০১.
আমি এক উন্নত প্রাণী এবং
এখন সর্বগামী!
আমার বন্ধু সুবীর
ওর ঘরে রবীন্দ্রনাথ, আমার ঘরে নজরুল
ওর ঘরের বিলি অনায়াসে যায় যেকোনো ঘরে
পাশে বানেশ্বর ঠাকুরের কচ্ছপ
নিরাপদে পিচের রাস্তা পারাপার করে
কোথাও নেই কোনো অভিযোগ
সুবীরের ম্যানেজার চন্দন
আমাকে নিয়ে যায় আলিপুর দুয়ারে
হাতিপোতা, পাতলা খাওয়া, শামুকতলা
. রাজাভাত খাওয়ার জঙ্গলে
যাকে বলি ডুয়ার্সে!
সেখানে হাতির চলাচল
খরগোশ ছোটে
বাইসন, ময়ূর, তিতির, বনমোরগ
অপণা মাংসে হরিণা বৈরী
চিতা, বাঘ আর শিয়ালে
বনবাসরে লুকোচুরি!
০২.
একটা বন্যশূকর তেড়ে এলে
আমাকে শিশুর মতো আড়ালে
. রেখে
চন্দন নেয় বিপদের সব ভার!
দেহটা ওর ঢাল করে
হঠাৎ বাঁচায়
. নিমিশ হওয়া পুতুল আমায়!
ভুলেই থাকি আমি এক মস্ত প্রাণী
সবার ঘরে রয়েছে অবাধ যাতায়াত!
তখন কিন্তু চেনে না কেউ
বনের কোনো হিংস্র প্রাণী!
আমি শুধু টিকেট কেনা
অবাক হওয়া প্রাণ
জঙ্গলের এই নিঝুমবেলায়
হঠাৎ এলাম আমরা যারা
চন্দন হাটে ছায়ার মতো
. সাথে সঙ্গে
বুদ্ধিবাদের চিন্তা ঝেড়ে
. পায়ের সঙ্গে!
০৩.
রক্তজবা সবুজ পাতায়
চম্পা, বেলি, ভাটের বনে
দুব্বা ধামে
নাপাই চণ্ডী ঢের রয়েছে!
বাঘের পিঠে বনদেবী
দাঁড়িয়ে থাকে
চাঁদ না-ভাসা জোৎস্না নদীর
. বান না ডাকা
নদীর মতন!
আমরা খেলি জ্যোৎস্না নিয়ে
খেলতে গিয়ে
চিতার ডাকে
নাসের ছোটে ভয়ের বুকে
টেন্টে গিয়ে রয় লুকিয়ে
আমরা তখন আস্তে হাঁটি
নাসের ভাবে ভয় কেন নেই
. এই আমাদের নগরমুখে!
তবে কি আর চিতার ভয়ে
কেউ পালায় না এই জঙ্গলে?
সত্যি বেরোয় একটু পরে
জালাল পারে ভেলকি দিতে
চিতার স্বরে পিৎ জ্বালাতে!
০৪.
দুপুর মেরে অগ্নি জলে
রান্না যেই শেষ হয়েছে
আমরা তখন বনমোরগে
আত্মভোগের স্বাদ মেটাতে
মাংসটুকু গিলছি পেটে
চন্দন তখন বালতিটাকে
ভরতে গেছে কুয়োর জলে
হঠাৎ দেখি চন্দন একা!
গোটা কয়েক কুকুর আছে
খুব আনন্দে ওদের দিয়ে
খাচ্ছে খাবার খুব রসিয়ে
. ওর বরাদ্দ যা আছে
০৫.
সন্ধ্যা হতে অনেক দেরি
সূর্যটাও সিঁদুর রঙে
পাতায় পাতায়
রঙ ছড়িয়ে
ভরছে রোদে তোর্ষানদী
শত জন্মের কথা ছিল
এমন আলোয় বিকেলমুড়ে
আড্ডা কথা গানের তালে
জঙ্গলের এই সন্ধ্যাকালে
আমি,গৌরব, সৌভিক, নাসের
. সঙ্গে সুবীর
বন্যরাতের গন্ধ নেব
আজ জানি না
চাঁদ আকাশে
আসবে কি না!
বোতলভরা জল গড়িয়ে
আমরা সবাই মধ্যরাতে
নূপুর বাজার ধ্বনি পেলে
টেন্ট গলিয়ে বাইরে আসি
হঠাৎ চোখে চাঁদের আলোয়
নাচছে কেউ চাঁদনীচকে!
জঙ্গলে নেই উন্মাদিনী
তবু দেখি তন্দ্রাঘোরে
কেউ নাচে আজ হৃদয়ঘিরে!
০৬.
চন্দন আমায় নিয়ে আসে
বিশ্বকর্মা গ্যারেজ মাঠে
হাওয়ায় ভাসা তেলে চলা
স্কুটি তাড়িয়ে
চন্দন আমায় নিয়ে আসে
নাচেনা এই শহরপানে!
খুব সকালে দাঁড়িয়ে ছিলাম
. গুঞ্জুবাড়িতে
টিনে-গড়া হাওয়া গাড়ি
ছুটতে ছুটতে নামিয়ে দিল
. কোচবিহারে
বিহার তো নেই; আছে রাজবাড়ি
০৭.
চন্দন এক হাতছাড়া কবি
বেহাগকথায় বানায় মুখশ্রী
আমরা যারা শব্দ তুলে
বানাই শব্দছবি
ভাবতে থাকি বেশ হয়েছি কবি!
তাদের চেয়েও মানতে হবে
চন্দন এক হাত ছাড়া কবি
বেহাগকথায় বানায় মুখশ্রী
০৮.
এ এক শেষছাড়া অনন্ত জঙ্গল
হাতি, হরিণ, বনো বাইসন
চিতায় চলা জঙ্গলে আজ
আমরা এলাম ছুটে
এলিফেন্ট পয়েন্ট,পানিঝরা
রাজা ভাত-খাওয়া জায়গাগুলো
. ঘুরে
একটু দাঁড়াই বনকাঠালের নিচে
হঠাৎ বুঝি
ব্লাঙ্ক কেসেটের মতো
জঙ্গলটা খুব ঘুমিয়ে আছে
দিনের আলোয় রাতের তারার
. ভেতর
কেউ কি আছে জঙ্গলে যে দেখছে আমায়
দেখছে কেউ মনের চোখের তারায়!
বনকাঠালের নিচে
পাতার পাহাড়
চৈত্রদিনে পোড়ায় কারা?
আমরা যারা মনপাহাড়ে
শব্দ খুঁজে বানাই কথার ঝর্ণা
আজ এসে তাই বুঝতে পারি
বনের কাছে
পথ খুলেছে
মনের গাছে
ঝুলছে শত আয়না!
আরও পড়ুন: সাম্প্রতিক সাহিত্য