শূন্য চেয়ারগুলোর দিকে তাকিয়ে
(জোসেফ বাইডেন, আপনাকে)
‘এই যে শূন্য চেয়ারগুলো পড়ে আছে, এখানে-
এই ডাইনিং টেবিলে একদিন বসে খেতেন আমার ভাই।
এই যে চারটি বেডরুমের একটি এখন খালি-
তাতে থাকতেন আমার মাসীমা!
তারা কেউই আজ নেই! কোথায় তারা আজ!
প্রায় দুই লক্ষ চল্লিশ হাজার মানুষের সমাধি পাশে নিয়ে
এই যে আমি আপনাদের সাথে কথা বলছি;
আমি কি পারছি তাঁদের ঋণ শোধ করতে!’
বলতে বলতে আপনার চোখ অশ্রু ভারাক্রান্ত হয়ে
পড়ে।আমরা তাকিয়ে থাকি। দেখি পুরো মার্কিন
মুলুকের আকাশ জুড়ে একটি চাঁদ খণ্ডিত হচ্ছে বেদনায়!
কয়েকটি নক্ষত্র বিতরণ করছে কিছু শুশ্রূষা,
কয়েকটি নদী, তাদের ঢেউযাত্রা বাতিল করে দিয়ে
দাঁড়াচ্ছে মানুষকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে বলে।
একটি বিজয়ের ভোরে আমি লালসূর্যের আভা বহুবার
দেখেছি। দেখেছি, মানুষ কাতারবন্দি হয়ে দাঁড়ালেই
পালিয়ে যায় সকল অসুর!
প্রিয় জো, এমন কয়েকটি সূর্যই আমি আজ আপনাকে
উপহার দিতে চাই! আমার বুকের ওপর থেকে
সরে যাচ্ছে যে জগদ্দল পাথর-
আমি পালন করতে চাই সেই উৎসব! অনেকগুলো
হৈমন্তি পাতার রং-বেরং পথে পথে ছিটিয়ে বরণ করে
নিতে চাই আপনাকে।
প্রাচ্য থেকে ভেসে আসা একজন কবির এই আরতি
ছাড়া আর কী-ই বা দেওয়ার আছে আজ!
ভেঙে পড়া সেতুর বেদনা
জীবন থেকে একটি পাতা ঝরে পড়লেই আমরা
আরেকটি পৃষ্ঠা উল্টাই।বিগত বর্ষণের স্মৃতি
বুকে নিয়ে হাঁটে যে পাখি, তার দিকে তাকিয়ে দেখি-
কয়েকটি পালক নেই, একটি ডানাও ভাঙা…
এখানে একটি বটবৃক্ষ ছিল, এখন নেই
এখানে একজন মানুষ ছিলেন, এখন নেই
এখানে একটি চেয়ার ছিল, এখন নেই
মানুষটি এই চেয়ারে বসেই গল্প নির্মাণ করতেন।
আরও অনেক মানুষকে কাছে ডেকে বলতেন-
‘ওই দেখো, সূর্য উঠছে।’
এমন সূর্যও আকাশে উঁকি দেয় না আর!
এমন চাঁদের নহর বয়ে যেতে দেখে হেসে ওঠে না
এখন আর এই গ্রাম! শিশুরা ভীত হয়ে যে ডেরায়
আশ্রয় নিতে চাইতো; সেখানেও এখন বাস করে আঁধার!
মানুষেরা আধাঁরকামী নয়-
একথা জেনেও যারা প্রান্তিক পৃথিবীতে অন্ধকার ছড়ায়
তাদের প্রতি কোনও অভিযোগ না করেই যে মা;
বাকরুদ্ধ হয়ে থাকেন,তার কুশলও এখন আর জানতে
চায় না কেউ! নতুন পরিবর্তনশীল বিশ্বে
বৃষ্টি থেকে মানুষ,আর ঋতু থেকে মাটি
বিচ্ছিন্ন হতে হতে যে সেতুটি ভেঙে পড়ছে আমাদের
চোখের সামনেই, তার জন্য বেদনা প্রকাশেরও
. এখন কেউ নেই এই মহান পৃথিবীতে আর !
মেঘ ও মথুরা
বৈষম্যবাদী না হলে মেঘ এক-একটি নগরে ভিন্ন
চেহারা দেখাতে পারতো না! সূর্য আজীবন জেগে
থেকে প্রদক্ষিণ করতে পারতো না—
দেশের পর দেশ। কাউকে দিন, কাউকে রাত
দেখাতে দেখাতে পরখ করতে দিতো না
. আলো এবং আঁধারের পার্থক্য।
অথবা বলতে পারো, মথুরায় দাঁড়িয়ে যারা প্রাণের
বাঁশি বাজায়; তারাও ভুরুর নিচে জমে থাকা মেঘ
পাঠিয়ে দিতে পারতো না নিজ প্রেমিক-প্রেমিকার
উদ্দেশ্যে; আর ছুঁতে পারতো না পাহাড়ের প্রথম চূড়া!