মাতালই যদি হই
নিজেকে নিঃশেষ যদি করি, তোর কী?
মদঘরে, কর্নারে একা একা চুপ করে
ডুবতে থাকিই যদি আকণ্ঠ বিষে,
তোর কী?
বিস্মৃতির মাকড়সা জালে ছেয়ে দিয়ে ছবি
ঝাপসা-আবছা করি, কলঙ্কিত সুখে
তোর কী?
ভারী দরজাটা ঠেলে রোজ তাই আসি
নিঃস্ব হই,
তবু পকেট ভর্তি থাকে কষ্ট
খরচ করি, দু’হাতে বিলাই
শেষ করতেই চাই, দারুণ অস্থিরতায়
ফুরায় না। নিরুপায়।
আঁধার-আলো ছায়ায়, আশ্রয়-প্রশ্রয় পায়
তোর দেওয়া কষ্টেরা কিছুক্ষণ ঝাপসা রয়
ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া বুক
ছিদ্রে ঢাকে সুখ,
অদেখা মেশিনগান ছোড়ে অদৃশ্য গুলি,
বেঁধে আমার বুকে
শরীর অক্ষত রেখে ফাঁকা করে বুকে
কী বললি?
আমার হৃদয়?
আহা! আর নেই, চুরি হয়ে গেছে
কখন যেন, কোথায় যেন, আছে
কার কাছে!
আশ্চর্য এক কুয়াশার ভোরে
অবাক হয়ে দেখে আমায় কুয়াশা মাখা ভোর
আমি দেখি তার বিচ্ছুরিত সাদা ধোঁয়া রূপ,
আনমনা বিভোর
চালধোয়া পানির মতো কুয়াশা ঝুলে আছে
আজান ভেসে আসছে
দূর আর কাছের মসজিদ থেকে।
সাদা পথ-বাতি ছিটকে বেরিয়ে আসে
আলো করে রাখে আঁধার কুয়াশাকে।
স্তব্ধ আমি অবাক তাকিয়ে থাকি,
চেনা পৃথিবীর এ কী আশ্চর্য ছবি!
নাকি ঘুমের ঘোরে বদলে গেছে স্থান?
যখন বদলানোর কথা কেবল সময়ের
নিঃশব্দে নিঃশ্বাস ফেলছে কুয়াশা গাইছে গান।
ত্রিমাত্রিক জগতে বসতি করেছি,
ইচ্ছা কিংবা অনিচ্ছার সাথে
সময়ের চাকা ঘুরে যায় কেবল
মানুষ ঘুমায়, মানুষ জাগে।
কোন কথা নেই
বাসায় আছে পড়ে সাজানো ঘরগুলো শুধু
শোকেসের সবকিছু ছিমছাম, আগের মতোই।
কেবল আমার লক্ষ্মী মা আর ভালো বাবাটা নেই
আলোকিত সব
ঢেকে আছে তবুও আঁধার-ই।
আজিমপুরে নিথর পড়ে আছে
ঘাসের গুচ্ছে ভরা ঘর_
সেখানে কোথাও কোনো জানালা নেই।
পা ছুঁয়ে জন্মে আছে ছোট সাদা ফুলে ভরা ঝাড়,
আমি ঠায় দাঁড়িয়েই
সেই ফর্সা পাতলা দুটি পা এখন নাগালের অনেক বাইরে
কী করে দেখি, মাটির পুরু পরত পেরিয়ে?
মালিশ করার ছলে কেমন করে ছুঁয়ে দেই!
জানি না কোথা থেকে কেমন করে আসে
এত্ত চোখের পানি!
ছোট্ট বালিকার মতো ওরা ঝরতে থাকে
প্রচণ্ড রোদ মাথায় করে, মাথাব্যাথা নিয়ে আমি দাঁড়িয়ে থাকি
জমানো যত কথা আর কিচ্ছু রাখি না বাকি!
শুনতে কি পাও?
রু চু বলো না যে?
কথা বলতে কত যে ভালোবাসতে,
ভালোবাসতে প্রতিবছর যুদ্ধদিনের গল্প শোনাতে,
সারি সারি ঘরের মাঝে
কত শত মানুষ, সবাই নিথর
তোমার মতোই কথা বলতে ভুলে গেছে সবাই।
আরও পড়ুন: কে বলে উড়তে ডানা লাগে ॥ রুচি রোকসানা