প্রতিবেশী
তুমি আমার পড়শি হতে যদি
দেখা হতো সকাল বিকেল হলে
হয়তো দুপুর, একলা গলির মোড়ে
দাঁড়িয়ে আছ রিকশা নেবে বলে।
হয়তো হঠাৎ মেঘ করেছে ভারি
ছাদে ছিল কাপড়গুলো নাড়া
ঠিক তখনই বারান্দাতে আমি
দেখছি তোমার হাতের নাড়াচাড়া।
ছোট্ট শহর, ঘুপচি অলিগলি
কফিশপ তো একটা মনের মতো
শীতের সন্ধ্যায় ঢুকেই দেখি, তুমি
কফির মগে দুচোখ ভারানত
শরৎ বাবু তোমার ভীষণ প্রিয়
আমার প্রিয় বিনয় মজুমদার
বইপাড়াতে মারতে গিয়ে ঢুঁ
তোমার দেখা পেতাম কয়েকবার
সপ্তাহান্তে শিল্পকলায় যাও
জানি তুমি সংস্কৃতিমনা
আমিও যদি নাম লিখিয়ে আসি
দেখা হওয়ার প্রচুর সম্ভাবনা
অফিস বেলা, সময় যাচ্ছে চলে
হাঁটছ দ্রুত, কে তোমাকে থামায়
একটুখানি চোখ ফেরাতে যদি
পথের পাশে দেখতে পেতে আমায়
ফেরার পথে বৃষ্টি ঝিরিঝিরি
জলে কাদায় কী বিচ্ছিরি হাল
দূরের থেকে দেখতে পেলাম আমি
তোমার ছাতা কৃষ্ণচূড়া লাল
এমনি কত হাজার মুহূর্ততে
না চাইলেও হয়েই যেত দেখা
তুমি আমার প্রতিবেশী হলে
আমি কি আর হতাম এমন একা?
মায়াবি ভোরের পদ্য
শঙ্খ সুরে রাত পোহালো, মহালয়ার ভোর
দুচোখ জুড়ে ঘুম তখনো দুচোখ জুড়ে ঘোর
স্বপ্নটুকু উসকে ওঠে সামান্য একরোখা
দৌড়ে ছুটি তোদের বাড়ি, আমি এমন বোকা
সাতসকালে দেখব তোকে, ইচ্ছেটা চমকালো
কেমন লাগে তোর গালে ওই আঁধার মাখা আলো
ঠিক তখনই বারান্দাতে করছিলি পায়চারী
আমার পায়ে শেকল আঁটা আমার দু’পা ভারী
সামনে এসে দাঁড়াস যখন এমন কেন হয়
বুকের মধ্যে ভিসুভিয়াস, মনের মধ্যে ভয়।
আকাশবাণী হচ্ছে শুনি আগমনীর সুরে
বুকের মাঝে ধুকপুকানি, ষষ্ঠী কত দূরে
দুগ্গা ঠাকুর দুগ্গা ঠাকুর, এবার যেন পারি…
তাই না হলে তোমার সাথে এক জনমের আড়ি।
ভাঙন
দুকূল ভেঙে বন্যা এল আকাশ ভেঙে মেঘ
ভাঙন-লাগা ঢেউয়ের ভয়ে আকণ্ঠ উদ্বেগ
ছোট্ট একটা না’য় উঠেছি চালির পরে তুই
বৈঠা! প্রাণের বৈঠা দিয়ে জলের শরীর ছুঁই
তুই কি তখন বকুল কদম তুই কি তখন কাশ
স্বেচ্ছাচারী হাওয়ায় তোকে লুটিয়ে দিতে চাস?
আমিও তখন খুব বেসামাল পাই না খুঁজে ছল
বিনি ছুতোয় নৌকা ডুবাই এমন বিহ্বল।
মেঘের ডাকে উঠল কেঁপে ইলশেগুঁড়ি রাত
অন্ধকারের হৃদয় চিরে তুমুল বজ্রপাত
একটুখানি ছুঁয়ে দিলি, একটু আলিঙ্গন
তাতেই শরীর বজ্রাহত, বজ্রাহত মন।