মনখারাপের সন্ধ্যাগুলো
পাখির হৃদয় নিয়ে বেড়ে ওঠা জবা গাছ
একবারও জানতে চাইছে না আমার মনটা খারাপ কেন।
অথচ সে জানে
ঘন সবুজের মধ্যেও থাকে লাল রঙের বাহাদুরি।
ঘাসফুল, তুমিও কি শিশির দিয়ে পরিষ্কার করো ঘরদোর?
জোনিপোকা, তুমিও কি মনখারাপের রাতে ছাদে ওঠো
চাঁদকে উচিত শিক্ষা দেবে বলে?
কবির হৃদয় নিয়ে বেড়ে ওঠা একটি বিড়াল
জানতেও চাইছে না আমি কেন লোকালয় ছেড়ে
দ্রুত মিশে যাচ্ছি বুনো মহিষের ক্ষুরে,
ওগো জবা গাছ, ওগো জোনিপোকা,
নিজেরই প্রাণের ভূমিতে যেন সদর্পে দাঁড়িয়ে আছে শত্রুদের দূতাবাস—
মনখারাপের এমনতর সন্ধ্যাগুলো
লোকালয় ছেড়ে দ্রুত মিশে যাচ্ছে কুকুরের ভাঙা চোখে।
নীলাভ স্নায়ু
কী এক নীলাভ স্নায়ু দিয়ে
দেখছি তোমাকে,
পিঁপড়ের ডিমের মতো আমার দুঃখগুলো
তোমার কাছেও দেখি নিরাপদ নয়।
বাসনার চেয়েও মৃত্যুঞ্জয়ী হলো এই রাত—
রক্তের অধিক তুমি গন্তব্যপিয়াসী,
কিন্তু দেখো, না বলা কথার স্তূপে ভরে গেছে পথ,
কথা ফুরিয়ে যাওয়া রাতে যদি ডেকে ওঠে সাপ
নিষিদ্ধ গ্রন্থের চেয়েও সাবলীল কোনো ভাষায়,
যদি ঝিঁঝির চোখের মধ্য দিয়ে দেখা যায় চাঁদ,
আর ধরো একটি বকুল গাছ যদি
উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে গন্ধ ছড়ায় চারিদিকে,
তবে আমি, এই আমি, তুমি বিনা, কোন দিকে যাবো?
নয়নের তারা
আকাশের তারা জানি আকাশেই থাকে
কিন্তু নয়নের তারা কেন নয়নে থাকে না!
সে তো ঘুরে-ফেরে, হাসে-খেলে, অন্য কারও সাথে,
অন্য কারও প্রতীক্ষায় থাকে—
শুনেছি কোনো এক তাচ্ছিল্যের দেশে
কোকিল অপেক্ষায় থাকে চতুর কাকের,
তাকে যদি পাওয়া যেতো, তবে জানা যেতো
মনের দোহাই দিয়ে শরীরে পৌঁছুতে
কোন ফুল বেশি উপকারী, শিউলি না গোলাপ?
কিংবা যখন আমার অন্তরাত্মা গান গায়
তখন কিভাবে, হে শৃগাল তুমি,
শরতের জ্যোৎস্না চুরি করো ময়ূরের বুক থেকে?
হে কাক, হে শৃগাল,
জোয়ারের জল এসে পা ছোঁয়, অথচ ভাটার পানি বলে যায়—
আমি তোকে ছুঁইনি কখনো, আমি তোকে ডাকিনি কখনো।
একদিন তাকে যদি পাওয়া যেত নয়নের অভ্যন্তরে
আহা! সৃজনে সৃজনে তাকে! নয়নে নয়নে!