁজে মজনু যখন
ঘুরছিল পথে পথে আঁধারে তখন।
পাহাড়ের বুক চিরে উঠলো আওয়াজ
ভালোবাসি-ভালোবাসি ভুলে লোকলাজ।
লখিন্দর উঠে আসে বেহুলার পানে
চতুর বালিকা ছোটে বণিকের টানে।
রূপকথা-উপকথা লোককথা শুনে
পথ কাটে প্রেমিকের দিন গুনে গুনে।
ফাগুনে আগুন ফুল ফোটে যার মনে
তারে খুঁজে ফিরে যায় কোকিলেরা বনে।
পাখিরাও ভুলে যায় নিজেদের গান
হরিণীস্বভাব নারী করে আনচান।
বৈষ্ণবীও পথ ভোলে বাউলের গানে
চতুর রমণী ছোটে বণিকের টানে।
প্রেমিক কবির পুঁজি কেবল হৃদয়
তাই দিয়ে প্রেমিকার কী এমন হয়!
প্রেমিকা তো চায় শুধু অঢেল সম্পদ
পুরুষের সাধ্য নেই দেয় সব পদ।
তাই কাঁদে প্রেমিকেরা হারিয়ে সে প্রেম
রাধা হারা বৃন্দাবনে কাঁদে একা শ্যাম।
জুলেখারে ফিরে পায় ইউসুফ-প্রাণে
চতুর গোপিনী ছোটে বণিকের টানে।
চৈত্রে কেন
দুলিয়ে কোমর শাড়ির ভাঁজে তুললে যখন ঢেউ,
আমার তখন দৃষ্টিজুড়ে উড়ন্ত গাঙচিল,
ফেললে ছায়া প্রেমিক হাঙর মাতাল কোনো রাতে
নদীর বুকে স্রোতের পদ্যে ছায়ারা ঝিলমিল…
চৈত্রমাসে হঠাৎ কেন কোকিল ডেকেছিল?
কথা ছিল বুকের বামে সমস্ত রাত রেখে
সিঁদুররাঙা গালের তিলে গোপনে ঠোঁট চেপে
উড়িয়ে হাওয়ায় শাড়ির আঁচল, ব্যস্ত রেখে চোখ
দুহাত রেখে বুকের খাঁজে চাঁদ চেনাবো মেপে…
স্বপ্নে হঠাৎ হাতির ঝিলে ফাগুন ডেকেছিল?
সে রাত যেন রেশম রেশম মেঘমেয়েদের চর
চোখের নদী তুললো কি ঢেউ? বাতাস ক্ষেপেছিল?
বেসামাল এক রাত্রি যেন দেহে কাঁপন তুলে
উতল বুকের বসনখানি উড়িয়ে নিয়েছিল!
শরীর কেন হঠাৎ কেঁপে জোয়ার এনেছিল?
নিষিদ্ধ করতালি
হঠাৎ কোথাও ভাঙলো কারও ঘুম
আঁকছে ছবি পিকাসো, না দালি?
আলোর স্রোতে ভেসে যাচ্ছে পথ
উঠলো বেজে নিষিদ্ধ করতালি!
কেউ বলেছে, রা করো না আর
কেউ বলেছে সব মেনে নাও আজ
বাঁচতে চাইলে মানিয়ে চলো সব
প্রতিবাদের নেই তো কোনো কাজ।
কেউ বলেছে, এবার লড়াই হবে
পথের শত্রু কাটবো ফালি ফালি
বিশ্ব হবে সীমান্তহীন, শুনে
কেউ দিলো ফের নিষিদ্ধ করতালি?
আমার কথা বলবো শঙ্কাহীন
কিসের কারা, কিসের শেকল ভয়
জন্মস্বাধীন পাখির মতো আমি
ভালোবাসার আকাশ করবো জয়।
নদীর স্রোতে ভেসে যাচ্ছে মন
কার বুকে আজ ঘুমায় বনমালী?
রাধা খোঁজে বৃন্দাবনে শ্যাম
কৃষ্ণ দিলো নিষিদ্ধ করতালি!
লাল রাত্রির গান
মোহাম্মদ নূরুল হক
প্রচ্ছদ: কাব্য কারিম
প্রকাশক: দৃষ্টি
মূল্য: ২০০ টাকা