সন্ধান
নদীকে কথা দিয়েছি—
নয়তো বালির সঙ্গেই হতো স্নানের সম্পর্ক!
আমার ছায়া এখন সখ্য গড়ে
শুয়ে পড়ে বালির শরীরে।
মসজিদ আর গির্জার পথে যে ব্যবধান
তাতে যাতায়াত করে উদার রোদ আর সহনশীল ছায়া
সে পথে দাদাজানের প্রাণপ্রিয় পাখি উড়ে গেল
আমার সন্ধানী চোখে জমা হয় আকাশের মেঘ।
দাদাজানের জীবনের সঙ্গে মিল দেখে—
বটবৃক্ষের শেকড়ের সন্ধান করি
বাতাস তৈরি করে শীতল আবহ
রৌদ্রতাপে ক্লান্ত-শরীরে দাদাজানের হাতের স্পর্শ কী!
কালের সাক্ষী আমার এ জনপদ
রোদ বৃষ্টির সঙ্গে ঘাম আর কামের সম্পর্ক গড়ে!
স্বীকার করে পূর্ব-পুরুষের পদছাপ, নিঃশ্বাস আর প্রশ্বাসের দায়
এ মাটির সঙ্গেই অশ্বখুরের কথা হতো—আক্রমণের নকশা আঁকত সময়
আমি চিহ্ন খুঁজে খুঁজে বিজয়ের পথ সন্ধান করি।
বৃষ্টি
ইদানীং সূর্য পিপাসা মেটাতে বিরামহীন হামলে পড়ে পুকুরে, নদীতে, সমুদ্রে। নিখুঁত শোষণে পানি আকাশে নিয়ে যায়—রূপান্তর—মেঘের কন্যা—তুলে দেয় বাতাসের হাতে। মেঘ ভাসে অখণ্ড আকাশের শরীরে—দেখে, ক্ষুদ্র বিমানের ছুটে চলা—পৃথিবীতে আলো-ছায়ার লুকোচুরি খেলা। জমিনে ঘর্মাক্ত প্রথমার নিঃশ্বাস পুরো রুমে হেঁটে চলে—প্রথমা দখিনার জানালা খুলে—প্রকৃতির নির্মমতা—নির্বাক গাছ—মৌন পাতা—দাঁড়িয়ে আছে সটান বাতাসের অগোচরে—তন্দ্রাচ্ছন্ন গাছে চড়ুইয়ের হাহাকার চলে। মেঘ কন্যা—শুষ্ক আর বিষণ্ন প্রকৃতি দেখে নেমে আসে জমিনে—বৃষ্টিরূপ নিয়ে—মাটির সঙ্গে মিশে সংগোপনে—গাছে এসে পাতার ধ্যান ভাঙে—শেকড়ে যেয়ে গভীর চুমু আঁকে। কিছু চড়ুই লুকিয়ে পড়ে পাতার আড়ালে—কিছু আশ্রয় নেয় প্রথমার জানালার ওপরে। বৃষ্টি ছাদে আছড়ে পড়ে নিঃসংকোচে—পূর্ণ অবয়ব নিয়ে। নিত্য গরমে প্রথমার পায়ে জড়ানো নূপুরের অস্থিরতা ছিল—ভিজে—শীতল পরশ—নেচে ওঠে সারাদেহে। প্রথমার খোঁপা-চুল ভিজে—উন্নত গ্রীবা ভিজে—পাতলা জামা ভিজে—মসৃণ পায়ের পাতা ভিজে…। বৃষ্টি ঢুকে যায় জামার ভেতরে—বৃষ্টিও স্নান সেরে নেয় কুমারী বুকে, পিঠে, নিতম্ব আর ঊরুর সন্ধিক্ষণে। অপ্রতিরোধ্য বাতাসও শরীর স্পর্শ করে জামা ভেদ করে—বাতাসে বৃষ্টি ভেসে বেড়ায় প্রথমার দেহে।
পত্র
মর্ম—স্পর্শকাতর চিরপথ!
নিভৃতে—যে বোধ এসে ধাক্কা লাগে
তা আলোকগুচ্ছ শব্দে সাজানো মর্মপত্রের কপি
ধুলোর কোরাস—কিন্নর বেশে, সুগঠিত হামলা শেষে
বুক কতটুকু ধূসর করে?
প্রকৃতির উন্মাতালপত্রে অধিক পরিচিত হয় রাত
ছায়া, বুঝিয়ে দেয়—ধৈর্যের দিনলিপি নিভৃতে গাঢ় হয়, সমৃদ্ধ হয়
রাত—ঘন আর কালোকে সুন্দর করে
তাতে যে পত্রের প্রকাশ ফুটে ওঠে তা আলো-আঁধার কেটে উজ্জ্বল রঙ আনে।