দুঠোঁটে আগুন নিয়ে উড়ে যাই প্রেমিকার বাড়ি
বারান্দায় তখন মনভুলো মেঘ, জলের পাথর
কমলালেবুর মতো মুখ তুলে সে
হৃদয়ে জমিয়ে রাখে গোলাপি টিকেট—লুফে নিই
শীতের আড়ালে, ঘুমের সঙ্গীতে
তার হাসি রাস্তা পেরুতে গেলে বাধা পাই
দূর গাছে ঝুলে থাকা এক অন্ধ মানুষ
ঠোঁটের কোনায় লুকিয়ে রাখে চুম্বন, বিপদসীমা
আর আমি প্রেমিকার চুলের ভেতর লাশ হয়ে
খুঁজতে থাকি শ্মশান কিংবা প্রেম কিংবা কোনো মধুপাখি
০২.
আরও একবার মাতাল হয়েছে রাত ও নগর
তাই আলোর ঘূর্ণিতেও দেখতে পাচ্ছি হিজল গাছ
তার ডালে বসে সূর্যের দিকে তাকিয়ে একটা পানকৌড়ি
কিভাবে স্বপ্ন দেখে, লাল রঙা, কখনো নাত্রিক
কখনো যমজ দুঃখের হাসিতে তুড়ির শব্দ
কিংবা মৃদু আলোয় ডানা ঝাড়াতে অস্তিত্বময় আমি
এ নগরে দেবদূত নেমে এসেছে?
নাকি এত রাতে ল্যাম্পপোস্টে
একটা অহেতু কাক আমারই মতো গালমন্দ করছে নিজেকে
০৩.
ধরো, আজ মৃত্যুরাত
কাল আমার সমাধিতে ফুল দিতে যাবে তুমি ও তোমার মন
ধরো, আজ আমাদের দেখা হলো
শীতরাতের কুয়াশাময় দুঃস্বপ্নের ভেতর
তুমি হীরের আংটি পরে বসে আছো
একটি প্রেমের বিজ্ঞাপনে
০৪.
হিমাগারের কাচ ভেঙে বের করে এনেছি শিল্পের বাটি
তার রঙের ফোঁটায় ফোঁটায় জ্বলে উঠছে সন্ধ্যাতারা
তুমি সেই আলোর লাবণ্যে মন ধুতে ধুতে দিলে ঠিক হরিণীর হাসি
তখন মনে পড়লো সেই বৃদ্ধের কথা—
প্রেম একটা ভ্রাম্যমাণ সেতু—এ দিয়েই দেওয়া যায় আকাশগঙ্গা পাড়ি
এসবের কিছুই হলো না আহা
শেষ পর্যন্ত আমি স্রেফ একটা ডুবন্ত ট্রেন
আর তার একটি কামরায় তুমি যাত্রী হলে কিছুক্ষণের জন্য!
০৫.
শেষ রাতের বাতাসে পাতার মতো উড়ে যাব
স্বপ্নে কুড়িয়ে নিলে দেখবে পাতাটা ছিল দেবদারু গাছে
আরও দুটি পাতার মাঝখানে
আর এখন তার গায়ে সিগারেটের পোড়া চিহ্ন—শিল্পের বিরুদ্ধে
শেষ রাতের বাতাসে পাতার মতো ঝরে যাব
ফুটপাতে ব্যক্তিগত বিষণœ কবিতা
০৬.
আমার সামনেই শহরটা ঢুকে গেল একটা পাগলের চোখে
আর সরাইখানার ভেতর
সরাইখানা থেকে যখন বের হলো তখন সে একটা কলের মিস্ত্রি
শব্দের সংগ্রামে বোবা হয়ে গেছে
তবু মনে রয়ে গেছে প্রেমিকার নীল কার্ডিগান, যমুনাবতী বুক
আমি বরং পাগলের চোখ থেকে শহরটাকে টেনে বের করতে চাইলাম
আমাকে ছোবলে মেরে যায় সাত-সাতটি মনঢোঁড়া সাপ
০৭.
জেলেপাড়ায় আগুনের চাষ হয়—এমন বেজুত বাক্য
কানে কানে বলে গেল কেউ, তারে দশ ডলার দিতে রাজি
আজব নতুন কথা—যেন গাইগরুর কেশর
কিন্তু তোমরা বিশ্বাস করবে কিনা জানি না
সেই আগুন এনেছি কিনে নগরপদ্মের দামে—সেখানে জলের গন্ধ আছে
আছে জলভাজা ডাঙামনে গভীর সংকেত নিয়ে বসে
আমার কৈবর্তী
০৮.
হাসি আমার ভাই, কাজ করে ইটভাটায়
পোড়ে পোড়ায় আর বড় বেশি বাজে—তার টুঙ্কারে
উড়ে যায় প্রজাপতি, মেঘ, রোদের আবেগ
তার সঙ্গে দারুণ কাটাকাটি খেলি
বলি চোখ বন্ধ করো, সেঁটে নাও ঠোঁট
তখন কিছু শহুরে বাতাস তার গা ঘেঁষে যায়
দেখি আমার ভাই নেতিয়ে পড়ে ভীষণ জ্যোৎস্নায়
দূরে, বনের গভীরে হরিণীর চোখে
তার লাশ পাওয়া যায়
০৯.
আমার নামে তুমি একটা ফড়িঙ পুষে রাখছ
এ খবর জানেন না পৌরপিতা
তাহলে করের রাজত্বে তোমার নাম থাকত
কেননা এ নগরে মেঘেরও কর দিতে হয়
পাখি মৌমাছিদেরও
এই রাতে ফড়িঙটাকে কাচের বয়ামে রেখে
দেখছ ডানাগুলো কত উজ্জ্বল, কত বায়ু ধরে
দেখছ—
এই একটা ফড়িঙ সহস্র চোখে কিভাবে দেখছে তোমায়!
১০.
বেশ আয়েশ করে সিগারেট টানছে শীত
আমার সঙ্গে এমনই ধোয়ার বন্ধুত্ব তার
তবু সে আমাকে ভাবে একটা অন্ধ ফকির
যার চোখে পৃথিবীটা পয়সার থালায় নাচে, ঘোরে
ছেঁড়া শার্টের ফাঁকে থাকে আকাশের রঙ
অথচ আমি পথের দিকে তাকিয়ে দেখি
কেউ একজন হেঁটে যায়—সাক্ষাৎ আমার মতো
নিরেট দেহ, হাসিতে আওয়াজও হয়
তার ঠোঁটে ধোঁয়া হয়ে ঢুকে যায় জ্যোৎস্নার মাঠ
বায়ুর আফিম কিংবা এক প্রেমিকার মন
১১.
প্রেমিকার বাড়ি এক শহুরে ধানেক্ষেত
ছাদে, দরজায়, দেয়ালেও… ধান
বলি, সোনালি ধানের দেবী
রূপ দিয়ে সারিয়ে দাও রাতের অসুখ
এবার খেলতে চাই অগ্নিনক্ষত্র নিয়ে
আমার যতটা অন্ধত্ব আছে, আছে বিস্ময়
সবটুকু দিয়ে অনুভব করতে চাই শীত ও শহর
এই রাতে তুমি ছাড়া আর কে জানে ধানের গরম
১২.
ভোর হয়ে আসছে—একটা স্বপ্ন এসে বলছে
বন্ধু, এবার ঘুমাও
আর তোমার চুল ছুঁয়ে আসা বাতাস বলছে—জেগে ওঠো
ঘুম ও জেগে ওঠা—দুটোকেই এক সঙ্গে নিয়ে
আছি তোমার অপেক্ষায়