০১.
হঠাৎই দেখেছি তোমাকে ঘুম ভেঙে তন্দ্রা জড়ানো চোখে
সকাল হলে যন্ত্রবৎ যেভাবে সকলে প্রথম মুঠোফোন খুলে থাকে
যে মুখচ্ছবি ভেসে এলো শক্তিতরঙ্গে কেঁপে কেঁপে গ্লাসস্ক্রিনে স্থির,
স্বচ্ছ হ্রদের জলে বড় বড় চোখে যেভাবে নার্সিসাস দেখেছিল নিজ রূপ
সে এই পৃথিবীর নাকি এসেছে অচিন জগৎ থেকে পা ফেলে বিস্ময়ে উন্মুখ?
আমারও চোখে লেগে যায় সেই ঘোর, এর আগে দেখিনি কোথাও—
নামও শুনিনি তার আগে, একবার দেখে বুঝি যা কিছু দেখেছি আগে
সকলই তুচ্ছ হয়ে গেছে এ কন্যার চোখের আলোতে রেখে চোখ!
অন্তরে ব্যথা জাগে যেভাবে প্রথম দর্শনে প্রেমের উন্মেষ হয়ে থাকে
এ কোন প্ররোচনা, আড়ালে প্রেমের দেবতা কি মনে মনে হাসে?
০২.
রূপকথার মায়াবী জগৎ মিথ্যে কি নয় তবে, ফিরে আসে কখনো কখনো
আমাদের অগোচরে —অপ্রতিহত বেগে বাস্তব যখন নিঃশেষ করেছে সব
পথে পথে এত ধ্বংস, এত হত্যালীলা, মুখোমুখি যুদ্ধরত অনুজ, আত্মজা
ক্ষমতার দম্ভকে উপড়ে ফেলে নব্য ক্ষমতার উন্মত্ত মহড়া—
গৃহযুদ্ধের গোপন দামামা শুনে চৈতন্য বধির, কোন চোখে রাখি চোখ
যেখানে ডুবতে পারি অতলান্ত বোধে, যার কেশরাজি ছড়িয়ে পড়েছে
কোমরের নিচে, শুকপাখির সাথে কথা বলে অনর্গল হাসির ফোয়ারা তুলে
কে আনে তাকে আমার দৃষ্টি সীমানায় কোন অদৃশ্য দেবতার প্রহসন?
কে নেয় আমার মনের দখল যাকে মুখোমুখি দেখিনি কোনোদিন
উৎসাহহীন হয়ে আছি বহুদিন বিবিধ কারণে, বিড়ম্বিত জাগতিক অর্জন …
আলোর ঝলক দেখে দ্বিধান্বিত হয়ে থাকি, আমরা কি পারি অতিক্রম করে
যেতে বয়সের ব্যবধান, যখন অভিন্ন আমাদের আত্মার রঙ?
০৩
স্বপ্নযাত্রায় দেহাতীত কালভ্রমণ, বাধাবন্ধহীন এক দিন, দুই দিন …
কোথায় যে ঘুরেছি প্রথম স্বপ্নে মনে নেই সব, শুধু মনে পড়ে ঢেউ তুলে
দেহভারে তোমার মৃদু ধাক্কায় আমার ভেঙে গেছে ঘুম!
দ্বিতীয় স্বপ্ন, লঞ্চের পাটাতনে একপাশে দাঁড়িয়ে আছো তুমি লাল শাড়ি
পরিধানে, স্বজন কী সখি সমবায়ে—অন্যপাশে আমি রেলিঙে হেলান দিয়ে
মাঝে মাঝে মাথা ঘুরিয়ে দেখছি তোমাকে, ঘাটে নেমে রাস্তার দু’পাশে দুজন
বাকহীন সমান্তরালে হেঁটেছি বহুক্ষণ, ঘুম ভেঙে মুঠোফোন খুলে দেখি
কালো শাড়ি পরা তোমার ছবির ফ্রেম!
০৪.
গান গাও তুমি চম্পক আঙুলে তুলে সুর তারের মূর্ছনায়
তোমার কাঁধের এপাশ থেকে ওপাশে শুকপাখি নেচে নেচে যায়—
ঠোঁটে ঠোঁটে খায় প্রগলভ চুমু, একটি বিড়াল একচ্ছত্র আদরের দাবি তুলে
পায়ে পায়ে ঘুরে যা কিছু সে পায়, সে ভাগ্য পৃথিবীতে হয় ক’জনার?
সেই চোখ, সেই হাসি, গুনগুন সঙ্গীতরাশি ভার্চুয়ালে ভালোবাসি
আমি তো খুঁজিনি তাকে সচেতনে, সেও জানি খোঁজেনি আমায়
তবে কোন তরঙ্গপ্রবাহ সৃজন সত্তায় অগোচরে কি
নিয়ে আসে আমাদের অজ্ঞাত সম্ভাবনায়?