ব্যবহারিক শরীরবিদ্যা
ক্লাসে শারীরিক ঢেউবিদ্যা পড়ানো হতো—ইশারায়
ওতে আমার মনযোগ ছিল না,
তোমার মনের শরীর আঁকতাম কেবলই।
ঢেউবিদ্যা কিংবা তোমার মতো কেউ-বিদ্যা শেখা হয় নাই। আজকাল
পার্থক্যের প্রেম আর বিষকাঁটা বুকে নিয়ে ফিরে আসি;
বাড়ির দেয়ালে শ্যাওলায় আঁকা নরোম গ্রাফিতি–
মূলত অধিবিদ্যক আকাঙ্ক্ষার এক বিম্ব চোখে পড়ে।
অনামিকায় ছুঁয়ে দেই বারবার
শরীরের ভাঁজ খুলে রাখে একটি আরেকটির ওপর;
শ্যাওলাগুলোও শরীর বুঝে নেয় মূহূর্তেই–
অবাক হয়ে দেখি…
কেমন আছেন
মৃত্যুর পেয়ালা এই বুক
বুকের ওপর কোমল শিশুর মতো শুয়ে থাকে মৃত্যু
ওষ্ঠ অধরের মাঝে কারো কারো নাম
অক্ষর হয়ে আসে, আর
অস্ফুট উচ্চারণে তার শিশুতোষ পাঠ—
. প্রেমাত্মা মরে গেলে প্রেতাত্মা হয়
. প্রেতাত্মা মরে গেলে প্রেমাত্মা হয়
আত্মারা যা হয় হোক
বোধের অন্তমিলে রাখি দুই চোখ…
এ দেহ নিখুঁত সন্দেহ আমার।
আলোর চেতনায় নিজেকে অর্থহীন মনে হলে
জলের গভীরে যার ছায়া দেখি
তা আমারই তো?
শব্দের নিকটে শব্দের প্রতিরূপ বসালে
শব্দ মুছে যায় শব্দে
মৃত্যুর শৈশবে আমার শৈশব মুছে যায় যেমন।
কেমন আছেন, শব্দ ও শৈশবের দেবী?
আপনাকে মনে পড়ার ক্রোধে
আকাশ আর আকাশ থাকে না…
বিষ-এ-সঙ পদ
অকস্মাৎ আমার যেটুকু অব্যয় তুলে নিলে কষ্টিতে
সেটুকু আমাকে—এইবার
অনবরত আমার অভিমুখে পাঠাতে পারো
নয়তো, পারো যদি, ক্রিয়াপদ ভাঙবার ক্রিয়া করো তুমি।
এত নান্দনিক বিষ-অন্ন-তায়, জোড়ালো এই রাতে—
তোমার মুখোমুখি দাঁড়াবার এত এত ভয়—
যদিবা ছিনিয়ে নাও সবটুকু অব্যয়—
আমার ওইটুকু আমাকে, বরং অভিমুখে পাঠাও
একটা প্রদর্শনী হয়ে যাক—কতটুকু ঝলসালো ‘আমি’।
বাইনারি ডিজিট
পাখি বসে না, পাতাগুলো বিবর্ণ, ফাঁকা—
শুন্যের অন্দরে এমন একটা বৃক্ষের দিকে এগিয়ে যাই।
তোমার মতো বৃক্ষটিকে ভুলে কখনো মানুষ মনে করি…
যেন একজোড়া চতুর হাতে
বুকে আঁচড় কাটবে এমন ধারালো নখ আছে দশটি
বড় কথা—আছে তার পুরোনো-প্রাঞ্জল মেধা
আছে প্রাণ আর বিভ্রমের দাগ। অথচ…
একটা ফুঁ-র কাছাকাছি সে-ও কেমন বাইনারি ডিজিট!
যখনই ছুঁতে যাই আঙুল হতে শুধু সংখ্যাই খসে পড়ে।
ভেনাসপর্ব
১
রোজ বৃষ্টি থেমে গেলে অবিনীত অলক দেখা যায়
কে তুমি নারী, অলিন্দে চোখ জুড়ে থাকো সন্ধ্যায়?
নিঃসঙ্গতার সঙ্গী হয়ে যখন ছুঁয়ে দেখো জলের আশ্বাস
তোমার ভেতরে নিখুঁত ছবি, তখন– তুমি ক্যানভাস।
২
ওষ্ঠের নিভৃত আহ্বানে যখন নিকটে যাই—
তোমার নগ্ন-নিষ্পাপ চোখে আমি দেখি নীরবদহন চিতা
ক্রমশ বদলে যায় বোধের দিগন্তে লেপ্টে থাকা রঙ
আমি বারবার ফিরে আসি পরাজিত মেঘের মতন
৩
ভেনাস, চেয়ে আছো আমারই মতো আকাশের দিকে নিশ্চয়?
এ তো বিরুদ্ধ অস্থিরতা কিম্বা অনুষ্ণ পিপাসা, নিখোঁজ ভালোবাসা নয়।
আমাদের চাওয়াগুলো সীমিত— সময়ের ব্যবধানে
বলো তো নগ্ন আকাশ এসবের কতটুকু জানে?
৪
এক পা এগিয়ে গেলে দু’ইঞ্চি স’রে যায় মাটি
জীবন এমনতরো দুঃখের কোলাজ দেখায়
স্পর্শবিহীন তবু নির্বিকল্প যাত্রায়— যেনো পাশাপাশি নির্বাক,
ভিন্নদৈর্ঘ্যে আমাদের মৃত আলকেমি, এই যে এখন—
আদিগন্ত বিষাদ ছড়ায়…
অনুবাদ, তোমাকে
তুমিই অনুবাদ হয়ে আস আলাদা শরীরে
এবং আমার প্রেম নিয়ে আসে অভিন্ন পরিস্থিতি
ঋতবর্ণ এই জীবন, হিম রক্ত কল্লোলে ভাসিয়ে নিচ্ছ…নাও—
আমি জেনে গেছি, প্রতারক আত্মার বারোয়ারি ক্রন্দন।
চোখের স্থানে চোখ রাখলে ভীষণ জলকেলি হয়
কখনো দুঃখবোধের ঘুমে তোমার দিকে ধাবমান তোমাকে দেখি
নিজেকে চুরি করে নাও। কোথায় রাখ তোমার সমস্ত বিউটি-ফুল?
নিরুপায় আমিও আমার পাশে—খুব পাশে বিমূর্ত হই
গ্যালিপ্রুফে অমার্জ্জিত সংশোধন হয় নামের।
তখন ভালবাসব না বলিয়া
এত এত ঘুমের পরে
সেই তো ভালোবাসার কাছেই মাথানত করি
গাছ, পাখি… এবং মানুষের পৃথিবীতে।
আর তুমি তো সেই—অনুবাদ হয়ে আসবেই
আলাদা শরীরে…
আমি গোপন চিরকুটে পুনরায় লিখব—ঘনিষ্ঠ হও।
ফড়িং জীবন
ঠিকানার উৎসমুখ হতে যেই-না সরে আসে
. বিমূর্ত ফড়িং
মাটিগন্ধা তার নিরন্তরে মিশে যাই যেন নিমেষেই
নিজেকে এমন ভুলতে বসি যেন কোথাও কোনো
স্মৃতিচিহ্ন থাকে না আর
বেখেয়ালি আমাকে একদম মনে রাখতে পারি না
সমস্ত স্মৃতিজুড়ে তখন
. একটা আকাশগঙ্গা
. একটা ভীষণ অচেনা শরীর
এত যে সম্মোহন জানে—ওই শরীর—কে ও?
কোন আশ্বাসে ডুব দেই—আমি ওর বুকে ডুবে যাই?
এই ছেঁড়াফাঁড়া পৃথিবীতে আজও কোনো কোনো প্রাণী
নীরব বেদনাগুচ্ছ খুঁটে খুঁটে খায়
. আত্মীয়ের লাশ বুকে নিয়ে ঘুমায়
ওই যে শরীর—ও কি অমন কেউ—
. আমার সবটুকু শব বুকে নিয়ে বাঁচে?
বোধয় ইঞ্চিখানেক গভীরে সাইরেন বাজে—
এতটাই দূর মনে হয়
. এতটাই দূরে অনুভূত বোধের কঙ্কাল
কী করে হাসে—কী করে ভাসে—
. কী যে দুর্বোধ্য ফড়িং জীবন!
আমার ওই অচেনা শরীর কী যে করুণ আশ্রয়
অক্ষরে অক্ষরে আমি কার কাছে বলি?