বিমূর্ত স্বর
জেলের নৌকায় বসে তুমি উড়ন্ত মাছের খেলা দেখ,
আর কাঁকর বিছানো পথে একটি বেড়াল দৌড়ে যাচ্ছে—
এই দৃশ্য দুটি আমি পাশাপাশি
এঁকে যাচ্ছি ক্যানভাসে
বারবার বদলে যায় আদল
প্রতিটি প্রাণের ভেতরে ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে বিনাশ।
অনন্তের নিসর্গ কন্যারা শুয়ে আছে নক্ষত্রের বনে
আর একটি অন্ধকার দীর্ঘায়িত হচ্ছে
সমর্পিত ছায়ার ভেতর।
এসবই নির্ণীত খোলসাবৃত
এবং দৃশ্যমান
ক্রমাগত ক্রিয়াশীল প্রাণে ও উদ্ভিদে…
দ্বিধান্বিত মানুষেরা ভীতু ও সাহসী,
বৃক্ষের শেকড়ে জমা থাকে জলজ আখ্যান।
শাদা মৃত্যুর ভেতর একাকী নিঃসঙ্গতা, অনিশ্চিত রাত্রি—
কী নিপুণ ছায়া বিকশিত হচ্ছে এক খণ্ড ঘুমে;
আর আস্ত একটি আকাশ শুয়ে আছে সমর্পিত ফ্রাই-পেন
শাদা মৃত্যুর ভেতর সমর্পণ,
উড়ন্ত পাখপাখালি।
চারিদিকে ছড়ানো ছিটানো প্রসন্নতা;
হাওয়ার ভেতর ঘুরছে জলকল,
খণ্ড খণ্ড নদী ভারী হচ্ছে স্নান ঘরে।
শাদা মৃত্যুর ভেতর শঙ্খচূড়, বিষাক্ত ময়াল—
ক্রমাগত দৃশ্যমান ছায়া-অন্ধ মানুষের জিভ।
এপিটাফ
নিমগ্ন প্রাচীন বৃক্ষ—জলে তার ছায়া
কাঁপে, আর বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যার আঁধারে
ডোবে চাঁদ কিম্বা কুসুমের গাঢ় ঘুমে—
স্পর্শে জ্বলে ওঠে। এই বুঝি অকস্মাৎ
নেমে আসে রাত, এই বুঝি জলস্রোত
ছুঁয়ে দেয় রতি-বিদ্ধ মাছের শরীর।
নিমগ্ন প্রাচীন বৃক্ষ—তীব্র তীক্ষ্ণ হিমে
শুয়ে আছে নিরুত্তর জলের মৃন্ময়,
আর তার দেহে, খাঁজে কিম্বা উৎকীর্ণ
শস্যের দানায় গ্রন্থিত রয়েছে স্থির;
এই পৃথিবীর আদিমতম কথন।
শব্দ
শব্দ কি কেবল অলুপ্ত স্বর, সারিবদ্ধ অক্ষর
শ্বাসমূলে জমে থাকা বিষণ্ণ রোদ্দুর
শব্দ কি ভেঙে যাওয়া ঢেউ, টুকরো টুকরো ছল
নগ্ন পায়ে হেঁটে যাওয়া নিরুত্তাপ দুপুর—
শব্দ কি পাতা ঝরার গান, মৃত শালিকের ডানা
ফাতনার বনে ঝোপে শুয়ে থাকা নিদ্রালুপ্ত ফাঁদ?
আমার ভেতর অপূর্ণ শব্দরা অবিরাম হাঁটে,
অহর্নিশ ছুঁয়ে দেয় ঈশ্বরের নির্ণীত আকাশ—
অন্ধকারে ফুটে থাকে অলক্ত বাহারি ফুলে।
আমার ভেতর অপূর্ণ শব্দরা দৃশ্যত নির্জনে
কিম্বা ছায়া অন্ধ তীব্র হিমে,
শুয়ে থাকে সংহিতার ঘুমন্ত শহরে।
টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে যাওয়ার পর
রক্তবীজের মতো গড়িয়ে পড়েছি
ধুলোয়,
বদলে যাচ্ছি শব্দেসুরে ও বীজে …
ঔষধি লতার মতো নুয়ে আছি ফুলে।
কয়েকটি শাদা মৌমাছি অনতিদূরে
মধু সংগ্রহে ক্রিয়াশীল থেকেও
মৃত চাঁদের গহ্বরে ডুবে যাচ্ছে অবসাদে।
অপূর্ণতা
ঘর-সুদ্ধ দুলছি হাওয়ায়,
আমাকে নামিয়ে এনেছে ধুলো,
তুলে রেখেছে প্রত্নভান্ডারে।
ঘর-সুদ্ধ ভাসছি জলে,
আমাকে তুলে এনেছে পাখি,
নিবিড় করেছে পালকে।
ধুলো আর পাখিদের ছেড়ে,
ঘর আর বৃক্ষদের ছেড়ে,
দুলছি সুনীলের ছায়ার ভেতর।
ছায়া থেকে ফিরে এসে দেখি
অপূর্ণতা নামছে অন্ধকারে,
জলের মৌতাতে দুলছে পৃথিবী।
দেহাতী কবিতা
পাতার আড়ালে শুয়ে আছে দেহাতী সময়,
তার পাশে ফুটে আছে ঘাসফুল,
তার পাশে পাথুরে জীবন।
একটি ভগ্ন চাঁদ
কিম্বা
ক্ষয়ে যাওয়া কয়েক টুকরো রোদ
পড়ে আছে পথের ওপাশে।
দেহাতী মেয়েরা হারিয়ে ফেলেছে পথ…
আমরা যাব না আর নদীর ওপারে।
পাতার আড়ালে কাঁপে, তাপ
জ্যোৎস্না ও জোনাকি।
পাতার আড়ালে
ক্রমাগত ভেঙে ভেঙে যাচ্ছে অন্ধকার।
অয়োমুখ
এ শূন্যতা নুয়ে আসে
নিশীথের ডানার আড়ালে !
জল ও মাটির গন্ধে
দ্বিখণ্ডিত জোনাকিরা
পড়ে থাকে
পাশাপাশি নিরুত্তাপ !
যাকে তুমি পুষ্প ভেবে বসেছিলে পাশে,
তার জিভ থেকে ক্রমাগত
উঠে আসে বিষ—অগ্নিদাহ—
গলিত বিষাদ।
এই জন্ম আজ ভুলে ভরা—অচঞ্চল
এই জন্ম কুয়াশা ছড়ানো—দুর্বিনীত
শিলাস্তর চুঁয়ে নেমে যাচ্ছে কৃষ্ণ-দগ্ধ জল।
মোমঘর
আমার ভেতর একটি অন্তর্মুখী নদী গান করে।
ছায়াশূন্য একটি নদী
প্রবাহিত হচ্ছে মুখোমুখি স্রোতে;
কয়েকটি নরমমুখী ফুল
ধারালো স্রোতের উপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে—
আমার ভেতর প্রজাপতি ওড়ে…
মৃত প্রজাপতি ভেবে ফু দিচ্ছে হাওয়াকল
এক গুচ্ছ ফুলের ভেতর নুয়ে আছে অনুতাপ
আমার ভেতর একটি অন্ধ পাখি গান করে।
পাখির শরীর থেকে ক্রমাগত
খসে যাচ্ছে সোনালি পালক;
কয়েকটি ঘুণ পোকা
পালকের শরীর বেয়ে হেঁটে যাচ্ছে—
আমার ভেতর মৌমাছিরা ওড়ে…
মধু মৌমাছিরা উড়ে যাচ্ছে ছড়ানো সৌরভের দিকে
মাটির বিপরীতে হেঁটে যাচ্ছে তাদের ছায়া
আমার ভেতর একটি নিষণ্ণ আকাশ গান করে
প্রায় অন্ধ একখণ্ড আকাশ
ক্রমাগত নুয়ে যাচ্ছে মায়াবি বিষণ্ণতায়;
কয়েকটি দুর্গা-টুনটুনি
মহুয়া বনের বিপরীতে হেঁটে যাচ্ছে—
আমার ভেতর মেঘ বালিকার ওড়ে…
ছায়াঘুমে ফিরে যাচ্ছে অনুরুদ্ধ মেঘদূত
দুটি অগ্নিমুখী সাপ পাশাপাশি মোমঘরে
অগ্নিদাহ
নিষাদ তোমাকে ছুঁয়ে আছে
অনন্তের বালিকারা-
দলবদ্ধ হাঁস চলে গেছে দক্ষিণের দিকে
তারা আনন্দ লুকিয়ে রেখেছিল
পালকের ওমে ।
চাঁদের কন্যারা কিম্বা
তার বেদনারা নিমগ্ন বৃক্ষের ছায়া—
ফেলে দেয়া কিছু স্মৃতি
এমন দাঁড়িয়ে রয়েছে শিয়রে
অনুতপ্ত বিষফল।
জন্মান্ধ মানুষের কাছে
আলো আর অন্ধকার
বেদনার দুই বোন—
ছুঁয়ে থাকা পৃথিবীর বিষণ্ণ শরীর।
সাঁকো
মুখের ওপর বন্ধ করে দিয়েছ কপাট,একখণ্ড কাঠ
আর্তনাদ করে উঠলে হাওয়া এসে ফিরে যাচ্ছে হাওয়ায়,
অগ্নিদগ্ধ স্মৃতিচিহ্ন, ক্লেদ আর পাখিদের শঙ্কিত পালকে জমে যাচ্ছে ভয়।
ফিরে যাবো না বলেই একটি শব্দ-বন্দুক নিয়ে ছুটে এসেছি…
করতলে তুলে নিয়েছি ঋতুমতী নারী, পুষ্পমাল্য,ঈশ্বর কণিকা,
অনন্তের স্রোত থেকে নেমে আসা কুয়াশা, ছায়ামগ্নতা।
ফিরে যাবো না বলেই হিম রাতে একা একা
সাঁকোর উপর দিয়ে ফিরে যাচ্ছে সাঁকো…
জলরঙ
আমি তাকে নগ্ন করি শূন্যে
একটি রক্তাক্ত বিন্দু
প্রার্থনার ভঙ্গিতে নুয়ে পড়ছে বৃষ্টিতে।
আমি তাকে নগ্ন করি জলে
একটি বিচূর্ণ রাত্রি
প্রচ্ছন্ন নীরবতায় ডুবে যাচ্ছে ক্লেদে।
আমি তাকে নগ্ন করি ঠোঁটে
একটি সর্পিল ছায়া
পরিত্যক্ত মৈথুনে গলে যাচ্ছে স্বপ্নে ।
প্রেম
পুড়ে যাক দু-দশটি ক্ষয়িষ্ণু শিশু,
তাতেআমাদের কী যায় আসে।
বার-বি-কিউর ঝাঁঝালো গন্ধের মতো
একটি সকাল এসে সামনে দাঁড়ালে
আমাদের প্রতিটি দুপুর
উৎসবমুখর হতে হতে সন্ধ্যা নামে…
বিহারিদের কাবাব সুস্বাদু জেনে
আমরা পূনর্বার ক্যাম্পে যাই ।
গীত
রাত্রির শরীর থেকে নেমে এলে ঘুম
মেঘের নিবাসে জমে জলজ বিনাশ
কিছু কথা ফুটে থাকে নিষিদ্ধ উঠোনে
গোলাপের অর্চি থেকে কামের ধনুতে
ভূমির অলিন্দ থেকে নক্ষত্রের বনে
ফুটে আছে আত্মমগ্ন বিষাদ কুসুম
পানের শরীরে আঁকা প্রতিটি চুম্বনে
শুষে নেয় স্বপ্ন-তেজ পতিত জমিন
বৃষ্টির বাহুতে বসে নিদ্রামগ্ন চাঁদ
কিছু ভুলে ঝুলে থাকে কিছু শুদ্ধস্বর
হরিণীর দলছুট তাড়িত কম্পনে
পড়ে থাকে দীক্ষা-কাল বিপরীত স্রোত
পাখিদের জানা নেই ভাষা শিক্ষা জ্ঞান
তবুও তো গীত হয় মধুর সঙ্গীত
বেদনা বিলাপ আর আনন্ত্য উচ্ছ্বাসে
পৃথিবী বিভোর হয় শীতল সঙ্গমে
নিমগ্ন কথন
বিনীত মুদ্রার নিচে জ্বলে ওঠে ত্রিকালজ্ঞ শিশু,
তার পাশ দিয়ে হেঁটে যায় স্বপ্নমগ্ন নদী,
জল আর মৎস্যের তাড়িত স্রোত।
জীবন একটি পলাতক ব্যাধি
এই বলে
উড়ে যায় পাপবিদ্ধ স্বর ।
তুমি স্বপ্ন দেখো, সে সৃজন করেছে গীত…
বিষণ্ণ কান্নায় পৃথিবীর রঙগুলো একে একে
ফুটে ওঠে ইস্পাতের ছুরির ফলায়।
স্কেচ
তখন ক্রিয়াশীল আগুন
ঘোড়ার খুরের মধ্যে আটকে গেল,
আর জীবনকে আমি
একটি ম্যাজিক বলের মতো ছড়িয়ে দিলাম।
আগুন থেকে
বেগুনি রশ্মি নিঃসারিত হয়ে
অন্ধকারকে আরও গাঢ় করে দিল।
তুমি একটা সিঁড়ি মেলে ধরলে
আমি গড়াতে গড়াতে নিচে নেমে এলাম ।
একটি বিড়াল এসে আমাকে তুলে নিলে
এক টুকরো আগুন
একটি নিমজ্জিত বাল্বের ভেতর লুকিয়ে গেল।
বৃত্ত
তুমি অবিরাম ঘূর্ণায়মান একটি শব্দবৃক্ষ।
তোমার শরীর থেকে গর্ভফুলের মতো শব্দ ঝরে পড়ছে আর
মাটিতে পড়ার আগেই অসংখ্য লা্ল পিঁপড়ে এসে খেয়ে নিচ্ছে ।
এইসব লাল পিঁপড়েগুলো একেকটি ভয়ঙ্কর শব্দভূক।
এরা শব্দকে নরম করে লালায়।
লোভ থেকে উৎপন্ন একটি ভোগদণ্ড
প্রতিটি শব্দকে লোভনীয় খাদ্যে পরিণত করে।
মূলত মস্তিষ্ক হতে সকল ভোগের জন্ম হয়
এবং ভোগ সকল বস্তুকেই বৃত্তাকার দেখে।
শব্দপাঠ
শব্দ থেকে শুরু হয়েছে ঘূর্ণিত শব্দ,
তার ভেতর খেলা করছে
অসংখ্য শব্দ-জল,শব্দ-তাপ এবং দাহ,
আর পুড়ে যাচ্ছে শব্দ বায়ু, স্মৃতি ও রোদ্দুর।
তোমাকে স্পর্শ করেছে শব্দ-অশ্ব,
তোমার ভেতর হেঁটে যাচ্ছে অন্ধকার…
জোছনাহত শব্দ শৈশব ।
মূলত তুমি হেঁটে যাচ্ছো দৃশ্যমান শব্দে
তোমার ডান পাশে প্রবাহিত হচ্ছে নদী…
একটি শাদা পাখি খেলা করছে মায়াময় শব্দ জলে
এবং একটি রঙিন বেলুন দিক পরিবর্তন করে
ক্রমাগত সরে যাচ্ছে নক্ষত্রের দিকে।
বিস্মৃতি
স্মৃতিঘর থেকে ফিরে যাচ্ছে নদী,
আমরা বসে আছি প্রাচীন পাহাড়ের খাঁজে।
আমাদের আঙুলে ফুটে আছে রাত্রি
ছুড়ে দেয়া মায়াজল, সুগন্ধি সকাল।
আমরা মায়া-তাস খেলি…
ছুঁয়ে দেই লতাগুল্ম, মায়াফুল,
তুমি রাজকন্যা আমি কালো বাজ।
আমরা ধরেছি বাজি তিনটি লাল শালুক…
স্মৃতিঘর থেকে চুঁয়ে পড়ছে জল
আমরা খুটে খাচ্ছি কালো মোহরের দানা।
উৎসব
দুটি হাত, তারপরচারটি, না ছয়টি।
না হাত না, পরিবর্তিত হচ্ছে;
ধর থেকে মুন্ডু আলাদা হচ্ছে ,
ধর থেকে মুন্ডুছিটকে পড়ছ ,
লুফে নিচ্ছে মাটি ও কংক্রিট।
না মুন্ডুনা—অচ্ছুত গোলক …
নিপুণ হুইসেলে জমে উঠেছে গঞ্জের উৎসব।
ফাঁদ
সড়ক থেকে নেমে এসেছি জলে, দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে
একটি পরিত্যক্ত আপেলের মতো ভেসে যাচ্ছি শূন্যে।
জড়তা কখনো জ্যোতির্ময় নয়…
আড়মোড়া ভেঙে শালিকের ঠোঁটে ধরা দিচ্ছে মাছ।
মাছরাঙাদের ফাঁকি দেওয়ার আনন্দ সাময়িক এবং
পাখিদের ঠোঁটের স্বভাবে কোন ভিন্নতা নেই…
অন্ধকার নেমে এলে অবশিষ্ট কিছুই থাকে না জীবনের।
পুনর্বার আনন্দ বঞ্চিত হলে, অতি তুচ্ছ একটি মাছের
জীবনের যতি চিহ্ন পড়ে থাকে পাখিদের তীক্ষ্ণ ঠোঁটের গভীরে।
আত্মহত্যার গান
পাতা ঝরার পর দেখি
একটি অপূর্ণ বৃক্ষ
নিঃসঙ্গতার দিকে ঝুঁকে আছে আর
তার চারদিকে ডুবে যাচ্ছে ঈশ্বর।
মূলত অন্ধকার নেমে আসলে
ঈশ্বর পূর্ণ চাঁদ নিয়ে খেলা করে
তখন
শূন্যতাকে ছুঁয়ে থাকে জন্মান্ধ শূন্যতা
বস্তুত শূন্যতা কেবলই একটি সংখ্যা,
তাকে গুনে যাচ্ছি প্রবাহিত শূন্যতায়।
ভ্রম
রাত একটার ট্রেন এলে আমরা পরস্পর
বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই আর স্টেশনটি
খণ্ডিত নিদ্রার ভেতর নিজেকে উন্মুক্ত করে দেয়।
তার স্তন যুগলে
ক্রিয়াশীল শিল্পের মতো
দ্রুতলয়ে ছড়িয়ে যায় আলো।
বস্তুত আমরা সমুদ্রকে সবুজ দেখতে চাই
এবং মাছকে ভ্রমণরত বৃক্ষ মনে করি।
ক্ষয়
বদলে যেতে যেতে খোলসটাই পড়ে আছে
দৃশ্যমান কেউ নেই,
আর আমার ভেতর ক্রমাগত বিবর্তিত হচ্ছে মাটি।
হাওয়া এসে অস্তিত্বের কথা বলে গেল…
প্রাণের অস্তিত্ব দৃশ্যত যূথবদ্ধ,
তার বিপরীতে নিঃসঙ্গতা সর্প স্বভাবের।
আধ ভাঙা জল নদীতে জোড়া দিতে এসে দেখি মরে যাচ্ছে নদী …
আনত গীত
শব্দ ঘুরে ঘুরে ফিরে যাচ্ছে
আর হাতের উপর খেলা করছে রোদ্দুর।
ও আমার বিষ্ণুপ্রিয়া
বহুদিন হয়নি যাওয়া
নদীর ওপারে
নদীর ওপারে
কৃষ্ণ অন্ধকার—পতিত জীবন
ক্ষয়ে যাওয়া জলস্রোত—পূর্ণ অন্ধ চাঁদ ।
আমি একটি নগ্ন কবিতায় শুয়ে আছি
আর স্নানঘর থেকে ক্রমাগত ডেকে যাচ্ছে রাধা।
ছায়াচিত্র
গলে যাচ্ছে সময়,তার ভেতর থেকে উঠে আসছে হাওয়া।
একটি মরা আরশোলা, আট দশটি পিঁপড়ে,
কয়েক বিন্দু জল, আধ খাওয়া সিগারেট
দুটি উল্টানো গেলাশ…
একটি অপূর্ণ কবিতা রাফখাতা থেকে উঠে এসেছে,
আর কয়েকটি অক্ষর টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে।
দ্বিতীয় সংগীত
মৃত্যুর ভেতর একটি দেবদারু গাছ একা
ভেতর থেকে ক্রমাগত উপচে পড়ছে রক্ত…
জ্যোতির্ময় এক অন্ধ বালক
হেঁটে যাচ্ছে দিকভ্রান্ত শূন্যতার দিকে…
আমরা পর্যাপ্ত বারুদ থেকেও কোন শিক্ষা নেই নি।
আকাশ থেকে নেমে আসছে অগ্নিগোলক
আমরা ঈশ্বরের অভিশাপ ভেবে মৌন থাকি।
মৌনতার ভেতর প্রচুর কোলাহল জমে থাকে,
তার মধ্যে রক্তপাত — চিৎকার
অথচ আমরা কোন শব্দই শুনতে পাই না।
বস্তুত আমাদের আর্তনাদগুলো মস্তিষ্কের হিমঘরে খেলে করে…
- মোমঘর: ত্রিশাখ জলদাস, বইমেলা ২০১৬, কবি প্রকাশনী, প্রচ্ছদ: মোস্তাফিজ কারিগর, মূল্য: ১৩০ টাকা।