আর প্রাণ, সোমেশ্বর
অপসৃয়মান আসা-যাওয়া তার। ভুলে কি গেছি নাম?
এক লীন প্রজাপতি ছায়া ভেসে থাকে আমার শরীরে
ক্রমে দীর্ঘ হতে থাকে তার মায়া, রাজেশ্বরীর পেছনে
অবলুপ্ত ভালোবাসায় কুসুম ভোরে
পূরবী সন্ধ্যায় কিংবা নিষাদরাত্রে।
কবে যেন ভেঙে যেত ঘুম তার কান্নায়
কবে যেন আকাশে ভেসে যেত সুতীক্ষ্ণ পরীরানি
দীঘল পাখা মেলে। উড়ে যেত কোনো ময়ূরাক্ষীর তীরে
বুঝি মৃত্যুর পরোয়ানা লয়ে! অবেলায় তীব্র প্রেমের মায়া।
বিভাজিত নশ্বর দেহ থেকে অনশ্বর মেঘলোক
ক্রমেই উধাও। আমারই আত্মার শিখা কেঁপেছিল
তার নিঠুর দহনে। দারুণ সন্তাপে।
হায়! তার ছায়া। দীর্ঘ দীর্ঘ জীবনের রূপ লয়ে
মেঘ-পাহাড়ের দেশ-কৈলাশ স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল ফুঁড়ে
ফের বাসা বাঁধে বুঝি আমারই এই দেহে।
আরবার জন্ম লয় আমারই নিমগ্ন চেতনায়।
হায়রে সোমেশ্বর!
তোর আত্মার নির্ঘুম। তোর কান্নার বেদনা।
আমার মৃত্যুর কষ্ট আমি কাকে দিয়ে যাব বলো!
মুরগি চোর বৃত্তান্ত
খুব যত্ন করে সেজেগুজে লুকিয়ে পালিয়ে
আমি একদিন দেখা করতে গেলাম তার সাথে।
তারপর একটা শেয়ালের মুখ দেখে ফিরে এসেছিলাম।
মধ্যরাতে থেকে থেকে ডেকে উঠছিল শেয়াল
আমি চমকে উঠে বিভ্রান্ত মনে দ্বার খুলে
দেখি চোখের সামনে আমার অরূপ-কান্তি এক রাজার কুমার
এবং যথানিয়মে তার হাতের সাতনরি হার আমার গলায়।
আমি খুলে দিলাম আজন্ম পরিধেয় সিলোনিয়ান রুবি।
খাঁটি ২২ ক্যারেট সোনায় বাঁধানো অঙ্গুরীয়।
তারপর খাঁটি তুলার সাথে
রাজপুত্রের কেটে গেল শত সহস্র দিনরজনী।
আজকাল প্রায়ই রাতে মুরগি চুরি হয়।
গৃহস্তের ঘরে কখন ঢুকে পড়ে শেয়াল
আর মুরগিগুলো স্বেচ্ছায় নিজের খোলস খোঁয়াড়ে রেখে
চলে আসে শেয়ালের ধারালো নখের কাছে।
মাঝরাতে আমি শূন্যতা টের পাই।
কখন যেন পাশ থেকে সরে যায় নিয়ত জীবন।
কখন যেন শূন্যবিছানা পড়ে থাকে অলস।
আর শোনা যায় মুরগির খোলস ছাড়ার চিৎকার।
মাঝরাতে প্রায়ই আমি, প্রায়ই, শুনি এক ধূর্ত শেয়ালের অট্টহাসি।
চিরকাল, তুমি আমি পর
সেদিন ঘাসে ঘাসে সবুজ কোনো ঘাসপোকা খুঁজছ তুমি
কথারা হারিয়েছে অরণ্যে। জানো না সেদিনও ঘাসের বুকে
‘প্রাণ’ নামে বাস করে আমার জীবন
তখন মানুষ ছিলাম। আর বড় বেশি কাজ
ঘরকন্যা সংসার দশদিক দিশেহারা, তোমার।
অথচ যখন আর মানুষ নই তুমি তখন
আমিহীন। একা। একা লাগবে সেদিন।
বড় একা। লাগবে তোমার।
ছেড়েছ তো আমূল। ছেড়েছ তো তুমিও জীবন।
তবুও এখানে অমূল বৈরাগ
একা তুমি। একা আমি। কেউ কারো নই। স্মৃতিহীন—
সোনালি নদীর তীরে তীরে খুঁজে চলি মানবের বসবাস
কখন যে তীরে গড়ে উঠেছে দুই খুঁটির একচালা ঘর
যেখানে জীবন-জীবন আমরা—কেবলই পর।
তবু ঝুম বৃষ্টির নেশায় একদিন খুঁজে পাইকি আমায়। তোমারই বিরহে!
তুমি কি পেয়েছ কোথাও খুঁজে আমার হারানো নাম!