প্রতিবিম্ব
এত অন্তরঙ্গতা, এত হ্রদ তেপান্তর চষে
গন্তব্যে এসে দেখি ভুলে গেছি পুরনো ঠিকানা।
ডানাওলা কোনো এক বৃষের প্রশস্ত কাঁধে বসে
মৃত্যুর কাউবয় বাধ্য করবে মেলে দিতে ডানা—
মৃত্যু প্রেম ঈর্ষার, জিঘাংসার এবং বৃষের;—
তখন কিছুটা মনে পড়ে যাবে। প্রাচীন লিপির
সূত্র ধরে ফিরে যাব কীটদষ্ট গমের শীষের
অভ্যন্তরে, যার কাছে জড়ো হচ্ছে পুণ্য—পৃথিবীর।
বাইরে থেকে ভেসে আসে রুগ্ণ পাখির সম্মোহনী
সঙ্গীত, শ্বাসক্লান্ত মাছের স্থৈর্য্য, সুবেহতারা
নাম্নী নারী পরিত্যক্ত পানি ভেঙে আসে, কোনো খনি
যেন তার অভ্যন্তর থেকে দিচ্ছে ক্রমাগত সাড়া।
প্রতিসাড়া দিয়ে বের হই, ভাবি, সুবেহতারাদের
পায়ের নিকটে এই প্রতিবিম্ব কোন ঈশ্বরের?
সিংহ
লাস্ট সাপারের সেই নারীটি এ জন্মে হলো হ্রদ,
রোদের টঙ্কার তাকে দিয়েছে সমুদ্র-প্রসূন
তার পাশে সিংহ হয়ে বসে আছে স্বীয় মসনদ,
সেই সিংহ অনভ্যাসে রূপ নিচ্ছে আ-রতিকরুণ।
গর্জন মিলিয়ে গেছে, কেশর ছেঁটেছে, ছেঁটে দিক—
রানীর নিজের লোক—তাকে দেখো কতটা শৈল্পিক-
ভাবে খোজা করা যায়, মৃত্যুর আগেও মারা যায়;
দাঁড়িয়ে থাকার পরও মনে হবে শুয়েছে শয্যায়।
ফুরিয়ে যাবার আগে আরেকবার তারাটির ঝরা
আলোটুকু রেখে দাও তোমাদের অন্তিম সঞ্চয়ে।
নিচ দিয়ে হেঁটেছিল জরা ও যৌবন, সিংহ, খরা।
অনন্তকালীন এক পর্বত ক্রমশ ক্ষয়ে ক্ষয়ে
যায়—সেটি কিংবদন্তী, অন্যদিকে অন্যজন বাড়ে;
অন্তিমকালীন প্রেম বয়ে যায় পাহাড়ে পাহাড়ে।
রেস
এই তীব্র তিতিরের রৌদ্রে তুমিও কি সরিয়ে নেবে না
অবগুণ্ঠন? এ আয়ুষ্কাল ঘুমিয়ে থাকবে স্পষ্টতর
স্মৃতির নৈকট্যে তৈরি কোনো গুহায়? গুমগুম আঁধারে,
আলস্যে? দেখতে থাকো, ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে আপাত-যোগ্য
ঘোড়ার দর। দেখো, তীব্র তিতিরের রৌদ্রে ঘোড়াদের
কেশর ও ত্বক পুড়ে যাবার দৃশ্য। শোনো, তাদের ক্ষয়িষ্ণু
খুরের কাঁটাসমূহ ঢিলে হয়ে কোনো যথার্থ জগতে
ক্রমশই মিলিয়ে যাচ্ছে—কোন গূঢ় প্রতিধ্বনি তুলে?
তারো দূরে, গোপনে, হিংসায় চৌকস বুরুশে মসৃণ
হচ্ছে বন্দুক—বুলেটভর্তি—ট্রিগারটি চেপে ধরে আছে
আর কারো ধৈর্য্যশীল আঙুল
নিরাময়
অশ্রুসন্তপ্ত চোখের ইশারায় মর্ত্যলোকে বিস্তীর্ণ চাঁদ নামে—ঘিয়া
অলস আশ্চর্য ফুঁয়ে প্রান্তরে শুয়ে শুয়ে নেভায় কে যাপনপ্রক্রিয়া?
প্রান্তরের ঠিক পাশে দুধের নহর ভাসে, কার লাশে গাঢ় হয় দুধ?
কে কে ডাকে অস্ত্র হাতে, নিকটস্থ অপঘাতে কে কে চায় তীব্র মহৌষুধ
পায়ের অস্থি ভাঙে, হিঙের মুকুট রাঙে— চড়াই-উৎরাই বেয়ে নামি
নামছি উত্তর পেতে, শোনা গেলো পলকেতে কোনো এক বৃদ্ধস্বর ‘আমি’।
সে বাঘের-দাঁতবিদ্ধ— পাহাড়ফেরতবৃদ্ধ ফেরি করে মন্ত্রে নিরাময়
তার যেন পরজন্মে পূর্ণ হয়ে জ্ঞানে-গম্যে তোমার আগেই জন্ম হয়!
গাথা
পৃথিবীতে ঘুরছিল হাজার হাজার রাজহাঁস…
অকস্মাৎ উড়ে এসে পৃথিবীর অন্তিম ময়ূর
শাদাটে পেখম নিয়ে তাদের সম্মুখে বসে পড়ে।
প্রথমে হাজার হাঁস ঢেকে দিলো তার কেকারব;
ঠুকরে অহমরূপ তার শাদা পেখমসমূহ
তুলে নিলো। অতঃপর পাখনায় মেঘের মিনার
ঢেকে দিলো; গর্জনও। ফলত এই উপলক্ষহীন
আবহাওয়া আটকাল ময়ূরের তুমুল নৃত্য।
চর্চাহীন মজবুত নখ দিয়ে আজকাল সাপ
অদরকারী নির্মোক ঘষে ঘষে তুলে নেয় রাতে।
…ক্রমশ নিজেকে ভাবে রাজহাঁস, শাদাভ ময়ূর।
আমি জানি, পৃথিবীর অজস্র অঞ্চল জুড়ে ডাকে
হাঁসের চেহারা নিয়ে শতশত ময়ূর—বিব্রত।
তুমুল হর্ষের মাঝে থমকে দাঁড়িয়ে যাবে, যদি
তোমাদের কানে আসে কখনো করুণ সেই ডাক।