মানুষ রঙের পাখিরা
ভোরবেলা স্বপ্ন না দেখে, আমি হেঁটে যাই গুদারার দিকে। আমায় টেনে নিয়ে যায় ভাঙা কণ্ঠের ভাটিয়ালি গান। হেঁটে যেতে যেতে কুয়াশায় ভিজে ওঠে পা। আমায় দেখে রাজহাঁসগুলো উপহাস করে। তারা বলাবলি করে, দূরের হাট এখনো জমে ওঠেনি।
এখনো জমে ওঠেনি যাত্রাগানের আসর। শুনেছি সীতার মেকাপ বাক্স চুরি হয়ে গেছে। সে কোনো সিঁধেল চোর হবে। যদি তার দেখা পাও, তাকে বলে দিও এই হলুদ রঙের চিঠি আমি তাকেই লিখেছি। তার অপেক্ষায় থেকে থেকে ঝরে গেছে সাদা লাউফুল।
এখানে পাখির দেহ থেকে অনবরত ঝরে যাচ্ছে মাটির পালক। কারও দেখা না পেয়ে, শুধু দুপুর কুড়িয়ে নিয়ে আকাশের দিকে উড়ে গেছে বালিকা। অথচ সে জানলো না আজও, শিমুলের লাল সেঁটে আছে তার চুলে।
আমি যেতে যেতে দেখেছি, চুমু খেয়ে খেয়ে কোনো এক প্রেমিকের ঠোঁট হয়ে গেছে বাদামি রঙের। সে জানতেও পারেনি, তার প্রেমিকা সবুজ রঙের হাসি হয়ে হাওয়ায় ভেসে গেছে। আমি দেখেছি মাঝির হৃদয়, আচমকা জলরঙ মিশিয়ে সে কোনো এক বাউলের গান ধরে। আমি স্বপ্ন দেখি না, অথচ আমার ঘুমের ভেতরে মানুষ রঙের পাখিরা খুব ওড়াউড়ি করে।
বকেয়া
অনেক বকেয়া বিল জমে আছে বিজনের চায়ের দোকানে-
নদী দেখে দেখে অজান্তেই কত দেনা বাঁধিয়েছি বুকে,
তার মাঝে পাখি যদি গানের বকেয়া চেয়ে বসে
অথবা রোদ যদি চেয়ে বসে আলোর মজুরি,
মাতালের কাছে কত কড়ি পায় ভোরের বাতাস?
আমি শুধু জানি, জানালার কাছে আমার দেনা দিনদিন বেড়েই চলেছে।
এখানেই যদি আমার প্রাক্তন প্রেমিকারা ফিরে আসে?
যদি তারাও চেয়ে বসে চুমুর মজুরি?
কবিতা লিখে লিখে মাতৃভাষার কাছে কবেই তো দেনা জমিয়েছি
শিশির কুড়িয়েছি কতকাল আগে,
গতকাল ঘাসফুল তার বকেয়া চেয়েছে;
এতো দেনা নিয়ে আলপথে কি হাঁটা যায়?
প্রেম কি বাঁধা যায় কারও বুকে?
আজকাল আকাশ দেখার নতুন বকেয়া জমেছে চোখে।
চাওয়ার ছিল
আমার কিছু চাওয়ার ছিল, পাওয়ার ছিল
তোমার কাছে একটা উঠোন এলোমেলো
চাওয়ার ছিল একখানা ঘর,
দুখানা তার জানলা হবে
একটা উঠোন এলোমেলো
তুমি অবাক চোখে তাকিয়ে রবে।
চাওয়ার ছিল তোমার চোখে আকাশ নামুক
একটা উঠোন এলোমেলো, বৃষ্টি নামুক
পাওয়ার ছিলো একখানা ঘর, কাঠের দুয়ার
এলোমেলো ঝড়ের দিনে সেই দুয়ারে অপেক্ষমাণ
শুধু তোমায় চাওয়ার ছিল।
চাওয়ার ছিল আষাঢ়-শ্রাবণ
এলোমেলো তোমার সে চুল
পাওয়ার ছিল একটা উঠোন, কাঠের দুয়ার
আর দুখানা জানলা, ঝড়
একখানা ঘর, কবর; পাওয়ার ছিল
তোমার কাছে আমার প্রেমের স্বাধীনতা, চাওয়ার ছিল।
বেহাগ
তোমার নামে সুর লিখে আমি
হেঁটে গেছি হলুদ সন্ধ্যায়
সেই পথে স্মৃতি ছিল কার
ফেলে গেছি, তবু তুলিনি পাতায়
বিষম আষাঢ়ে মুছে গেছে যার
মুছে গেছে অশ্রুর দাগ
ব্যথা হয়ে তবু থেকে যাও তুমি
কণ্ঠে হও করুণ বেহাগ।
মাশুল
পাঠাবো পাঠাবো করে লিখিনি তো চিঠি
কাটাবো কাটাবো করে কেটেছে যে রাত
ভোরবেলা গোলাপের কাঁটা তুলে নিয়ে
হৃদয় কেটে-কেটে বানানো করাত
যেখানে পেয়েছ তুমি ডুমুরের ফুল
সেখানে পাইনি আমি জীবনের মানে
না পেয়ে না পেয়ে এই বাঁধানো অসুখ
তোমায় পেয়েছি কাল ভিখারির গানে
তুমি কি লেখা ছিলে খুচরো পয়সায়
হিসেব চুকিয়ে দিয়ে ধার করা ভুল
ভেসে গেল জমে থাকা দুচোখের কথা
ভাসিয়ে দিলে না শুধু ভুলের মাশুল।
মানুষ রঙের পাখিরা
পার্থ মল্লিক
প্রচ্ছদ: হাজ্জাজ তানিন
প্রকাশক: বেহুলাবাংলা
মূল্য: ১৫০ টাকা