যাযাবর
ভালোবাসা পেলে হতাম সাধারণ নারী
না পেয়ে হয়েছি বাউণ্ডুলে,
জীবন পানতোয়া পাখির মতো
আকাশে উড়েছে, পা পেয়েছে বিরামহীন পথ
উড়তে উড়তে হাঁটতে হাঁটতে টিয়ারাঙা ঠোঁটের মতো
কোনো এক জবাকুসুম গাছে ফুটতে দেখেছি
টকটকে হৃদয়,
চাতকের চোখের মতো সেই হৃদয়তলে
দলে দলে উড়াল দিয়েছে আমার আহাজারি!
আহা অন্ধ চোখ! দেখেনি তার বন্ধ দরোজা
উচাটন প্রাণ প্রবল তৃষ্ণায় হয়েছে বিষের বাঁশি,
আজীবন অবহেলায় জমিয়েছি যত উদাসী অবসাদ
তার বিষের উল্কিতে জীবন ফিরিয়ে নিয়েছে সময়।
ফিরিয়ে নিয়ে গেছে চাঁদের মুখেও মুখ রাখার শেষ আশ্রয়,
আহা ভালোবাসা!
তোমাকে পাইনি বলে আজ আমি যাযাবর!
দুঃখের বৈশিষ্ট্য
দুঃখের মতো এমন কী আছে, যে ঝিলিক দিয়ে যায়?
ভেতরে থাকা না বলা কথা মরছে চোখের নিচে
যেন অচল বুড়ো কাঁপে থরথর ভয়াল শীতের চাপে
তাই জলটলা বুক লিখছে নোট হৃদয় দু-ভাগ করে!
কথাগুলো সব নদী হতে পারতো, উজান ভাটির গান
পারেনি ওরা যেন ক্ষুদ্র পাখি হামিংবার্ডের মতন
পায় না নাগাল আকাশের পা আর মাটির মিষ্টি আদর
তাই তো ওরা ছটফটিয়ে বাড়ায় সংকট বুকের ভেতর
মারে হ্যাঁচকা টান,
হৃদয় কি তখন হৃদয় থাকে?
ব্যথার ভারে বুকের সিঁড়ি ভাঙতে থাকে।
মৃত্যুর কাছে প্রার্থনা
এসো মৃত্যু, আমাকে পান করো,
আমার বুকের আলমিরাটা খুলে দিয়েছি,
ওখানে সারিসারি তোলা আছে গভীর শ্বাস
নরকের চেয়েও অনেক উচ্ছ্বাস পাবে এই মজলিসে
এখানে থরোথরো আগুন হেলেদুলে ঘুরছে চৌদিকে
তুমি কি সে আগুন নেভাতে পারবে?
এখানে আমার প্রতিরূপ পেতে কষ্ট হতে পারে তোমার
যদি চোখের মাংসল পর্দা সরিয়ে দাও
তবে সেখানে পাবে এক নীলমাছি,
যেখানে সাপের মণির মতো অজস্র
তৃষ্ণারা হিসহিস করছে,
ওখানে উজ্জ্বল রক্তের চাকেরা আমাকে মুক্তি দিতে
তোমার অপেক্ষায় রয়েছে,
তুমি বাদুড়ের মতো আমার নরকে ঝুলে যাবার আগে
বুকের আগুনে চুমু দিয়ে যেও,
না হলে বলি হবো বলে যে প্রাণ তোমাতে তুলে দিয়েছি
আজন্ম চাওয়া পূরণ না হওয়ার অপরাধে কে আমাকে
মুক্তি দেবে বলো?