ত্রিতাল
তোমার কোনো ধর্ম নেই, শুধু
শিকড় দিয়ে আঁকড়ে ধরা ছাড়া
তোমার কোনো ধর্ম নেই, শুধু
বুকে কুঠার সইতে পারা ছাড়া
পাতালমুখ হঠাত্ খুলে গেলে
দুধারে হাত ছড়িয়ে দেওয়া ছাড়া
তোমার কোনো ধর্ম নেই, এই
শূন্যতাকে ভরিয়ে দেওয়া ছাড়া।
শ্মশান থেকে শ্মশানে দেয় ছুড়ে
তোমারই ঐ টুকরো-করা-শরীর
দুঃসময়ে তখন তুমি জানো
হলকা নয়, জীবন বোনে জরি।
তোমার কোনো ধর্ম নেই তখন
প্রহরজোড়া ত্রিতাল শুধু গাঁথা-
মদ খেয়ে তো মাতাল হত সবাই
কবিই শুধু নিজের জোরে মাতাল!
তুমি আর নেই সে তুমি
তুমি বললে মানবতা
আমি বললে পাপ
বন্ধ করে দিয়েছে দেশ
সমস্ত তার ঝাঁপ
তুমি বললে হিটলারিও
জনপ্রেমে ভরা
আমি বললে গজদন্ত
তুমি বললে ছড়া।
তুমি বললে বাঁচার দাবি
আমি বললে ছুঁতো
হামলে কেন এলো সবাই
দিব্বি খেতো শুতো।
হোক না জীবন শুকনো খরা
বন্ধ্যা বা নিষ্ফলা।
আমি বললে সেপাই দিয়ে
উপড়ে নেবে গলা।
তুমি বললে দণ্ডকে নয়
আপন ভূমিই চাই
আমি বললে ভণ্ড, কেবল
লোক খ্যাপাবার চাঁই।
চোখের সামনে ধুঁকলে মানুষ
উড়িয়ে দেবে টিয়া
তুমি বললে বিপ্লব, আর
আমি প্রতিক্রিয়া।
মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে
একলা হয়ে দাঁড়িয়ে আছি
তোমার জন্যে গলির কোণে
ভাবি আমার মুখ দেখাব
মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে।
একটা দুটো সহজ কথা
বলব ভাবি চোখের আড়ে
জৌলুশে তা ঝলসে ওঠে
বিজ্ঞাপনে, রংবাহারে।
কে কাকে ঠিক কেমন দেখে
বুঝতে পারা শক্ত খুবই
হা রে আমার বাড়িয়ে বলা
হা রে আমার জন্ম ভূমি।
বিকিয়ে গেছে চোখের চাওয়া
তোমার সাথে ওতপ্রত
নিয়ন আলোয় পণ্য হলো
যা কিছু আজ ব্যক্তিগত।
মুখের কথা একলা হয়ে
রইলো পড়ে গলির কোণে
ক্লান্ত আমার মুখোশ শুধু
ঝুলতে থাকে বিজ্ঞাপনে।
বুক পেতে শুয়ে আছি ঘাসের উপরে চক্রবালে
বুক পেতে শুয়ে আছি ঘাসের উপরে চক্রবালে
তোমার ধানের মুখে ধরে আছি আর্ত দুই ঠোঁট
তুমি চোখ বন্ধ করো, আমিও দুচোখ ঢেকে শুনি
যেন কোন্ তল থেকে উঠে আসে পাতালের শ্বাস
সমস্ত দিনের মূর্ছা সেচন পেয়েছে এইখানে
মুহূর্ত এখানে এসে হঠাত্ পেয়েছে তার মানে
নিজের পায়ের চিহ্ন নিজে আর মনেও রাখেনি
আমিও রাখিনি কিছু, তবু হাত রাখে পিছুটান
মাটিতে বসানো জালা, ঠান্ডা বুক ভরে আছে জলে
এখনও বুঝিনি ভালো কাকে ঠিক ভালোবাসা বলে।
পুনর্বাসন
যা কিছু আমার চার পাশে ছিল
ঘাসপাথর
সরীসৃপ
ভাঙা মন্দির
যা কিছু আমার চার পাশে ছিল
নির্বাসন
কথামালা
একলা সূর্যাস্ত
যা কিছু আমার চার পাশে ছিল
ধ্বংস
তীরবল্লম
ভিটেমাটি
সমস্ত একসঙ্গে কেঁপে ওঠে পশ্চিম মুখে
স্মৃতি যেন দীর্ঘযাত্রী দলদঙ্গল
ভাঙা বাক্স প’ড়ে থাকে আমগাছের ছায়ায়
এক পা ছেড়ে অন্য পায়ে হঠাত সব বাস্তুহীন|
যা কিছু আমার চার পাশে আছে—
শেয়ালদা
ভরদুপুর
উলকি-দেয়াল
যা কিছু আমার চার পাশে আছে—
কানাগলি
স্লোগান
মনুমেন্ট
যা কিছু আমার চার পাশে আছে—
শরশয্যা
ল্যাম্প পোস্ট
লাল গঙ্গা
সমস্ত এক সঙ্গে ঘিরে ধরে মজ্জার অন্ধকার
তার মধ্যে দাঁড়িয়ে বাজে জলতরঙ্গ
চূড়োয় শূণ্য তুলে ধরে হাওড়া ব্রিজ
পায়ের নিচে গড়িয়ে যায় আবহমান |
যা কিছু আমার চার পাশে ঝর্না
উড়ন্ত চুল
উদোম পথ
ঝোড়ো মশাল
যা কিছু আমার চার পাশে স্বচ্ছ
ভোরের শব্দ
স্নাত শরীর
শ্মশান শিব
যা কিছু আমার চার পাশে মৃত্যু
একেক দিন
হাজার দিন
জন্ম দিন
সমস্ত একসঙ্গে ঘুরে আসে স্মৃতির হাতে
অল্প আলোয় বসে থাকা পথ ভিখারি
যা ছিল আর যা আছে দুই পাথর ঠুকে
জ্বালিয়ে নেয় এতদিনের পুনর্বাসন|