রঙপোড়া মানুষ
ফণীমনসার ফণা তোলে কাউকে ভয় দেখানোর
সাধ নেই; বটবৃক্ষ হওয়ার সাধ্যও নেই আমার।
মেধা ও মননে অনুর্বর আমি
সবসময় হতে চেয়েছি দূর্বাঘাস।
কাগুজে বাঘ হওয়ার চেয়ে
মিউমিউ শব্দে বেঁচে থাকা উত্তম।
আমি রঙপোড়া মানুষ; ভাঙাগড়ার খেলায়
গড়ার স্বপ্নও গড়াগড়ি খায় সময়ের ধূলোতে।
জীর্ণ জীবনতরীতে ভাসতে ভাসতে জেনেছি
মনের জিহ্বা ছাড়া পাওয়া যায় না জীবনের স্বাদ
যদি
ভাসমান জীবনে আমার অর্জন বলতে
কিছু কাগজের ফুল, কিছু ঝরাপাতা, আর
জন্মান্ধ চোখে আলোর প্রতি
এক আকাশ সতেজ শূন্যতা।
তারপরও যদি ষাটে পৌঁছাতে পারি
খুশি হবো;
যদি সত্তরে পৌঁছাতে পারি
হবো মহাখুশি।
যদি আশি বছর বেঁচে থাকতে হয়
বিরক্ত হবো;
যদি নব্বই বছর বেঁচে থাকতে হয়
হবো মহাবিরক্ত।
যদি এখনি চলে যেতে হয়
এক অপ্রস্ফুটিত গোলাপের জন্য
এক বুক মেঘ নিয়ে যাবো।
পাড়ার মানুষ
প্রভুদের পৃথিবীতে আমরা
মানুষ নামের সামান্য পোকা। প্রভুদের লম্বা হাত;
হাতের ঝংকারে অন্যের হাতকে তারা খুব সহজেই
ভাবতে পারে নিজের পরিত্যক্ত নখ। ইচ্ছে হলেই
হাতের মৃদু ইশারায় দিতে পারে কান মলে, কিংবা
ইচ্ছে হলেই…
পথের মানুষ হলেও আমি জানি
তারা কত কী পারে!
তাদের পারা দেখতে দখতে
আমিও যে আজ পাড়ার মানুষ;
আমার সারা শরীর ছুঁয়েও
তারা আমাকে ছুঁতে পারে না।
সব দৃশ্যই অল্প
দৌড়ালে দ্রুত ক্লান্ত হবে; তুমি তো জানো না
কোন পথে তোমার পথ ফুরাবে। আস্তে আস্তে
হাঁটো; আস্তে আস্তে হেঁটেও যাওয়া যায়
অনেক দূরে! শেষ গন্তব্য তো বিরামপুরে।
মাটির সাথে সম্পর্কটা রাখিও;
মাটিতে পা রেখে ওপরে উঠলে
বিন্দুর মাঝেও পেতে পারো সিন্ধু।
মাঝে মাঝে পেছনে তাকিয়ে জীবন্ত রাখিও
পাতাঝরা দিনের গল্প; সব দৃশ্যই অল্প। তুমি
প্রকৃতির সন্তান; শুনিও প্রকৃতির গান।