বিশ্বায়ন
ভোগ ও নষ্ট পুঁজির বিশ্বায়নের ধাক্কায়
নষ্ট রাজনীতির অসুস্থ প্রতিযোগিতায়
তুমিও কম যাওনি সখি
আমিত সেই নব্বই থেকেই মরা নদ
জমে থাকা জলে ফাংগাস জমে এখন
পানাফুল
সেই ফুলেও যে কত কইতরি শৌরভ দেখতে আসে,
তবুও আমি স্থির জলাধার
এখনো কিছু অক্সিজেন অবশিষ্টতায় ফুল ফোটাই।
তোমাকে দেব ভেবে।
উন্নত প্রযুক্তির উচ্চ ফলনশীল খামারিরা
আর্থ-সামাজিক, আত্ম-উন্নয়নে পশু খাদ্য বানায় আমাকে।রক্তাক্ত হই। কিছু বলি না
নব দম্পতির বিবাহ বাসরে আরাম তোষকে
অধিক মুনাফার লোভে পানা ও কেটে তুলায় দেয় ভেজাল।আমাকে কাটে
ভূতের শরীর যেখানে কাটে, সেখানেই অধিক কাণ্ড জন্মায়।
আমার গাঙ ভরাট করছে আমাকেই উত্তোলন করছে
তোমার বিবাহোত্তর ফ্ল্যাট নির্মাণের জন্য
তবুও তোমাদের আমাকেই দরকার
আমি নীরবেই তোমাদের সঙ্গমচিত্র দেখি ও আঁকি।
সাম্রাজ্যবাদ
সেই কবে রোপিত হয়েছিল, অতি সবুজরশ্মি রক্তিম প্রভাতে।
শোণিতের চেতনা-ধারায়, শিরা-উপশিরায় আজও বহমান।
সেই বহমানতা ক্রনিক হতে হতে নীলাভ রশ্মিতে রূপান্তরিত হয়ে
আজ আকিয়াব পাথর।
আকিয়াব পাথর জানে ক্রমশ রূপান্তরের যাতন-যন্ত্রণা কী।
তাবৎ দুনিয়ায় কোনো শল্যবিদ,
বিজ্ঞানী এখনো নির্ণায়ক যন্ত্র আবিষ্কার করেনি।
জন্মেছি এ বঙ্গভূমে শ্রেণীসংগ্রামের বিপ্লবকালে।
বেহাত হতে সময় লাগেনি বিপ্লবী চেতনার জনস্বপ্ন।
সেই থেকে রক্তের রন্দ্রে রন্দ্রে দ্রোহের প্রভাব।
প্রতিবাদ সংগ্রাম আমার জমজ ভাই।
আপসহীনতা আমাদের আজন্ম স্বভাব।
গোলাকায়নের বেগুনি জালে প্রতিযুদ্ধও
আমাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয় চতুর সাম্রাজ্যবাদ।
উদারীকরণের নামে পণ্যায়নের মনোপলি বাণিজ্যের
একক দামামা বাজে এশিয়া আফ্রিকা লাতিনের দেশে দেশে।
সাম্রাজ্যবাদ মানুষের মুক্তির সব পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে আজ।
শান্তি আসে না
বোবা দেয়ালে পোস্টার হয়ে লেগে থাকি
দ্রুতলয়ে হেঁটে যায় মিছিল রাজপথে
সমস্বরে স্লোগান ধ্বনিত হয় বজ্রকণ্ঠে
শ্বাস-প্রশ্বাসের জলাভূমিতে ফোটে না পদ্মলোচন
শীতল হাওয়ারাও দোলা দেয় সুন্দরী ফেনাফুলে
পরিত্যক্ত ঘোষিত করেছি যাদের
সেখানে কেউ কেউ ছোটে মুত্রঘ্রাণ পেতে।
গুবরে পোকারাও আসে তামাকের ক্ষেতে
পরাগায়ন প্রজনন মৌসুমে কীট-পতঙ্গ ছোটে
ফেনাফুলের নিষিক্ত মধুরেণু চুষে ওড়াউড়ি করে
বিষাক্ত জনন প্রজননের জালবিস্তার করে বিশ্বায়নের
তুবু
মিছিল হয় মিছিল আসে, শান্তি আসে না।
আমি মানুষ, দাস না
হাসপাতালের বেড়ে ব্যথাতুর দেহ
সচল মস্তিষ্ক নিয়ে যায় ব্যাবিলনে
শামসেত তাবরেজিকে মনে পড়ে বার বার
মনে পড়ে রুমির জীবন, একাকিত্বের কথা
রুমি ও চরম নিঃসঙ্গ ছিল,
গড্ডালিকা সমাজ প্রিয় পুত্রকে রেখেছিল দখলে
আহ বিধির কী নিয়ম!
গুরু হত্যার সাথে রুমির সন্তান জড়িত
কী চরম বেদনায় ব্যথাতুর মন,
অমন কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে প্রোটন পরিমাণও
দ্বিধান্বিত নয় কবির হৃদয়
আত্মজার প্রয়ানে টলেনি রুমি
পড়েনি নামাজে জানাজা
শামসেত তাবরেজি শামসেত তারেজি
ইশকে আসেকি জপ করে করে
দিল ফানা একা একা
বসরা কি বুঝেছিল? কেন অমন প্রেম দিওয়ানা
সেই দুই হাজার পূর্বের কথা, গ্রিসে বসত করতো
সক্রেটিস নামে এক জ্ঞানের মাস্তানা
সাগরেদ আর ভক্তকুলে ভরা চারদিক
গুরুগুরু করে লভিত জ্ঞান আর সুর সুধা।
বিবেকে যা বুঝতেন তাই দিতেন বয়ান
হটাৎ একদিন ফ্যাসাদ হলো রাজার সনে
শুরু হলো বিচার সভা, বিচারে গুরু পেলেন
রাজদণ্ড
সক্রেটিস সত্য বিবেকে অবিচল থেকে মেনে নিলেন রায়।
অতপর দ্বিধাহীন চিত্তে
অমিয় হেমলক ডগডগে পানে পেলেন অমৃতের স্বাদ।
সভাসদ শাগরেদ শুধাইলো তারে
জীবন বাঁচাতে গুরু, করেন দফারফা
গুরু দৃঢ়চিত্তে বলেন
আমি সত্য আমার বিবেক সত্য
ক’টাদিন বাঁচার জন্যে চির সাধনা
নিমিষেই বিনাশ করতে নাই।
এই আমি, আমিও তাই
বিবেক ও আবেগ মানুষকে পবিত্র রাখে
বুদ্ধিসর্বস্ব মানুষের অর্থ-বিত্ত-ক্ষমতা
সাময়িক যশ-খ্যাতি দেয় এনে
কিন্তু মনুষ্যত্বের বিজয় আসে না।
আমি মানুষ
রাজনীতি-ক্ষমতা-মোহ-খ্যাতির দাস না।
কবিতা অর্চনা
কবিতা জলস্নান রুদ্রস্নানে যায়
কবিতা হেসে খেলে দৌড়ঝাঁপ দেয়
কবিতার পাঠক-ভক্তরা মুখবইতে দেখে
চিরকুট পাঠায় শব্দের সাথে কবিতার আত্মীয়তার
উত্তরও আসে, এ খবর রটে যায় সরস্বতীর কানে
সরস্বতীর সাথে কবিতার চির বৈরিতা
সে সইতে পারে না কবিতা পূজারিকে
দেবদূত আসে মর্ত্যলোকে ব্যতি ব্যস্ততার কূটচালে
তড়িতাহতের মতো ভক্ত ছোটে দিদ্বিদিক
কবিতার চরণে কাব্যার্ঘ সমর্পণে বাসনা ভক্তের
সরস্বতী চায় কাব্যজ্যোতির পাঠোদ্যান
ভক্ত চায় কবিতার মুখরূপ চরণ-বসন রূপজ্যোতি
কবিতা ও সরস্বতী সতিনিদেবীর হিংসায়
কাব্যপূজার বন্দনা কবিতা বাসনা
হলোনা
হলোনা
কুফল
এসেছে শীত
ব্যথায় কন কন, ভঙ্গুর হাড় কড় কড়, পেশী ঠন ঠন
শৈল্যবীদের উদার প্রেস্ক্রিশন
সবুজ চায়ের সাথে দুই টেবিল চামচ ওয়াইন মিশ্রণ
বিধি ও বিধানে হালাল ও হারামের নেই পরিমাপ
অন্য পৃষ্টায় লেখা আছে জীবনের মাপঝোক
আমি, ঔষধি কবিরাজের নাতি
উত্তরাধিকার সূত্রে তা জানি
আলকেমির সাগরেদেরা নিমরাজি
মাদুলিবিহীন পকেটে
শুভার্থীরা আসে না নিকটে
যন্ত্রণা সয়ে যাই নীরবে
জানি আমি, জানে আমার দেহ
জেগে থাকে রাত, পড়ে না পলক চোখে
চার দেয়ালের জেল খানায়, ফি-বিহীন
নীরব হজমের, প্রশিক্ষণ কোর্সে
আমিই চৌকন শিক্ষার্থী
খিল লাগাও দাঁতে দাঁত
মগজ সচল যতক্ষণ
নিশ্বাস বন্ধ, প্রতিবাড়ি প্রতিক্ষণ
পেশী করো টাইট, মুষ্টিবদ্ধ হাত
আঁধার চোখের ঘোলাটে চাহনি
নিথর দেহে আমি কিছু বুঝিনি
বেশ নিয়ে নিলো জবানবন্দি
আদর্শ অলিক বাস্তবতা
নীতি, নৈতিকতা সুদূর পরাহত
সুগন্ধী আতর মাখা কালো কোট
জরির নকশা আঁকা কাশ্মিরি শালে
অনুদানের ট্রেড়মার্ক সিল জ্বল জ্বল করে
পা নাচায় মঞ্চে বিজিত শকুন, নেতার আস্কারায়
ধুর
সব শালা মান্দারচোদ, সাম্রাজ্যবাদের দালাল।