মরীচিকা
কলার ভেলা মন আমার সারাজীবন প্রেমে ভেজে মোটেও ডোবে না
মেঘের স্রোত কেটে আর কতো আকাশ নদী পেরিয়ে যাবে চাঁদ
জোছনা যতোই আঁধার ধুয়েধুয়ে ক্লান্ত হতে পারে অমাবস্যার পর
মনে রেখো; পূর্ণিমা রাত কখনো হতে পারে না দিনের প্রতিনিধি
হতাশার সাবান মোছে না আশায় লেপ্টে থাকা হাহাকারের যন্ত্রণা।
ঝগড়া উস্কে সংসারের শীতে আগুন পোহাতে চাও?
যদি একাকিত্ব কাছে আনে, তবে পথ পেয়েছো বলবো না
বরং পথেরা মুখ ফিরিয়েছে বলেই জীবন খুঁজে পেয়েছো
তবু ধনতান্ত্রিক শহরে ডিজিটাল আবেগ সয়লাব দেখে
হেলেঞ্চা লতার মতো গজানো প্রেমের মোহে ভাসো।
আমি তো বিরহের বড়শিতে প্রেমের পুঁটি ধরার অপেক্ষায়
চালতে ফুলের মতো টোলপড়া গালের মন ধরতে চাই
অপেক্ষার ধৈর্য যার অটল পাহাড়ের মতো স্থির
তাই সুখের মরীচিকা আমায় দেখে আর্তনাদ করে।
সুখ
পাপ খরচ করে নেককার হওয়ার মতো সততা নেই
তাই শরাবান তহুরা ভেবে প্রেম-পেয়ালা চুমুক দেই
কাজল চাহনিতে বিকাই যেহেতু সার্বভৌম বেদনারে
ক্ষণিকের মাদকী মোহে সংসারি ভাব না হয়ে পারে।
ঠোঁটে ঠোঁটে রাখার মতো সাহস নেই যে হরিণ শাবকে
সেও সাহসী শরাহত কেলিরত একজোড়া পাখি দেখে
শীতের অনাহুত বৃষ্টির মতো জীবন বিরহে কাঁদে
ঝিনুকের একবুক আবেগী দানা তাই মুক্তা হয় না
অবসর প্রেমে বগুড়ার দইয়ে দেখো সর বসে না
বেদনার বালুচরে স্বপ্নরা কাছিমের মতো বাসা বাঁধে
সাময়িক ভালোলাগা যেমন সীমাবদ্ধ থাকে দৃষ্টিতে
সবুজ ও কোমল হয় না কংক্রিট আবেগ যাতে।
মফস্বল মন আমার ছলনা শেখেনি কোনো কালে
অকর্ষিত ভূমিতে কোনোদিন ভুল করে না লাঙলে
চাষোপযোগী কোনো মন পায় যদি রাখালি আবেগ
আবেগের সববেগ ঢেলে দিয়ে দেবে প্রেমের সেচ
সেই সেচে ঊর্বরা জমিন হবে যে মানবীর বুক
তার মাঝে পরিযায়ী জীবন পাবে বাবুইয়ের সুখ।
ভণিতা সেন
বৃষ্টির নূপুরে নেচেনেচে ক্লান্ত আধাভেজা হে সুন্দরী মাছরাঙা
বেদনার আনন্দ বিরহে কফিনস্থের পূর্বে তোমাকে দেখতে চাই
স্যাঁতস্যাঁতে জীবনে হোঁচট খাওয়া কবি আজীবন তৃষ্ণার্ত
কপোতির ডানায় উড়ে অনন্য শব্দনবী সাধারণ হবেই
বিরহের ঠোঁটে চুমু দিয়ে স্বর্গের দরজা সিলগালা করবে
আর ভুলে যাবে স্রষ্টা তাঁকে ব্যতিক্রম করেই সৃষ্টি করেছেন
তবু সে কেনো ব্যতিক্রম না হয়ে হতাশ করছে স্রষ্টাকে?
তৃষ্ণার্ত হৃদয়ের পিপাসা মেটানো কাক্সিক্ষত কচি ডাব,
প্রেমকুমারি কবির জন্য কাদামাটির মতো মন হও
বিরহের শানকিতে পান্তা ভাতের মতো ক্লান্ত জীবন কবির
বাকবাকুম স্বরে ভালোলাগার গান গাওয়া ডাহুক সে নয়
হৃদয়ের হায়রোগ্লাফিকে লেখেকষ্টের ঐশীবাণী
বাস্তবতার ধারাপাতে শেখে জীবন মানে বাঁচার আর্তনাদ।
ভণিতা সেন আর নয়,
সময়কে মৃৎশিল্পের মতো ক্ষণিক আনন্দের তুলিতে সাজানো
এবার আশার আলপনায় স্বপ্ন সাজাও প্রেমহীন বিষাদ জীবন
বউকথা কও পাখির মতো আকুতি না শোনার ভান করো না
তোমার ভণিতায় হৃদয় মরুঝড়ে তছনছ, ভূমিকম্পে ভেঙে চৌচির
জানো না, মন সে তো কাঁচের আত্মজা; যা ভাঙলে কখনো জোড়ে না!
মনখুঁড়ে ক্লান্ত
বিরহের ঘুম ভাঙানো মশারূপী আফ্রোদিতিকে মেরো না!
কুমড়ো ফুলের কলির মতো নিজেকে গুটিয়ে রেখো না আর
প্রতিটি দীর্ঘশ্বাসে ঝরাও শীতের শিশিরের মতো শূন্যতা
কুয়াশামাখা স্বপ্নে আবেগের কোলবালিশ ধরতে চাও না।
বিরহী কাঠঠোকরা তোমার মন খুঁড়েখুঁড়ে ক্লান্ত
তবু কমলার স্ফীত বুক সাড়া দিতে পারো না।
মন নিয়ে চারগুটি খেলে ক্লান্ত হতে চাও বলো?
কচিডাব দেহখানা এইবার মেলে দাও কলাপাতার মতো
বাকবাকুম স্বরে ডাকছে দেখো কামনামাখা মুহূর্ত।
ধনেপাতা, তোর ঘ্রাণ কখন পরিপূরক হবে নিঃস্বাদ জীবনে
আর কতো সিদ্ধধানের মতো আবেগও সিদ্ধ হবে অপেক্ষায়?
ভালোবাসার পুকুরে তেলাপিয়া মাছের মতো লুকোচুরি?
এখনো নাড়ার আগুন পোহায় জমাটবাঁধা মন আর আশা
তাই প্রেমের জালে ধরা দিয়ে দেখ, কবি কেমন জেলে?
আরও পড়ুন: জীবনের যতিচিহ্নগুলো-৪৪॥ মোহাম্মদ নূরুল হক