এক.
নগর নীরব নীল জোছনায় ডাকাত শীতের কামড়
সাদা কুয়াশায় ভিজে সুবেহ সাদিকের কর্পূর সুরভি মেখে
মহুরীর ভাটির টানে আমিও ভেসে চলি তৃতীয় মৃত্যুর দেশে।
কখনো কাঁদেনি বৃক্ষ পাতা ঝরে গেলে
কখনো ভাবেনি নদী বিগত স্রোতের লাগি
তবুও পলি জমে তলানিতে, চর জাগে বাস্তুহীনেরা স্বপ্ন দেখে।
প্রতিদিনের ঝরাপাতা পলির স্তূপ জমে মনের অতলে
হৃদয়চরে ফুটেছে নীল ক্যাকটাস, স্বপ্ন দেখেনি কেহ
আমি শুধু স্বপ্ন দেখি চতুর্থ মৃত্যুর দেশ।
ফসফরাসের সচল ছুটাছুটি।
দুই.
গভির তিমিরে স্বপ্নঘেরা সুন্দর মৃত্যু আমার অধিকার।তৃষিত যৌবন বহুদিন সঙ্গমে মাতোয়ারা হয়নি। রুপালি নারীর মতোন আফ্রোদিতি অন্তত একবার কাছে এসো, পারো তবে একাই চলে এসো। বৈশাখী খরায় চৌচির মাঠের মতো জল তৃষ্ণায় আছি। অপার ভালোবাসার মনোলোভা আয়োজন সাজিয়ে রেখেছি তোমার জন্যে, এসো।
আমার একলা ঘরে কৃষাণ হাতে সাজিয়ে রেখেছি মেহেদি পাতা, সেগুন পাতায় মোড়া চিড়াগুড়ের খই, রঙ-বেরঙের বাহারি ফুলের সমাহার। জুম থেকে তুলে আনবো বিন্নিধানের চাল, বানাবো কাকন চালের জাও। কত্ত রকমের শাক-সবজি তরিতরকারি শুধু তোমার জন্যে করেছি চাষ। জানো আমাদের জুমের কালো বিনিচালের গুঁড়া দিয়ে দু’চোয়ানি বানাই। দু’চুয়ানির সাথে জুমের মরিচ দিয়ে শুঁটকি ভর্তা আর বন মোরগের দু’পেঁয়াজার সাথে মধু পূর্ণিমা রাইতে মাচাংঘরের নিচে বসে চোখে চোখ রেখে অপার আনন্দে রাতভর পান করবো।
আমাদের পান পাত্র সাজিয়ে দেবে আজরাইল। তাকে দেখলেই আমার ওয়েটার মনে হয়। আমাদের লৌকিক আজরাইলের কারণে আমরা বসরা কে হারিয়েছি। হারিয়েছি আল আকসাসহ কত কী। কিন্তু আমি এখনো হারতে পারিনি। ওপারের আজরাইল আমাকে দেখে শরম পায়, তাই সে আসে না। তুমি এসো আমরা অপার আনন্দে আকণ্ঠ পান করবো। আর ভোর হবে না, পান করতেই থাকবো।
তিন.
ওয়ালাইকুম আস সালাম
আজ আবার কী চাই জাঁহাপনা আপনার
যান কবচ করতে চাই।
আজরাইল সাহেব একটু দাঁড়াও
এখনো তার সাথে আমার গল্প শেষ হয়নি।
জি হুজুর গোস্তামি মাপ করবেন আমার
অন্যত্র তাড়া আছে
আচ্ছা যাও আমি ডাকবো
শোনো পুবের আকাশে সবুজ তারকাখচিত
কাস্তে হাতুড়ি যেদিন দেখবে
সেদিন আমিও, আমি চাই তুমিও আসবে
সাম্রাজ্যবাদের বিকল্প হয়ে।
চার.
মাটির ঘরে জৈবসার হয় লালিত দেহ, পোকা-মাকড়ের খাদ্য বর্জ্যে রাসায়নিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় হয় ফসফরাস। ঘনিভূত ফসফরাসের বিচ্ছুরণের উদ্বায়ী শিখাকে আমরা কবর আজাব বলি।
ভৌতিক বর্ণনা, বয়ানে হাই তোলা জিকির মশগুলে মগজের করিডোরে বিষধর সর্প আসে। সেই সব নরকে আমরা প্রবেশ করি অন্ধকারাচ্ছন্ন থেকে। শব দাহ করি, ছাই হই, হই সলিল সমাধি। নদী-জলধির নিজ নিয়মেই প্রবহমান থাকে। পাপ-তাপের বোঝা বহন-বাহনে জল ও জলধারা হারায়নি তার ধর্ম।
জল ও অগ্নির বাস্তবতায় সিন্দুতে সলিল সমাধি, মৎস্যরা খাবে, মাছ খাবে মানুষ। মানুষ পাবে মেধা। ভার্সুয়াল প্রতিযোগিতায় ক্ষয়ে যায় শুক্রাণু। আণবিক পরীক্ষণ নিরীক্ষণে মৎস্যশূন্য সমুদ্র। তাই আমি সলিল সমাধি চাই, প্রজনন বাড়ুক, মৎস্যখাদ্যে সুস্থ থাকুক মানুষ। মানুষের তরে, মানুষের প্রয়োজনে সলিল সমাধি হোক মোর।
খোদা, মসজিদ মন্দিরে যাইনি তেমন কোনোদিন, আত্ম প্রয়োজনে চাইনি কিছু তোমার তরে। আশরাফুল মাখলুকাত মানুষের প্রয়োজনে এ সামান্য ফরিয়াদ। বেহেস্ত দোজখ তোমার ইচ্ছার স্বেচ্ছাচারিতা, তোমার বাণীতে বলেছ আমার পরম আত্মা তোমার বিচারাধীন। এখানেই আমার কলব তোমার কাছে বাঁধা। সেই সলিল সমাধিতে আজানের সুর বাহনিয়া হাফসি কবি বেলালকে ইচ্ছে হলে সাথে দিও। বিপ্লবী আবু জর গিফারির কলবের নফসে সীল মেরে বলি, ‘মে কুচবি নিহি, নেহি ইমানদার।
পাঁচ.
বস্তুগতভাবে ওরা প্রাণী মানুষ, অন্য দশ রকম প্রাণীর মতো, তারা জন্মেছে প্রাণবৈচিত্র্যের জন্য
এই প্রাণবৈচিত্র্যই তোমাকে করেছে কবি। তুমি কবি, অনুভূতিপ্রবণ সত্তাটিই লিখে রাখো কালের খাতায়।
আমি মানুষ প্রাণী, এ কারণে প্রাণ-সত্তা আলাদা, সেটা টের পায় পৃথিবী, খোদা।
খোদা কে শুধাই, তোমার পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হবে কবে?
ইলহাম আসে ইথারে, বাতাসে বাতাসে, পাতালে আর উর্ধ্বে আচানক শিহরণ জাগে তনু-মনে,
আমি টের পাই, আরও পরীক্ষণ উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করবে আমাকে। মাঝে মাঝে বিগড়ে যায় মন, উগরে ওঠে মন, বিরক্তিকর অন্ধকারে আপন আলোয় জোনাক পোকার অহঙ্কার আসে।
ইলহাম আসে, অহঙ্কার করো না, পচা রক্তের পুঁজ তুমি, কীটে খাবে তোমায়, কীট বর্জ্যের জৈব সারে উদ্ভিদ বানাবো তোমায়, দেখো না গোরস্থানের ফুল-ফলের উর্বরতায় কেমন ফুলে-ফলে ফেঁপে ওঠে সুরভি।
সেই সুরভিতে মাতোয়ারা হয়ে আসে জোড় সাপ। বিষধর পাইতন সঙ্গমে জড়াবে তোমায়, সঙ্গম টাপে টাপে নীল মণিমাণিক্য
নূরের আলোয় আলোকিত শাহজাদা শাহান শাহ।
ছয়.
দ্বৈত-দ্বৈততায় দ্বান্দ্বিক যাতনায়, সহজিয়া জীবনের যৌথতায় সংসারে ভিড় করে প্রাযুক্তিকতা। এখানে বৃষ্টি বারো মাস, তড়িৎ উৎপাত মিছা ঠেকে, জলজটে জলের ত্রাস। মিঠা কড়া জল পানে, ঘোলাটে চোখে কতবার খোদার কাছে নিজেই আত্ম ওফাত করেছি দাবি। ছাত্র আন্দোলন, বিগত রাজনীতিক মোড়কে মোড়ানো কিছু ছবি ভাস্কর্যের মিনারে গড়েছি নিজের মিনার, কিতাবি আদর্শে কীট মানুষের প্রপঞ্চক বক্তব্যে শ্রেণীসংগ্রাম, ক্রুসেড, জিহাদে বেড়েছে সংঘাত দেখতে দেখতে ‘কত প্রাণ হলো বলিদান’।
তবুও তেলা পোকা প্রাণ নিয়া টিকে আছে ভাঙা দেহখানা। কলবে কলবে জিকির গুজরি কাঁদে। শ্যাওলার দখলে গেছে সুফির বয়ান, সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির বিকিরণে সবুজাভ দেহকাণ্ডে শোভা পায় একটি পতাকা।
ভাগ ও ভোগের বিভেদে মনুষ্য প্রাণীরা আজ মান্নাসালোয়া।প্রাচীন মুণি কয়, ‘ভাত থাকলে জাত থাকে।’
উফসী বীজে শ্যামল রমণীর জমিনে সম্পর্কের আবর্তে আঁকে খুনের ত্রাস। কলিকালে কেয়ামত ঘনিবার পূর্বে আমার চিরায়ত মন কাঁদে এবাদতে ওফাত দাও খোদা, না হয় নিজেই করিব প্রাণপাত।
সাত.
বাঙাল প্রাত্যহিক কাজেই ক্লান্ত হয়, প্রতিবাদ-মিছিল, সংসারের ঝুট-ঝামেলা, পরিজন স্বজন, এসবের জন্য দুনিয়ার চরম নিকৃষ্টতম ঘৃণিত কাজটিও মানুষকে করতে হয়, মানুষের ক্ষুধা লাগে বলে। তোমাদের-তাদের মতো সব রকমের ক্ষুধা লাগে না আমার। মাত্র তিনখানা ক্ষুধার যন্ত্রণায় হাঁপিয়ে উঠছি। ন্যূনতম বাঁচার জন্যে দুমুঠো ভাত, থাকার ছোট্ট আবাস, রোগব্যাধির জন্য ওষুধপত্তর। মনের খোরাকের জন্য কিছু তামাক। আপনি তুই তুরা হুল্লোড় করিস ক্ষুধার লোভে, প্রাণের প্রয়োজনে যা পাই তাই খাই আমি।
তোমরা লোভের আকুতিভরা ক্ষুধার কাছে বারংবার বন্যের মতো মরো আর মারো। তোমাদের ক্ষুধার কাছে দুধঘাসও নিরাপদ নয়, আর আমার হাঁটায় ঘাসপাতা কষ্ট পায় বলে ঘাসের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেই।
হেমন্তের কোনো এক বিকেলে ঘাসের সাথে কথা বলতে বলতেই ওরা পরম আদরে আমায় ঘুম পাড়িয়ে দেবে।
রোজ হাসরে প্রকৃতিই আমার সাক্ষ্য বহন করবে। পাখিরা হাসবে আর গাইবে।
আট.
আমার মরণ হবে নিঃসঙ্গ নিস্তব্ধ রুপালি জোসনাখচিত রাতে।পচা পুতিগন্ধে মুখরিত বাতাসে। মোগলদের অরক্ষিত পানশালার পাশে নাচঘরের সাজোয়া কামরায়। ভেজা শ্যাওলার পিচ্ছিল কার্পেটে বুলবুলের ফলিত নৃত্য মুদ্রা মুদ্রণ করছি বিষাক্ত গিরগিটির ছোবল খেতে খেতে। ওরা খুব সন্তর্পণে বেয়ে ওঠে নাছ সজ্জায় আচকানের ভেতর দিয়ে। তারপর প্রতিটি মুদ্রার তালে তালে ছোবলে ছোবলে ক্রমাগত নীলাভ দেহ এলিয়ে পড়ে শব্দহীন পতনে।
মুখরিত বাতাসে প্রছণ্ড জোসনায় হু হু স্বরে নাসারন্ধ্র হয়ে অনায়াসে মগজের কুটুরিতে ঢুকে অভিমানের শব্দ। আতরের খুসবে তোমাদের মস্তিষ্কের মৃত অনুভূতি চরম উত্তেজনা ছড়াবে। নৃত্যের উৎসবে শরাবে তোমরা এমনভাবে মত্ত রবে বুঝতেই পারবে না, নীরব অভিমানে হারিয়ে গিয়েছে কেউ একজন। যখন সেই বাইজি ভুল মুদ্রায় ধপাস করে পড়ে যাবে, তখন টনক নড়বে ওস্তাদজি কই।
বাতাস যখন মৌ মৌ করবে আতর লোবানে, মস্তিষ্কের কোষে কোষে চরম উত্তেজনায় খুঁজবে খুঁজবে ততক্ষণে বন্ধ হবে কবির শায়েরি।
নয়.
যাপন যাতনার সঙ্গমে জন্মায় বেদনবৃক্ষ। যাপনের যত্নে ক্রমাগত বাড়ে শাখা-প্রশাখা-কাণ্ড-পত্রপল্লবে বড় হয় বেদন। পত্রপল্লবেরা গাড়ো নীল, নীলে নীলে বৈভব ছড়ায়। কাণ্ড শাখায় বসে ডাহুক পাখি, গান গায় কোকিল, করুণ সুরে বাঁশি বাজায় রাখালিয়া বাউল।
কোকিলের গান, বাঁশি শুনতে শুনতে মরে বেদন পরজন্মের তরে।
দশ
প্রতি অমাবস্যা-পূর্ণিমা রাতে ছদ্মবেশ নেয় সে, আমার দিব্যচোখ ইশারায় তাকে ডাকে। কাছে আসে না ফিরে যায় বারবার। উঁকিঝুঁকি মেরে দেখে, ভাবে কী করি।দুনিয়ায় তাবৎ মানুষের ভয় তাকেই।
ফেরে ব্যর্থ মনোরথে আরশে মাল্লায়। অবনত মস্তকে দাঁড়ায় খোদার সামনে। বলে, হ্যাঁ খোদা, আমার কাজ বৃক্ষ হত্যা নয়।যার কাছে পাঠাও বারবার, সে-তো মানুষ নয়, বৃক্ষ।বৃক্ষের প্রাণ হরণের জ্ঞান কৌশল কী? জানি না কীভাবে বৃক্ষের যান কবজ করতে হয়।
আবার যাও, যেখানে পাও ওই বান্দার যান কবজ করে আসো। তোমার যা দায়িত্ব তাই করো।
হুকুম তামিলে এসে দেখে বৃক্ষটি আর নাই কবিতা চত্বরে, ওখানে গান গায় কোকিল, বাঁশি বাজায় হুলুদিয়া পাখি। ইনসান কই। খোঁজে এদিক সেদিক। দিব্য চোখে আমি তার গতিবিধি লক্ষ করি।
আবারও ফিরে যায় আজরাইল ধীর লয়ে ব্যর্থ মনোরথে
খোদা ওখানে কোনো ইনসানের লেশমাত্র নাই। শুধু পাখি দেখি, গানে গানে তোমায় ডাকে। পাখির যান কবজ কিভাবে আমি করি, এ দায়িত্ব নয়।
হুকুম করে খোদা-
যাও ওই বৃক্ষ পাখি নদী সাগরের নামে ক্ষমা চাও, সালাম দাও। দেখবে ওখানে ধ্যান করছে কবি।
আসসালামু আলাইকুম কবি, আজ বারই রবিউল আওয়াল, নবিজি খোদার ইচ্ছায় সাড়া দিয়েছেন। আজ এই দিনে আপনাকে মেহমান করে নিয়ে যেতে চাই। খোদার হুকুম তামিলে সাড়া দিন।
ওয়ালাইকুম আসসালাতু আসসালামু আলাইকুম। চলো প্রিয় প্রাণ হরি।
এগারো
আমরা কি হেঁটে চলেছি আলো অন্ধকারের পথে?আলোর তীব্র রশ্মি পারি না সইতে, চোখে অন্ধকার দেখি, সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: ও কি মেনে চলেছি? আমি তো নই সেই রাহবার।
হয়তো কোনো একদিন, শীত বিকেলের কুয়াশা মোড়ানো ধূসর প্রাতে অবশ্যই একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলবে, আমরা রুটিন আয়োজন করেছি তার সাথে, তারপর খুব জ্বালাতন করেছি তাঁকে। পুড়ে পুড়ে স্থায়ী দগদগে ক্ষত দিঘিটি আজ সোনা পুকুর। শল্যবিদ ওষুধ বিশেষজ্ঞ বলে এটি টুকটুকে লাল ক্যান্সার। আমরা যারা তার হন্তারক আদর্শের সৈনিক এ ক্ষত ক্যান্সার নয়, সোনায় মোড়ানো হীরকদীপ্তি।
আমরা পেয়েছি, কবির জন্যে এ রকম চমৎকার অবহেলা খুব জরুরি নয় কি?
এই রাজপথ কবির সংগ্রাম-স্মৃতিতে উজ্জ্বল। জেলা মহুকুমা ছাড়িয়ে দেশময় কবির নাম-যশ জনে জনে। ওনার নাম জানে। পত্রপল্লবে সবুজে আচ্ছাদিত রেইন ট্রি কবি করেছে বপন। বৃক্ষের ছায়াশীতল শহীদ মিনারে শুয়ে থাকা ভবঘুরে, উদম দেহের কুলি-মজুরের একমাত্র কবিই আওয়াজ তুলেছেন। সেই কুলিরা আজ গাড়ি হাকায়।কিন্তু ওনার স্বভাব খারাপ, এমন এক খাসলত তাঁর বেশি নীতিবাগিশ।
যা এই সময়ে ব্যাকডেটেড। ফরেস্ট অফিসের উত্তরের কোণে দেবদারু তলে কত ডিএফও, কত জনের শাড়ি খুলেছে, দারোয়ান পাহারা দিয়ে টু পাইস কামিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই।
জীবনে চাইলে সে অনেক কিছু করতে পারতো। কত অর্ধনগ্ন তরুণী মনোলোভা হাসিতে রঙিন জলের পেয়ালা মুখে তুলে দিতে কুণ্ঠাবোধ করতো না। না সে ওসবের ধার ধারেনি, চোখ রাঙিয়ে ঠোঁট বেঁকে কথার ঝাড়িতে উড়িয়ে দেয় সহাস্যে।
গলায় এক্কান ভাব তাঁর, ভাত নাই তবুও হিম্মত ছাড়ে নাই। কলিকালে এসব কি চলে? ভাব দেখাইতে দেখাইতে কোনদিন শিরিশ তলে, কোনদিন মসজিদ মার্কেটের ডেয়ালায় অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রয় আকাশ পানে। ঝিমুয় বিড়বিড় করে কথা বলে। নামাজ কালামের ধারেকাছেও যেতে দেখলাম না তাঁকে। বইভর্তি ঝোলায় কোনো কোনো দিন পেট চেপে ক্ষুধায় কাতরায়।যদি দেখি মাঝেমধ্যে শ্রদ্ধা ভালোবাসায় শাকভাত মুখে তুলে দেই। মহৎ মানুষ লোভ লালসার ঊর্ধ্বে পরকালে ছওয়াব হলেও হতে পারে।না হলে নাই। কত হাজার টাকা মাগিরা পকেট কাটে আমার, মাপ চেয়ে নেই খোদার কাছে।
অনেকেই তাঁকে নাস্তিক ডাকে, কিন্তু কোরান হাদিস নখদর্পণে তাঁর, পাক্কা আলেমও তার সাথে বাজিতে হেরে যাবেই। নামজ-কালাম জিকির আজগার করলে মস্ত আওলিয়া হতো, খানকা শরিফ হতো, হতো বার্ষিক উরস মাহফিল। পীর বংশের নাতি চাইলেই পৈত্রিকভাবে শাহজাদা রূপে গদিনিশান হতে পারতো।
প্রাণ নিঃস্বরণের পরপর-ই স্বজন সাথি রথি-মহারথি স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লো। খেপাটা এবার ক্ষান্ত হয়েছে।হাঁছা কথা লেখার নামে কত নামি দামি সম্মানীয়দের পায়জামা আপনা আপনি খুলে গেছে, এবার পায়জামা পাঞ্জাবি রক্ষা পাবে।
তড়িতায়নের গতিতে মুহূর্তেই রাষ্ট্র হয়ে গেলো কবি চিরস্থায়ী অক্কা পেয়েছে। চারদিকে ভুখানাঙ্গা ফকির, মিসকিন, মাস্তান, ভবঘুরে, বেশ্যা, বেশ্যার দালাল, কুলি-মজুর ভিড় করতে লাগলো কবিতা চত্বরে শব দেহ ঘিরে। টুপটাপ বৃষ্টি ঝরছে অঝোর নয়নে কাঁদছে সবাই।
এলো ধবধবে সাদা পায়জামা পাঞ্জাবি পরা দামি দামি গাড়ি হাকানো নেতারা। কেউ বললো, দ্রুত সৎকার করো, জানাজার করো আয়োজন।
পত্রপত্রিকায় ছাপা হলো কবির পরলোকগমনের খবর। কত পত্রিকা কত রকমভাবে স্টোরি লিখছে ক্ষমতাবান মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে। কয়েকটি ধর্মান্ধ পত্রিকায় ধর্মীয় কুৎসা রটানো হলো।
যাকে কবি ধ্যান জ্ঞান মেনে জীবন টাই বিলিয়ে দিলো চাওয়া-পাওয়াবিহীন, কবির সেই বুবুও রাষ্ট্রিক সফরে গেছে বিদেশ বিভূঁইয়ে।
পর সপ্তাহে এলো রাষ্ট্রীয় ডাক, ওয়াদা ও সম্মান জানানোর পত্র। কমিশনার মেয়রকে সাথে করে এলো কবির বাসায়।
উচ্ছল উদাসী চোখে খুশির ক্ষতে বললো, এ সম্মান ও ওয়াদাপূরণপত্র আমি মাথায় নিলুম। বুবুকে আমার সশ্রদ্ধ সালাম কদম বুচি জানাবেন। বুবুকে বলবেন, এসব সম্মানের মান আমি রক্ষা করে কবির কবরে এপিটাফ করে রাখবো।