নাগরদোলা
বুকের ভেতর দীর্ঘশ্বাসের শব্দ শোনো
এটা থেমে যায়: যখন থেমে যায় নিলয় অলিন্দ।
প্রতিটি দীর্ঘশ্বাস আমাদের শ্বাস নেওয়ার কথা মনে করিয়ে দেয়—
চোখের পলক পড়ে, আমরা বুঝি না
ফুসফুসে অবিরত চুইংগাম ফোলে—চুপসে যায়, বুঝি না
দীর্ঘশ্বাস কোনো শ্বাস নয়, তবু বোঝা যায়
প্রতিটি দীর্ঘশ্বাস মনে করিয়ে দেয়—বেঁচে আছি।
শুধু বেঁচে থাকাটা যাপিত জীবন, জীবন নয়
জীবন একটু আনন্দ আহ্লাদও চায়
প্রগাঢ় জিহ্বায় হাওয়াই মিঠাই হয়ে মিলিয়ে যেতে চায়।
বুনো ফুলের সুবাসমাখা নক্ষত্ররাতের মাধবী হাওয়ায়
আত্মনিবেদনে ডুবে থাকা বিশুদ্ধ বিরহ চায়—
একটা পরিপূর্ণ জীবন নিজের সাথে মীমাংসিত কথোপকথন।
কানের দুপাশে হাত দাও, করতলে বাতাস খেলাও
কিছু শুনতে পাও? তবে শোনো—
সব সুর খেলা করে ওখানে, মনমতো তরঙ্গ খেলাও।
চোখের পাতার নিচে পৃথিবীর সব সুন্দর
বন্ধ করো আঁখি, রঙের বাজিতে মনকে পোড়াও
জীবন ওড়ে, অসীমে ওড়াও; জীবন ডোবে, অতলে ডোবাও।
কলিকালের কাসুন্দি
হৃদয়ের চোরাচালান বেড়ে গেছে: গাছ কেটে তাই মানিপ্ল্যান্ট টবে
রমরমা স্মাগলিং ঝাঁ ঝাঁ দুপুরের রোদে
প্রেয়সীর বুকের গলিতে মোটা চালের গুদাম বসেছে
ডাল-আটা-পেঁয়াজের রমরমা কালোবাজারি চলছে।
বুক পকেটে মুঠোখানেক চোরাই চাল রাখব বলে
জমিয়ে রাখা গোলাপগুলো জুতার তলে চলে গেছে
প্রেমিকার ভ্যানিটিব্যাগ থেকে মেরে দিয়েছি আস্ত একটা সুগন্ধি
নাকজুড়ে তিলকাবু ধানের গন্ধ ভাসে
সত্তুর টাকা চালে ভাত খায় কে, এখন থেকে পায়েস হবে!
একটা কালো চশমা কিনব ভাবছি: স্মাগলার হতে হবে।
রোহিঙ্গানামা : ২০১৭
লাল হয়ে ওঠেনি নাফ নদী
তবু হিমশীতল নীরবতা
সরু স্রোতে ভেসে ওঠে
কালচে—নীলের রোহিঙ্গা মাছেরা
সামনে মৌসুম
শিকারে বারণ আছে
তাই পদ্মার ইলিশের বাজার চড়া
কুতুপালং আর উখিয়া আড়তে বাড়ছে আনাগোনা
মগের মুলুকে ওড়ে অবিরত কালো ধোঁয়া
মাজারে মাজারে সতর্ক সংকেত
চেকপোস্টে সেনা প্রহরা
নাফের তলদেশে হেঁটে বেড়ায় ডুবে যাওয়া
মনুষ্য—পোনারা
সত্তুর হাজার গর্ভকে বর্ম দেয় এই বাংলা—
জয় বাংলা।
বিয়েমেলা
নয়া ঢাকায় বিবাহ সংবর্ধনাগুলোকে আসলে ঠিক বিয়েবাড়ি বলা যায় না
চকমকে আমন্ত্রণপত্রটাই সর্বোচ্চ পাওয়া
পয়সা খরচের ছাপ থাকে কিছুটা তবু অরুচিকর
ব্যস্ততার ছাপও কম না।
তারপর বাকিটা একবিংশ শতাব্দীর কাঙালিভোজ: নঙ্গরখানা
আসেন, খানা খান, ধুমধাম চলে যান
দালানগুলো মরিচবাতির কাফনে মোড়া, নিষ্প্রাণ, সুনসান নীরবতা,
বদ্ধ বাতাসে খানিকটা ডিজে চলে চাকাম চাকাম
ফ্লাশে ভাসে ক্যামেরা, আকাশজালে ছবির মহড়া, লাইক কমেন্টসে ওয়াহ ওয়াহ
ঢাকার বিয়েবাড়ি মানে ‘শুধু’ বিছানায় যাওয়ার লাইসেন্স শো করা!
তারচেয়ে বরং একে বলি আমরা বিয়েমেলা।
দিব্যদৃষ্টি খুলে
মরে গেলে ওরা বলে ওপরে ভালো থাকবেন মশায়
আর আমি তো দেখি সব মরা নিচে চলে যায়
গলে যাওয়া লাশ কবরে পরে রয়, পুড়ে ছাই হয়,
বাতাসে ভষ্ম ভাসে, নীরে ডুবলে মীনে পায়—
তবু ওরা সাজে, বাতি জ্বালে সোনালি প্যাগোডায়!
রঙিন মদিরায় সুখের পেয়ালারা চুমুকে চুমুকে ফুরায়।
হিমঘরই একজন মৃতের জন্য টেকসই জায়গা
ফ্রিজটা খোলো, ডিপ ফ্রিজটা;
থরে থরে সাজানো মাছ আর মাংসের পোটলা
তুমি আর আমিও কী এর থেকে খুব বেশি আলাদা!
চড়া দামে পৌষের ঠাণ্ডা কাটায় রাশিয়ান ভদকা
আরো দামে হিমকে কেনায় ভল্টে জমানো লাশটা।
সৎকারে শোক নেই, শুধু গুছিয়ে নেওয়ার বাহানা
কূলখানি, খতম কোরানে নগদ চুক্তি—বাট্টা
প্রতিটা মৃত্যু যতটা না শোক তারচেয়ে বেশি উৎসব
যে যায় শুধু সেই হারায়, বাকিরা পেটপুড়ে খায়;
শরতের উৎসবে নির্জলা হুইস্কিরা শুধুই স্মৃতি উড়ায়।