ঋণ
মুহূর্তে আশিক, বাঁশি…সুর যেন অনতিতরুণ
প্রণতি জানাতে দ্বিধা৷ মুসাবিদা, একখণ্ড তৃণ
ঠোঁটে নিয়ে উড়ে যাই৷ সবুজাভ৷ পূর্বে, নবারুণ
তবু কি ঘুরবে চাকা ফড়িঙের দেশে কোনোদিনও?
এত যে হিমেল হাওয়া—অঘ্রানের ঘ্রাণে ভরে থাকে
আমন চিনেছে তাকে৷ মন তার নবান্নকুসুম
ঘুম-ঘুম চাঁদ ওই…নিশাজল, টুপটাপ, ফাঁকে
শুভবার, স্মৃতিঘেরা নিশীথিনী, আর্দ্র-মরসুম৷
সকলই আশিকে পূর্ণ৷ চূর্ণস্রোতে মহিমা অপার
ক্লাসিক বলো না একে৷ আঁকাবাঁকা নদীতীরে আজ
রেখে যাই সমূহ খাতির, খ্যাতি৷ আশ্চর্য ব্যাপার
তোমার কাহিনি ঘিরে যাবতীয় ছন্দ-কারুকাজ
ভারতী কিশোর জানে: প্রাণে সেই মায়াবী হরিণ
ঘাসফড়িঙের দেশে এইভাবে থেকে যায় ঋণ…
তারাফুল
কৈশোর তোমার নয়৷ কার তবে?
. হাতের পুতুল
নাচাতে উস্তাদ, বড় বাজিকর
. রাজি? রাজি! রাজি…
অন্তহীন আনুগত্য—সব ছেড়ে একা
শূন্য অভিমুখে—সফেদ-তুমুল
. স্মরণীয় সাজি
এই ভালো রাতের আকাশে
. তারাফুল…
বেখেয়ালে
বেখেয়ালে রেখে এলে, দেয়ালে কি পড়ে তার ছায়া?
আতিপাতি খুঁজি তাকে৷ কী যেন! ভেবেই দিশেহারা
অথচ একটি দিন মাঝখানে—আমি তুমি তারা…
সকল নামের পাশে কোথাও পাইনে তার কায়া!
কাক না কায়াকে ভেসে—যাব সেই ইগলুর দেশে
শ্বেতাভ রমনী, নদী, স্লেজগাড়ি, বল্গা হরিণ
আলগা হবে না৷ খাদ্য যথাবিধি, জল, তৃষ্ণা-ঋণ
কখনো মেটে না৷ প্রেম, বেঁচে থাকে বিরহ-আবেশে৷
প্রবেশ, তোরণদ্বার…কী জানি, কোথায় যেন কাকে
কথা দিয়ে ভুলে যাই—এই এক ব্যাকুলতা ঢের!
শরীরে সয় না সব৷ বাস্তবিক ছায়া ও রোদের
মধ্যে এক ব্যবধান—তবু সে জড়ায় পাকে-পাকে৷
লতাপাতা, তুমিও কি বেখেয়ালে রেখে এলে ওই—
কী যেন! ভুলেছি তাকে, কোথায় মেলাবে তার সই?
ভক্তি
সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে এগিয়ে আসছে হাওয়া…
ওকে তুমি অথর্ব বলো না৷ গৃহকোণে বিজন প্রদীপ৷
এসো, দু’দণ্ড গল্প করি৷ আবছায়া-অন্ধকারে তোমার
দিকে ঝুঁকে আছি ‘মুর্ধন্য’৷
একদিন ধন্য করে দেবে এই দেবালয়৷
অরণ্যবেষ্টিত ঘন-গাছপালা, প্রাণীদের সাজপালা…
এসব ভুলে কি তুমি হতে পারো কবিতাপ্রেমিক?
অপেক্ষাপ্রবণ-মন একবার উঠে গিয়ে দ্যাখো:
কীভাবে সূর্য ওঠে রক্তজবা পুবের আকাশ৷
অযুত ভক্তি, আহা৷ কোথাও বেড়িয়ে এলে
মনে হয় ঘর থেকে বেরিয়ে গেছে সে বহুকাল…
আলেকুম
‘ধ্যাৎ’ শব্দে পুনরায় ফিরে আসা—এতটাই জুত
নিজেকে বদলে নিতে বিবেচনা—অবাক নয়ন
মেনেছে জীবন এই: আলেকুম, দ্বিতীয় মারুত
বহে যায় যথাবিধি—তারপর অগভীর মন
কবির হৃদয় বিনা, বীণাপাণি পায় না সে, পানি,
জলের সমীপে এসে, এতদিন পরে তাকে চেনা
মন্তব্য পীড়িত সিঁড়ি—তিন্তিড়ির ছায়া মাখে জানি
পাতলা জীবন তবু মুখ ফুটে কিছু বলবে না৷
না বলুক, দ্বৈতাদ্বৈত—অদ্বিতীয় কথার ভুবন
বুঝিতে পারে না কেহ—সন্ধ্যাভাষা, জোনাকিআঁধার…
গোধূলি-ধূলিতে দীপ্ত—দৃপ্তভূমি, সুগভীর বন
পাতার মর্মরে জাগে—খুলে রাখে অনন্তের দ্বার৷
‘ধ্যাৎ’ শব্দে পুনরায় ফিরে আসি—অবজ্ঞাত ধ্বনি
দীন নয়, আলেকুম—আমাকে করেছে অতি ধনী৷
মানে
মানেটাকে খুঁছছি তো সেই সারাজীবন…
দৃশ্য অনেক৷ প্রসঙ্গত গ্রীষ্ম-বাদল
পার করে সেই মুখের আদল
ধর্মে ফেরে৷ ফেরেশতা কি সস্তা দরের?
ফিরিস্তি কে দেবে মশাই, মুকুন্দরাম
কুন্দ শাদা…
ভর্ৎসনাকে মাথায় করে
অর্হৎ সে-তীর্থভূমে
শেষ-অবধি জড়িয়ে পড়ি—
আসসালামু আলাইকুমে…
নৌকো
জলের ভূমিকা আছে৷ নৌকো এক রহস্যরমণী৷
কৃষ্ণকায়৷ ছলোচ্ছল৷ ছলনার অপূর্ব বিলাস…
পারাপার—ইশারাপ্রবণ ওই দু’চোখের মণি
শ্লোকের আবহে গড়া—নির্নিমেষ, কখনো নিলাজ৷
পতঙ্গের চোখে দেখি: অগ্নিশিখা, দাউদাউ, আভা
নিজেকে নিক্ষেপ করে—পুনর্জন্ম, অনিঃশেষ আয়ু
মায়াবী নৌকোয় ফের, মনে-মনে দারু, আত্মশ্লাঘা
কবিতা রচনা করে প্রভু নাকি প্রভঞ্জন-বায়ু
কে জানে অধিক সেই নদীটিকে? নাও অন্তঃপ্রাণ
এত যে বানাও সুর—গানে-গানে পল্লবিত ঢেউ
ঘুরে-ফিরে আসে সেই চতুর্বর্গ—বর্গভীমা টান
শব্দপথে অবিরত৷ অনেক অব্দের পরে কেউ
দরজাটি খুলে দেবে৷ হাওয়াতেই ভরে যাবে ঘর৷
জলের ভূমিকা আছে৷ ব্রহ্মসেতু৷ নৌকো তারপর…
ভোরের প্রসূন
স্থিতপ্রজ্ঞ৷ বুননে অস্থির তুমি৷ সান্ধ্য-উনুন…
পানীয় প্রস্তুত হতে সামান্য-ই বাকি৷
‘নিঃশব্দ’ বর্ণনায় মেতেছে হৃদয়, তবু
ডানা মেলে একটি-দু’টি পাখি
বাসায় ফেরার আগে শরীরের নুন
হাওয়ায় ছড়িয়ে দেয়৷
. তারপর?
প্রতিটি শাবক দ্যাখে: মায়েরা আলোর মতো
. ভোরের প্রসূন…
সাধন
প্রসাধনে সাধ যায়—যদি না সাধনবার্তা আসে
বিফলে যাবে কি সব? তারাভরা দোতারাকুটির—
ইশপের গল্পে মন উজ্জ্বীবিত হলে—আশেপাশে
মানুষের দোষ-গুণে ভরে ওঠে কিচিরমিচির…
মিছিমিছি কথা নয়—সাঁঝবাতি, তারকাসকল
একাকী চাঁদের মধ্যে—কত কথা বলে অফুরান…
হাসিটি সুন্দর—বাঁশি, বুকের ভেতরে এত গান
তুমি যে জাগিয়ে দিলে—ভূমি আজ জবরদখল৷
এই পারি৷ বাঁধাগতে, অনাহূত, ভূমিকাবিহীন
প্রদীপের শিখাটুকু রেখে যাব ঘোর-অন্ধকারে,
তোমার দু’চোখে ভাষা আশাতীত আনবে সুদিন
পরাক্রম, দ্যাখো, ছন্দ, কীরকম অন্ধ হয়ে দ্বারে
অপেক্ষা করছে আর প্রসাধনে অপূর্ব সাধন
কুটিরে জেগেছে, ছুটি—ভেসে যায় বাউলের মন…
অজানা
অনুজ সাক্ষাৎকারে—ন্যুব্জ এই দেহমন
. সব পবিত্রতা…
সব ভুলে আমিও এগোই যথা-তথা ৷
কথাহীন থাকা মানে—ফাঁকা মাঠ,
. অন্ধকারে অনন্ত রোদ্দুর…
সব শিখি, শিখিপাখা, বর্ষায়—
. সজল ময়ূর
কেবল অজানা থাকে—
. গৃহের সামনে চৌকাঠ…