রোদের আঁচড়
চিৎ হয়ে শুয়ে থাকা মানুষের চোখ আঁকে ছাদের আকাশ
তারাগুলো মরে গেলে গলে যাওয়া রাতগুলো ঠিক জেনে যায়
একবার নদীদের ধর্মঘটে কবিতারা ঢেউ এনেছিল।
সেবার শিখেছিলাম—চূড়ায় উঠতে নেই; চূড়া খুব ছোট
আমি জানি মুঠোভর্তি নদীগুলো কোনোদিন চূড়ায় ওঠেনি।
সম্পর্কের বেণী ধরে পতনের পাণ্ডুলিপি পাঠ করো যদি
ইতিহাসে ধূলো জমে, বাতাসেও লাগে সেই রোদের আঁচড়
একঝাঁক অন্ধকার খুঁটে খায় চূড়োর উত্থান—
পতনের নীতি আছে—ঘৃণারও ইতিহাস।
হয়তো নিখিল নীলে ছবি আঁকে চিরঅন্ধ আলোর সন্ত্রাস;
আমাকে উন্মাদ ভেবে মাইল-মাইল রাত গিলে গিলে খায়।
. প্রতারক চিত্রকর;
আমাকে পায় না খুঁজে মিছিলের আগে-পরে গোয়েন্দা বায়স!
এই নাও সান্ধ্যনদী; সূর্য মরে গেলে দিয়ো মাতাল চুমুক
আমার পকেটভর্তি তৃষাতুর চৈত্রের আকাশ
মগজে স্লোগান তুলে জেগে থাকে রাতগুলো আলোর কাঙ্ক্ষায়।
চূড়ায় ওঠে না নদী—যে ওঠে সে পুড়ে মরে তুমুল ঘৃণায়।
স্রোতের নামতা
ডালিম দানার মতো লাল-লাল কামুক সূর্যাস্তে
লাফিয়ে উঠুক মুঠোবন্দী রাধিকার স্তন। আর—
সমস্ত আকাশ সেই শিক্ষিত মন্থন দৃশ্য দেখে
নাক্ষত্রিক বেদনায় কেঁদে কেঁদে উঠুক এবার।
জ্বলন্ত সূর্যের ঠোঁটে চুম্বন এঁকেছি চণ্ডীদাস।
আয় রজকিনী ঘাটে—রসের দিঘিতে আমি ঢেউ।
নদী নদী জল এনে—আয় তৃষ্ণা মেটাবি দিঘির।
জানি তোর কোমরের কলসে প্রেমের বিষ নাচে
তোর চুলের বেণীতে ফণা তোলা সাপের নিশ্বাস
তোর চোখের তৃষ্ণায় পুড়ে খাক সহস্র সমুদ্র
চান্দের আন্ধারে নামে গেলাশ গেলাশ প্রিয়ঘুম
আমি ঘুম পান করি—রাত খাই কালান্ধসন্ধ্যায়
বয়স্করাতের দীঘি ঢেউ তোলে শরীরে আমার।
তোর গতরের নদী স্রোতের নামতা শেখে নাই?
এপ্রিলের রাত
তোমাকে দেখি না। দেখি—মাঝে-মাঝে জানালায় ওড়ে
তোমার শাড়ির নীল আঁচলের মতো একখণ্ড
বয়স্ক রাতের নদী। এপ্রিলে প্রলাপ বকে কারা?
মুখভর্তি ডিম নিয়ে যন্ত্রণায় কাতর মাছেরা
পাড়ি দেয় অন্ধকার সময়ের ঘড়ি; চোখজোড়া
স্বপ্ন নিয়ে জেগে থাকে মাইল-মাইল কালো রাত।
এইসব স্বপ্নবান ভোরের নদীরা উড়ে যায়
ডানাঅলা মেঘ হয়ে কালিদাস্য শ্রাবণসন্ধ্যায়;
আহা রাজকন্যাদের চোখে শুধু ঘুম আর স্বপ্ন
নামে। সোনার কাঠিরা ভেঙে গেলে রূপার কাঠিরা
অন্ধকারে চাঁদ ভালোবাসে। সূর্য তবু দেশান্তরী।
জানালার পাশে বসে দেখি নীল আকাশের তলে
বৃক্ষগুলো গান শোনে শব্দহীন বাতাসের কানে
একঝাঁক ঝরাপাতা পুড়ে গেলে কারো দীর্ঘশ্বাসে
ভেঙে পড়ে চিরায়ত লাল-নীল মিথের প্রাসাদ,
সত্য তবু প্রিয় নয়; যত প্রিয় মোহন মিথ্যারা!
আকাশ উড়াল দিলে আজকাল বিষণ্ন সন্ধ্যায়
নির্ঘুম কদম তবু ভালো চেনে পার্বতীর খোঁপা
এ বড় রহস্য জানো—এপ্রিলের বয়স্ক রাতেরা
একা পেয়ে ঢেউ তোলে কামে-প্রেমে শরীরে আমার!
বাম চোখে চোখ রেখে পাড়ি দিলে কালরাত
অশোকের শিলালিপি থেকে যায় আজন্ম ধূসর;
তোমাকে পাই না কাছে; স্বপ্নে তবু ধরা দাও বুকে।
লাল মাছি
একটি লাল মাছির গান শুনে জেগে উঠে দেখি
. আমার সামনে তুমি—
অন্ধনদীর সতীন হয়ে বসে আছ একা একা!
আমি স্রোতের নামতা ভুল করে গেয়ে উঠলাম
তোমার নামে নিটোল কোনও সন্ধ্যার স্বরলিপি।
আমাদের দক্ষিণের বারান্দায় নাকি বহুদিন
. ঘুমিয়েছিল সম্ভ্রান্ত রাত
অথচ রাত্রির গানে কোনোদিন সুর সাধিনি!
আমি বাউল ছিলাম; তেপান্তরে হাঁটিনি কখনো?
অথচ তোমরা শুধু শুনে গেলে তীব্র পদধ্বনি!
অন্ধ রাতের মগজে সূর্য ডুবে গেলে—ঃ
আমি একা পার হব লাল মাছি জেগে থাকা মাঠ?
কাউকে চাই না আজ সূর্যকান্ত রাতের শয্যায়!
জংলি কুসুম
যদি ভুল করে কোনো ভুলফুল ফোটে তোমাদের ছাদে
. জেনে রেখো সে ভুল আমি;
জেনে রেখো তোমার খোঁপায় ঠাঁই হলো না
তাই ফুটেছি অকালে—হৃদয়ের দাবি নিয়ে জংলি কুসুম!
কাচের দেয়াল ঘেরা তুমি-আমি-আমাদের পৃথিবী
তবু কেন মনে হয়—এই ছুঁই এই ছুঁই?
আহারে মানবস্বপ্ন! দেয়ালের ওপারেই থাক!
আমাদের বিশ্বে শুধু বয়ে যাক প্রেমের জোয়ার।
কোনো রাজকন্যা নয়, না কোনো স্বর্গের দেবী
তোমাকে চেয়েছি শুধু শর্তহীন আঁধারে-আলোয়
অনন্ত পথের শেষে দাঁড়িয়ে থেকেছি বহুকাল
পথ শেষ হয় তবু, দেখা আমি পাই না তোমার
মনে হয় এই ছুঁই এই ছুঁই
জানি তুমি পথের শেষে নেই, আছ পথের ওপারে।
ফুটেছি বুনোফুল পুকুর ঘাটে, ক্ষেতে ও খামারে
পায়ে পায়ে চুমো খাই সকালে-বিকালে
যদি তুমি ভুল করে হাতে তুলে নাও,
. যদি ভালোবাসা পাই—তাই
ফুটেছি গোপনে ফুল, টবে নয় ছাদের কিনারে!