না, কোনো সহজ কথা না
না, আর কোনো সহজ কথা না
দীপ্যমান অহঙ্কারের কথাও নয়;
নয় বিবর্তনবাদের কথাও
কোনো স্মৃতির বেগবান অতীতও নয়;
নয় কোনো বিভৎস শোক ও কান্না
আমাদের মাঠগুলো সবুজ জমিন
কোল ঘেঁষে যার নদী খাল জলাশয়
আমাদের মাঠগুলো পিতার পৌরুষ কর্ষণে
শস্যে শস্যে ভরিয়ে দেয়
সেই পিতারা সুলতানের তুলিতে
বীর্যবান অহঙ্কার হয়ে ফুটে ওঠে।
আমাদের মাতারা নদী জলের মতো প্রাণসঞ্চারী
আমাদের মাতারা বুকের উলানে রাখে
খাদ্যের সম্ভার, প্রেরণার প্রেমময় আধার।
সেই মাতারা কামরুলের তুলিতে
কত না রূপকথার রঙিন ভাস্বর!
এ সবই জীবন্তু কিংবদন্তী!
এসব কথা না, না, কোনো সহজ কথা না।
আমাদের শব্দরা, চর্যার নদীতে সাঁতার কেটে
আমাদের ইতিহাস, রক্তের নদীতে সাঁতার কেটে
বিক্ষুব্ধ ঢেউ পেরিয়ে কুলে এসে উড়িয়েছিল জয়ের নিশান ।
চর্যার ঢেউ ভেঙে ডিঙ্গিকে সম্বল করে
এসেছেন কত কাপালিক-আচার্য!
হালধরা মাঝি সরহ পা, লুই পা, কাহ্নু পা, ভুসুক পা
পাল তুলেছিলেন পরম্পরায় হরপ্রসাদ, সুনীতি, শহীদুল্লাহ।
না, এসব আর কোনো সহজ কথা না
আমাদের ইতিহাসের মাঝিরা কাপালিক ছিলেন;
আমাদের মাঝিরা কাপালিক থেকে আচার্য হয়েছেন;
আচার্য হয়ে মানুষ হয়েছেন, হয়েছেন
ক্ষুদিরাম, সুভাস, রফিক, জব্বার, শফিক, আসাদ।
সেই মানব থেকে মহা মানব হয়েছেন, হয়েছেন
রবীন্দ্র, লালন, নজরুল, জীবনানন্দ, শেখ মুজিব।
জয়নুলের তুলিতে, আব্বাসের কণ্ঠে কিংবদন্তী হয়েছে
আমাদের প্রেমের শিল্পাবাস ও মরমি সুর।
না, এসব আর কোনো সহজ কথা না
তারপর আমরা বিবর্তিত হয়েছি
ঘনকালো আঁধারকে আলোকিত করেছি
সমস্ত সৃষ্টির রহস্যকে মুঠোবন্দি করেছি
সেও কোনো কথা না
আমাদের বহতা নদী শুকিয়ে বন্ধ্যাচর,
মায়েদেরর ওলান শূন্য! তাদের
কৌমুদী মুখগুলো শতচিরে বিভক্ত আজ!
আমাদের কুলীন পিতারা সূর্যের আগুনে পুড়ে
সাষ্টাঙ্গ শুয়ে শস্যের জন্য করছে হাহাকার
এসব সহজ কথা প্রতিপদের আঁধার থেকে
ধেয়ে এসে অঙ্কুশ আঘাতে রক্তাক্ত করে যাচ্ছে নিয়ত!
আমরা হারিয়েছি মরমী ও প্রেমের শিল্পাবাস
মানব, মহামানব ছেড়ে কঠিন ও জটীল ভাষায়
পোড়া জমীনে করেছি মিথ্যার বিষাক্ত আবাদ, গড়েছি আবাস
আমরা এখন সহজ করে নিঃশ্বাস নেই দীর্ঘশ্বাসের মতো!
লালক্রস
ব্যর্থতার মায়াজালে ভালোবাসা সব
মাকড়সার বেড়ে ওঠার গল্প!
মাকড়ের লাভা বিষে ভালোবাসা হয়ে যায়
লালক্রসে অনধিকারের সংকেত।
ক্যাকটাস যেনো এক মরু সুন্দর ফুল
ভালোবাসার তৃষ্ণা বাড়ায় শুধু, ধু ধু!
ভুলের মায়ায় জলের জালে পাহারায় থাকে
বিষের আঘাত ছোড়া রক্ষীকূল।
ভালোবাসা এক মরু সুন্দর নন্দন ফুল
হতে পারে মাকড়ের জালে ঘেরা ভুল!
আর অল্প স্বল্প
কিছু মাতাল গল্প!
মৃত ও জীবিতের ঘুমপাঠ
মৃতদের ঘুমকে সুগন্ধি করতে
আতর, গোলাপজল কিংবা কর্পূরে ভরিয়ে দেই
বিছানাকে কাঁচাফুলে সজ্জিত করি কিংবা
আদরেবোনা ফুলের চাদর বিছিয়ে দেই,
আর আগরের ধোয়ায় একটা স্বপ্নের মায়াবিঘোর ঘুরতে থাকে।
মৃতদের যাত্রাকে সুগম করতে
পথে পথে হাঁটে অগণন মানুষ
সামনে ও সাথে…পায়ে পায়ে
মানুষের ভিতরে কিছু গল্প, কিছু কল্পও হাঁটে নীরব আখ্যানে।
সকল ব্যস্ততার হর্ন বন্ধ হয়ে যায়… কাটা রাস্তা অবধি।
মৃতদের রাস্তা বাঁক নেয় কবর বা শশ্মানে
আতর বা কর্পূরের গন্ধ বুকে নিয়ে জীবিতরা একটু দ্রুত
কাটা রাস্তায় ডানে বা বামে বাড়ি ফিরে যায়!
তারপর জীবিতরা স্নান শেষে
গন্ধহীন ঘুমের বিছানায় সঁপে দেয় নিজেকে।
ঘুম থেকে জেগে দেখে গল্প-কল্পর পথে
ফেরার বিকল্প পথগুলো এখনো তাকিয়ে আছে।
যদিও কিছু সুগন্ধি, তাড়া ক’রে ফিরে, এপার থেকে ওপারে।