বৈশাখের সনেট
আনার-দানার মতো ফাটে আওয়াজ তুলে নারী
খরচৈত্রদাহে পোড়ে শস্যহীন বিরাণ গতর
এই দেহে রেখো না তোমার বীজ শস্যের কান্ডারি
ছুঁয়ে দেখো চরের নরোম কাদা পাষাণ পাথর।
মেঘ ভাঙো মেঘের ঘর্ষণে বিদ্যুৎ জ্বলুক দেহে
ঢালো রস, ভেজাও, মন্থন করো, যেন হই কাদা
দিও না সুদূরে ঠেলে পাণ্ডবের দ্রৌপদী-সন্দেহে
দাও প্রেম, অমৃত রসের ধারা, নারীর তাগাদা।
সর্বংসহা নারী হয়না উর্বরা বিশুষ্ক কর্ষণে
বুকের আকাশ থেকে তুমি ঢেলে দাও প্রেমরস
ভালোবেসে ভেজাও মাটির খাই প্রবল বর্ষণে
নরোম গতর ছুঁয়ে দেখো সুখে কতটা অবশ।
হে বৈশাখী ঝড় কঠিনেরে ভাঙো নরোম আঘাতে
পাথর উর্বরা হয় শুধু বর্ষণের নীল রাতে।
আপন কে তোর
বাহির আমাকে খুব টানে
ভেতর ভাঙিয়া আমি দাঁড়াই বাহিরে
গোপনে গোপনে মন কেমনে পটায় সে কে জানে?
আমার ঘটনা যত সে-ই তো ঘটায়
হাঁটায় আনন্দ এতো, যতদূর হাঁটি তত বাড়ে বহুবিধ পথের ধারায়
আমিও ছড়িয়ে পড়ি তাই
কেউ বোঝে না নীরবে কেন রোজ ফাটি।
পথের দু’পাশ দ্রুত ছোটে
মাঝে মাঝে দলবেঁধে একা হয় খুব, পথগুলো,
পথের ওপর তারা হঠাৎ খাড়ায়
কত শত পথের গোপন রেখা পথেই হারায়
দেখি ফুল, পাখি, মাছ, নদী ও বৃক্ষের কোলাহল
ঢেউয়ে ঢেউয়ে দোলে মানুষের ঢল।
কামস্রোতে ভেসে যেতে দেখি কত শোকের শহর
ঘাটেরা জাহাজে চড়ে, ছুটে যায় দূরে দূরে, ঘাটের বাহিরে
দালানেরা পথে নেমে এসে হাঁটে মন্দ্রলয়ে মানুষের দেহের ভেতর
বুদাপেস্ট, ভিয়েনারা কাঁটাতার তুলে দিয়ে ধুয়ে ফেলে রক্তমাখা হাতের বাহির
জলজ হাওয়া খেতে বাহিরে বেরিয়ে পড়ে শীতের বিকেল
. ম্রিয়মান দানিয়ুব নদীটির তীরে।
ঝাউবন হেঁটে হেঁটে চলে আসে লোকালয়ে ধূসর বিকেলে
স্টিফেনপ্লাটজে ওরা নেচে নেচে ছড়ায় সবুজ।
বাহির আমাকে শুধু টানে?
ভেঙে দেয় ঘর দূরের বৈশাখী ঝড়।
ভেতর তখনো বাজে হায় গহন গোপন গানে
চুপচাপ মগ্ন হই ভেতরের অপার সঙ্গীতে
সকল বাহির বাজে, বেজে ওঠে ফ্রাংকফুর্ট, ফের্নে ভলতেয়ার, পাহাড়ি শীতে।
ভেতরে বাহির বাজে বাহিরে ভেতর
আমাকে ডাকিয়া বলে আপন কে তোর?
নাই
আমিও গাড়িতে চড়িয়া বাড়িতে যাই
আমার কিন্তু গাড়ি নাই
বাড়িতে গিয়া দেখি ওইখানে বাড়ি নাই
যেই নারী ঘরের দরোজা খোলে
এখানে-ওখানে খুঁজি, কোথাও সে নারী নাই
উঠানের বৈশাখী বাতাসে যাহার পাকনা দাড়ি দুলিতেছে
তাকে দেখিবার লাগি আয়নাতে রাখি মুখ
আয়নাতে কোনো দাড়ি নাই
যেই মুখে দাড়ি ছিল সেই মুখ নাই
যেই দেহে মুখ ছিল সেই দেহ নাই
হায় হায় আমার কি কেহ নাই?
‘আমার’ কী?
‘কী’, কী?
আমারও নাই
কী-ও নাই
কিছুই নাই
আসলে নাইও নাই…
খালি সারাদিন হাত বাড়াই, হাতড়াই
যদি কিছু পাই…
কোথাও কি আছে কিছু?
‘কোথাও’ নাই ‘কিছু’ নাই।