রাতের আঁধার কাঁদছে
রাতের আঁধার কাঁদছে
শোন
কান পাতো
ফিসফিস করে বয়ে যাওয়া বাতাসেও
কান্নার সুর, শুনতে পাচ্ছ?
বাঁশবন থেকে হঠাৎ
নিশাচর পাখির কান্নার আওয়াজ
ভেসে আসে
রাত্রির আকাশে আকাশে—কালো চাদরের
সামিয়ানা-তার পাশে মেখেছে নীলাভ কান্না
রাতের আঁধারে ঘুমন্ত জানলার পাশে
একবুক কান্না নিয়ে
যে জেগে আছে—হয়তো সে বিরহে কাঁদে
হয়তো সে কাঁদে বেদনায়—
হয়তো কাঁদছে সে স্মৃতির তাড়নায়—
রাত্তিরেরা কাঁদে রোজ-ঝরা ফুলের পাঁপড়ি
বুকে নিয়ে—ফুটপাতে কান্নাকে ভারি করে
টিমটিমে লাল ল্যাম্প পোস্ট—বিষণ্ন আলো ঢেলে দিয়ে
শুকনো বরই পাতা টুপটাপ্ ঝরে—
রাত্রি কাঁদছে
শত বুকের কান্না নিয়ে রাত্তির জেগে থাকে,
কাঁদে—
জোছনার জলে ডুবে স্বপ্নে বিভোর যারা দেখেনি কখনো
রাত্রির কান্নাটাকে—
কেউ বোঝে না
বুকের ভেতর পাথর চাপা কষ্টগুলো কেউ দেখে না
কেউ দেখে না চোখের আগুন জল
কেউ বোঝেনা একটা মানুষ
কাঙাল দুটো হাত বাড়িয়ে
ব্যাকুল খোঁজে ভালোবাসায় ভাসিয়ে নেয়ার
একটা হৃদয়তল—
কেউ বোঝেনা একটা মানুষ চাঁদ খোঁজে না
আকাশজুড়ে
কেবল খোঁজে একটা অসীম মন
বুকের ভেতর দুঃখ পুষে একটা মানুষ ক্লান্ত হয়ে
শান্তি পেতে স্বপ্ন দেখে সবুজ বুকের একটা ঘাসের বন।
মৃত্যু
মৃত্যু আমাকে আর স্পর্শ করেনা আজকাল
কারো মৃত্যুর খবরে কষ্ট পাইনা এতটুকু
চোখে জল আসে না
বুকটা পাথরচাপা ভার হয়ে ওঠে না
কতজনকেই তো চলে যেতে দেখলাম শৈশব থেকে
হরি ধ্বনি তুলে পুস্পাচ্ছাদিত পাশের বাড়ীর অনীল বাবুকে শশ্মানে নিতে দেখলাম
ট্রাকে করে কাফনে মোড়ানো লাশ নিতে দেখেছি কত—
রাজপথে বিষাদ আতরের গন্ধ ছড়িয়ে চলে গেলে
মৃত্যু টা ভয় হয়ে ঠাঁই নিত মনে
কতগুলোদিন মৃত্যুর ভয়ে চলে যেত রাত—নিদ্রাহীন।
অথচ
কারো মৃত্যুই আমাকে আর স্পর্শ করে না আজকাল
যেদিন আইসিইউতে আম্মাকে দেখলাম একটু একটু কর নিশ্বাস থেমে যেতে
যেদিন আব্বাকে দেখলাম আইসিইউতে বোতল ভর্তি অক্সিজেন তার বুকে দিতে পারছে না একটুকু হাওয়া
যখন দেখলাম দ্রুতগামী যান নিমিষেই পিষে দেয় একটা পুরো পরিবার
একদল উচ্ছল তরুণ মুহূর্তেই হয়ে যায় মর্গের বাসিন্দা
নদীতে স্নান করতে গিয়ে কেউ কেউ মুহূর্তেই হয়ে যায় স্মৃতি
খুক খুক করে কাশতে কাশতে কোন অশতীপর বাঁচার আশা করতে করতে মৃত্যুর কাছে চলে যায়…
মৃত্যুটা বড় স্বাভাবিক লাগে আমার কাছে।
রোজকার স্নানাহার যেন কিংবা সামান্য কদিনের ভ্রমণযাত্রার মতো ক্ষণিক বিচ্ছেদ—
কারো মৃত্যুতে কোনো অনুভূতি জাগে না আজকাল
না দুঃখ, না বেদনা, না অভিমান কিংবা খেদ—