আবহমান
আকাশে ফুটেছে ফুল আলেয়ার নামে
নেমেছে প্রেমের চাঁদ মেঘেদের খামে।
মেঘে-মেঘে রটে গেলে প্রণয় খবর
তারাদের গ্রামে ছোটে প্রেমিকপ্রবর।
হৃদয়ে হৃদয়ে বাজে নূপুরে-নূপুর
বৃষ্টিভেজা মন খোঁজে ঝুলন্ত দুপুর।
প্রেমিক পুরুষ গেলে প্রেমিকার পানে
চতুর রাধিকা ছোটে বণিকের টানে।
রাত যত বাড়ে তত প্রেমিকের মনে
কতশত শঙ্কা জাগে ক্ষণে-প্রতিক্ষণে
সুদূরে প্রেয়সী গেছে হলো বহুদিন
বুকের পাঁজরে তাই ব্যথা চিনচিন।
লাইলীকে খুঁজে-খুঁজে মজনু যখন
ঘুরছিল পথে পথে আঁধারে তখন।
পাহাড়ের বুক চিরে উঠলো আওয়াজ
ভালোবাসি-ভালোবাসি ভুলে লোকলাজ।
লখিন্দর উঠে আসে বেহুলার পানে
চতুর বালিকা ছোটে বণিকের টানে।
রূপকথা-উপকথা লোককথা শুনে
পথ কাটে প্রেমিকের দিন গুনে গুনে।
ফাগুনে আগুন ফুল ফোটে যার মনে
তারে খুঁজে ফিরে যায় কোকিলেরা বনে।
পাখিরাও ভুলে যায় নিজেদের গান
হরিণীস্বভাব নারী করে আনচান।
বৈষ্ণবীও পথ ভোলে বাউলের গানে
চতুর রমণী ছোটে বণিকের টানে।
প্রেমিক কবির পুঁজি কেবল হৃদয়
তাই দিয়ে প্রেমিকার কী এমন হয়!
প্রেমিকা তো চায় শুধু অঢেল সম্পদ
পুরুষের সাধ্য নেই দেয় সব পদ।
তাই কাঁদে প্রেমিকেরা হারিয়ে সে প্রেম
রাধা হারা বৃন্দাবনে কাঁদে একা শ্যাম।
জুলেখারে ফিরে পায় ইউসুফ-প্রাণে
চতুর গোপিনী ছোটে বণিকের টানে।
জলের নুপূর
এমন শ্রাবণ রাতে বন্ধু তুমি অনেক দূর
. ওগো জলের নুপূর।
আকাশে আজ মেঘ জমেছে, বাতাসে তার বাঁশি
হিজল তলায় কে কার গলায় পরায় প্রেমের ফাঁসি।
ওই বাতাসে ভেসে আসে তারই মধুর সুর।
. ওগো জলের নুপূর।
কেমন আছ, কোথায় আছ, কাকে ভালোবেসে
একবার এসে যাও গো বলে আমার ঘুমের দেশে।
. ও গো মধুর মধুর হেসে।
আমার মনের শ্রাবণে আজ ভিজবে তোমার চুল
ঘুমকে আমার দিলাম ছুটি বৃষ্টিকে বকুল।
তুমি আমার মরমিয়া রোদেলা দুপুর।
. ওগো জলের নুপূর।
তুমি আমার আঁধার ঘরে
তুমি আমার আঁধার ঘরে ঝোনাক-ঝোনাক মন
পোড়া চোখে দেখাও কেন রঙিলা স্বপন।
আমার সকাল আমার দুপুর
তোমার পায়ে বাজায় নূপুর
তুমি আমার মেঘবালিকা নিশিতে শ্রাবণ।
পূর্ণিমা চাঁদ লাজে মরে তুমি হাসো যদি
হাজার তারার আলো যেন তোমার রূপের নদী।
তোমার চোখের তারায় তারায়
বুঝি আমার হৃদয় হারায়
তুমি আমার মরণ সখি, দিও না দহন।
উড়ন্ত কাশফুল
তুমিও ছিলে চাঁদের সঙ্গে তারায়
অনন্ত মেঘ উড়ন্ত কাশফুলে
ঝরলে পড়ে জলেশ্বরী তলায়
কাঁপল কি রাত বালিকা ইশকুলে!
তুমিও জানো অন্ধরাতে কেন
বুকের ভেতর উথাল-পাতাল ঝড়…
মৃতনদী কিসের নেশায় জাগে
কিসের ছোঁয়ায় কেঁপেছি থরথর
ভাঙল আকাশ যখন বুকের বামে
তখন কেন ঠোঁটের কাঁপন তুলে
আকাশভরা চৈত্রমাসের রোদ
উড়িয়ে দিলে খোঁপার বাঁধন খুলে!
চৈত্রে কেন
দুলিয়ে কোমর শাড়ির ভাঁজে তুললে যখন ঢেউ,
আমার তখন দৃষ্টিজুড়ে উড়ন্ত গাঙচিল,
ফেললে ছায়া প্রেমিক হাঙর মাতাল কোনো স্রোতে
নদীর বুকে প্রেমের পদ্যে ছায়ারা ঝিলমিল…
চৈত্রমাসে হঠাৎ কেন কোকিল ডেকেছিল?
কথা ছিল বুকের বামে সমস্ত রাত রেখে
সিঁদুররাঙা গালের তিলে গোপনে ঠোঁট চেপে
উড়িয়ে হাওয়ায় শাড়ির আঁচল, ব্যস্ত রেখে চোখ
দুহাত রেখে বুকের খাঁজে চাঁদ চেনাবো মেপে…
স্বপ্নে হঠাৎ হাতির ঝিলে ফাগুন ডেকেছিল?
সে রাত যেন রেশম রেশম কাদা মাটির চর
চোখের নদী তুললো কি ঢেউ? বাতাস ক্ষেপেছিল?
বেসামাল এক রাত্রি যেন দেহে কাঁপন তুলে
তোমার বুকের বসনখানি উড়িয়ে নিয়েছিল!
শরীর কেন হঠাৎ কেঁপে জোয়ার এনেছিল?
অবজ্ঞা
একটি তারা ওই যে জ্বলে-ডোবে
একটি তারা একলা ভীষণ পোড়ে
নীল-আকাশের তাতে কী যায় আসে
তবুও দেখো একলা শালিখ ওড়ে;
পুড়ুক তারা, পুড়ুক হৃদয় কবির
তোমার তাতে কীই-বা আসে যায়
ভাঙুক কবির একলা হৃদয়—পুড়ুক
বিরান রাতে তোমার প্রতীক্ষায়!
একলা রাতে জাগে কবি, জাগে
আর জাগে ওই দূর আকাশের চাঁদ
তবুও তুমি গভীর ঘুমে থাকো
সমস্তরাত কবির মরণ ফাঁদ।
কবি পুড়ুক, কবি মরুক তবে
তোমার তাতে কীই-বা আসে যায়
কবি সে তো পাগলপ্রেমিক শুধু
ধুলায় কতই গড়াগড়ি খায়!