বিভক্তির পাঠশালা
আবহাওয়ার পরিবর্তনের পূর্বাভাসের অনুকূলে একদিন
আমাদের পাকা ধানক্ষেতে
উড়ে এসে জুড়ে বসেছে আগ্রাসী পঙ্গপাল,
ওপর থেকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেছে সারিবদ্ধ তালগাছ,
আর আবদুল আলীমের গান শুনে অভ্যস্ত অনিচ্ছুক বাতাস বয়েছে
কোঁ কোঁ—উগ্র উল্লাসের আওয়াজ,
সেদিন তুমি আমি আমরা কী করেছি?
ফসলের আগাম ভাগাভাগি নিয়ে আমরা
চারহাতে ছিঁড়েছি পুরাতন হালখাতার পাতা;
এটা তো আগে থেকেই চোরের দেশ: ছিঁচকে চোর
সিঁধেল চোর, পুকুর চোর আর তার
সর্বশেষ সংস্করণ হচ্ছে ব্যাংকচোর;
তাই কুকুরপোষা আমাদের চৌদ্দ-পুরুষের
অভ্যাস ও ঐতিহ্য, এটা তুমিও জানো;
মনে আছে—সন্ধ্যার SWOT analysis শেষে
ঢিল ছুড়ে আঙিনায়, বছর কয়েক আগে
সাজু চোর ঢুকেছিল আমাদের বাড়ির ভেতরে?
তো সে-রাতে আমরা কোথায় ছিলাম?
ফাও কলহে ক্লান্ত আমরা তখন
শুয়ে ছিলাম এক বিছানায় ভারত-পাকিস্তান;
কূটনৈতিক ব্যাগে মুড়িয়ে একদিন মহিম ডাকাত
চিঠি দিয়েছিল সুহৃদীয় আবদারের ভাষায়:
‘দুধেল কালো গাভীটি আমাদের চাই যে বন্ধু,
আশা করি, দোস্তালির ইতিহাস মনে রেখে
আমাদের না করবেন না এবারও!’
আমরা কি নিকটস্থ থানাকে জানিয়েছিলাম?
আমরা কি গ্রামবাসীকে লাঠিহাতে
সান্ধ্যপাহারা দিতে অনুরোধ করেছিলাম?
না। সেদিন আমরা কে আগে তাকে পক্ষে টানবো,
সেই বার্তা নিয়ে ছুটে গেছি কাপড় উঠিয়ে
বিপদসীমার অনেক ওপরে; আমাদের দেখে
হেসেছিল ঝুঁকে আসা ত্রিকালাভিজ্ঞ আকাশ:
‘হেই তোমরা ল্যাংটা! তোমাদের ইয়া দেখা যায়!’
যেদিন আমাদের একটি পয়স্তি জমি ছলেবলে দখলে নেয়
ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্থানীয় সংস্করণ সোহরাব মোড়ল,
হাম্বা হাম্বা ডাকে কেঁদে উঠেছিল
আমাদের হালের বলদ—মতি এবং মণি,
মুখ চাওয়া-চাওয়ি করেছিল ঘুটনিপাড়ার লোকজনও,
সেদিন দিয়ারা জরিপ দপ্তরে গিয়া
আমরা আমাদের বদর আমিনদের
গুটিয়ে রাখতে বলেছিলাম গান্টার চেইন:
‘শোনো, মন খারাপ করো না;
আমরা শান্তিপ্রিয়; ফাও কোনো বিবাদে জড়াতে চাই না।’
পিআরএল—যৌবন নিয়ে আজ পেছনে ফিরে দেখি—
সহমত না থাকায় ফ্যামিলি প্লানিংয়ের রুবি আপার
সময়োচিত সুপরামর্শ শুনিনি আমরা;
ফলে তো আজ ঘরে ধরে না,
উঠোনজুড়ে অসহিষ্ণুতার উৎসব,
রাস্তায় জ্যাম, টয়লেটে লাইন,
সবখানেই কামড়াকামড়ি
সারমেয় সংস্কৃতি দখলে নিতে চায়
দাদার পুঁথিপাঠ শুনে অভ্যস্ত দোচালা দহলিজ:
এ অবস্থার জন্যে কেউ কেউ আমাকে দুষে
কেউ কেউ তোমাকেও;
আর আশেপাশের ভাইজান-ভাবিরা
আমাদের বাড়িটাকে
বিভক্তির পাঠশালা বলে ঠাট্টা করে!
পাশের বাড়ির মিনুভাবি, ওপাড়ার হরিদাদা,
সকলেই বলে, বিদ্রোহীকবির প্রতিজ্ঞা নিয়ে মাথায়,
আমাদের পৈকদাদা নাকি খুঁটি ও খড়ে
গড়ে তুলেছিলেন ঘরবাড়ি,
শুরু করেছিলেন নিজস্ব সংসার।
দাদা কি স্বাধীন গৃহস্থালী নামে—
এমন একটি বিভক্তির পাঠশালা চেয়েছিলেন?
দেবযানীর প্রতিশোধ
অভিশপ্ত কোনো এক কালে যে-দিন
মাথার ওপর ছাদ হয়ে উঠতো—
ঝুঁকে আসা নিদাঘের সূর্য,
যে-রাতে স্বাতী ও অরুন্ধতী লুটিয়ে পড়তো
পায়ের পাতা ছোঁয়া অন্ধকারের উঠোনে,
যে-দুপুরে স্নেহভরা কাটারীভোগের থালা
হয়ে উঠতো বমির প্ররোচনা,
যে-সাঁঝে ভালোবাসার ফজলী আমের
বাগান থামাতে ব্যর্থ ছিল—
করোনারোগীর মতো শ্বাসকষ্ট,
যে-প্রভাতে সবুজ অস্তিত্বের আঙিনার
চারপাশে হা মেলে হেসে উঠতো
একাত্তরের গণকবর,
আর ভূগর্ভস্থ ব্যাঙেরা দূর-ভূকম্পের
ঘ্রাণ পেয়ে
গর্ত ছেড়ে বের হয়ে আসতো
ধানের জমিতে,
এবং আরব্য-রজনীর নারীদের মতো
বৃক্ষরা অভিশাপ দিতো
প্রতিশোধপরায়ণ রাজাকে
অথচ তারপরও—
অব্যাহত ছিল একচোখা রাজার অবিচার,
সেইসব দিনে সেইসব রাতে
আলাদিনের ম্যাজিক ল্যাম্পের জিন হয়ে
তোমাকে নিয়ে আসতাম আমি কাঁধে করে—
স্বপ্নীল যমুনার পাড়ে,
ম্যালথাসিয়ান ভিড়ে উপদ্রুত
লোকালয়ের আড়ালে।
অতপর আমরা আবদুল আলীম-নীনা হামিদ
অতপর আমরা পার্থ ঘোষ-গৌরী ঘোষ
আমাদের কবিতা-সংগীত শুনে
ইস্রাফিল নামিয়ে রাখতো শিঙা
এভাবেই আমরা ঝুঁকে আসা কেয়ামতকে
ফিরিয়ে দিয়েছিলাম আসমানে
একদিন যেভাবে করতোয়া পাড়ের
অনার্য বীরেরা
ফিরিয়ে দিয়েছিল আগ্রাসী আর্যদের!
অতপর আমরা দুপুরের চিলেকোঠা
অতপর আমরা অফিসের অজুহাত
অতপর আমরা সাপ্তাহিক অবসরের ব্যালকনি
অতপর আমরা বসন্ত সাঁঝের দিগন্ত
বহুদিন হয়—আমরা আর সেই আমরা নই
তবু আজও আমি যৌথহাতে রোপিত
গন্দম গাছটির গোড়ায় আঁজলাভর্তি জল দেই,
কিন্তু সবুজ সার নিয়ে তুমি সরে আছ দূরে
ফলে গাছটিতে ছাপ লেগেছে বিবর্ণতার;
আর হে প্রত্যাবৃত্ত বাগানের মালিকিন,
উড়ে যাওয়া গানের পাখিরা ক্লান্ত ডানায়
ফিরে এসে জানায়,
সুইচ অফ তোমার বাগানের সেলফোন।
তুমি তো জানো, আমি কোনো দেবতাপুত্র নই;
ইন্দ্রের আশীর্বাদে বেড়ে ওঠা
পুঁড়িক্ষেতের পাশ ঘেঁষে
শিমুলের তুলা কুড়োতে কুড়োতে
অনঙ্গপার হাত ধরে বেড়ে ওঠা
এক বরেন্দ্রসন্তান
তোমাকেই জেনেছিলাম আমার
সবখানি স্বর্গ-মর্ত্য;
অথচ হে গুরুকন্যা,
তুমি কি দেবযানীর হয়ে শোধ নিলে ভুল টার্গেটে!
ক্ষুধা
তোমার সঙ্গে কথা বললেই ক্ষুধা লাগে আমার
কেন ক্ষুধা লাগে? কেন লাগে ক্ষুধা!
তুমি তো ম্যাকডোনাল্ড নও,
কেএফসি নও
রাজশাহী ফায়ার ব্রিগেডের উল্টোপাশে
সহজমূল্যের চাচার হোটেলও নও
অথচ তোমার গলা শুনলেই
ক্ষুধার উদ্রেক করে
অনেক ক্ষুধা—অনেক অনেক ক্ষুধা।
এভাবে কেন ক্ষুধা লাগে আমার?
কেন লাগে এত এত ক্ষুধা !
আমার বেডরুমঘেঁষে ডাইনিং টেবিল
খাবারভর্তি ফ্রিজ
তার পাশে হা করে আছে ইলেকট্রিক ওভেন—
এসো সবজি,
এসো মাছ,
এসো ঠাণ্ড মাংসপিণ্ড,
গরম হয়ে ওঠো!
কিন্তু ফ্রিজের কাছে গেলেই
অমনি ঢেঁকুর ওঠে—ওয়াউ!
তো ইলেকট্রিক ওভেনের
সুইচ অন করে কী করবো!
অথচ তোমার হাসি শুনলেই
সদ্য খেয়ে ওঠা শরীরেও
ক্ষুধা ক্ষুধা প্রতিক্রিয়া হয়!
তোমার হাসি যখন-তখন
অ্যাপিটাইজার হয়ে ওঠে কেন?
আচ্ছা, তোমার গানে কি সমুদ্রের
হাওয়া মিশে আছে যে শোনামাত্র
হজম হয়ে যাবে যা খেয়েছি রাতে
এবং নতুন খাদ্যের জন্য
সিগন্যাল দেবে পাকস্থলী—
চকলেট চাই!
দুধ চাই!
চাই মাংস!
কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে
তুমি যখন ‘হুঁ’, ‘হুঁ’ করো,
আমার রক্তে হরমোন নিঃসরণের শব্দ হয়-
যেন বাতাসের টোকা লেগে
টুপটাপ ঝরে পড়ছে
গাছের পাতায় জমে থাকা ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি!
ভাবছি, তুমি এসে যদি হাতখানা হাতে নিয়ে
গা-ঘেঁষে বসো আর
আমার ক্ষুধায় কিছু না দাও ঝটপট—
মুহূর্তেই ক্ষুধা বেড়ে
হয়তোবা তা হাইপো হয়ে যাবে
তখন আমাকে বাঁচাতে
আমার মুখের ওপর দুধের
বাটি উপুড় করে দেওয়া ছাড়া
আর কি উপায় থাকবে তোমার?
জ্বর
জ্বর আসে—জ্বর যায়
ডাক্তার বলেনি
তবে জেনে গেছি—
প্রিয়তম—দিন নয়
এইদিন-
থার্মোমিটার হাতে সাদা অ্যাপ্রন-পরা নার্স।
মাফ করো মেডিনোভা
মাফ করো স্কয়ার-ড্রাগ ফ্যাক্টরি,
ভুলে যেতে চাই
তাই—
আমি আর চাই নাকো—
দীর্ঘশ্বাসে তপ্ত কোনো জ্বরের দুপুর!
এই তো জীবন
তুমি কি তাহলে হারিয়েছ স্রোত, নদী?
ঢেউ ঢেউ চুমু ভাঙে নাকো তাই পাড়
ভেসে যাবো ভেবে আসা এই অন্ধকারে
পিপাসা নিয়েই ফিরে যাই—রেখে দাড়।
হয়তো তুমিও জিতে গেলে কোনোখানে
বেঁচে গেলো খুব হিসাবের হালখাতা
বাজেটের ঘরে ক্যালকুলেটর মন
গণিতের গাছে হিসাবে হলুদ পাতা।
যারা বিবেচক—যারা সৎ ও সংসারী
তারা কেনে মেপে কাঁচা মরিচের ঝাল
আমি গাঁজাখোর হাটভাঙা হাটুরিয়া
ঘরে ফিরি চুমে বয়েসী চাঁদের গাল।
মাতাল হরফে এঁকে দিয়ে যাই আমি
সাঁঝের ঊরুতে অবৈধ আলোর উল্কি
মর্নিং শিফ্টের ভিজিটিং প্রফেসর
বলে দেবে এই আলো-আঁধারির ভুল কী।
সুখের শরীরে বারোয়ারী এঁটো ঘ্রাণ
আমি চুমে যাই বেদনার গোল নাভি
তুমি দেখাওনি ব্যালান্স শিটের ভাঁজ
আমিও চাইনি ব্যাংক-রিজার্ভের চাবি।
কারা বিচক্ষণ আর কারা বোকারাম
সে রায় দেয়ার নেই কোনো হাইকোর্ট
জীবন যদি-বা হয়ে ওঠে উটপাখি
বালুতেই সুখ খুঁজে নেবে তার ঠোঁট।
জঙ্গলায়ন
দ্যাখো—এক থাবার নগ্ন সাফল্যে উজ্জীবিত আরও
এক থাবা; উভয় ক্ষেত্রেই থাবাগুলো সংখ্যাগরিষ্ঠতার
আর তাদের আঘাতে স্বভূমে সমুলে উৎপাটিত
বাতাসের সঙ্গীত শুনে বেড়ে ওঠা দুই ভূগোলের
সংখ্যালঘু বৃক্ষরাজি যারা দিয়ে এসেছে ফল ও ছায়া,
শোভা ও অম্লজান, দিনের পর দিন, যুগের পর যুগ।
কী দোষ তাদের? হায়, তাদের পূর্ব-প্রজন্ম নাকি পড়শী
ভূগোলের আমবাগান ছিল অপ্রমাণিত কোনো এক কালে!
অতএব তাদের শাখায় থাবা, সমূহ শেকড়ে দাঁত!
মানুষ নেকড়ে হলে বৃহত্তম গণতন্ত্রও জঙ্গল হয়ে ওঠে।
হে মেয়ে, ভালোবাসাও একটা কাজ
যখনই ফোন করি, ‘হ্যালো ডিয়ার, হাউ আর ইউ!’
রাজু জল্লাদের মতো হাত লাগায় অজুহাত—
‘জরুরি ড্রাফ্ট করছি…!’
‘স্যার সালাম দিয়েছেন…!’
‘মোবাইল কোর্টে আছি..!’
ফেল!
বিষাদের ম্যানিলা রোপে ঝুলতে থাকে
অনুরক্ত সময়ের লাশ!
বিশ্বাস করি তাই ফোন করি আবারও
আবারও কাজ—ভিন্ন কোনো নাম
কাজ! কাজ! কাজ!
হে ছেলে, ভালোবাসাও একটা কাজ—
কোহিনুর—খচিত মাথায়
মহাসাম্রাজ্যের ভার নিয়ে
একথা বুঝেছিলেন
ভারত-ঈশ্বর শাজাহান;
শুধু একখানা বিসিএস-মার্কা চাকরি করে
একথা বোঝো না তুমি!
ও পিএসসি, ও পিএটিসি,
ঢেলে সাজাও তোমাদের
পরীক্ষার সিলেবাস, ট্রেনিং মডিউলস!
চুম্বন নিয়ে লেখা যে-কবিতার সকল চরিত্র কাল্পনিক
এবং সেই তুমি এই আমাকে অবহেলা করারও সাহস পাও। সুযোগও।
ফলে—মাঝে মাঝে কমা, ড্যাশ, সেমিকোলন, ব্রাকেট ইত্যাদি।
আমি তো উত্তর-ঔপনিবেশিক প্রেমিক,
আমার ব্যাকরণে কোনো ফুলস্টপ নেই;
কিন্তু হে প্রাচীন পাঠশালা,
দাদির কলম নিয়ে হাতে তুমিওতো বসাতে পারো না দাঁড়ি!
তুমিও বোঝো, এই উদার প্রেমের অকাল মৃত্যু শুধু আমাকেই
রাজ্যহীন করবে না, সদ্যস্বাধীন তোমাকেও করে তুলবে—
চলার শুরুতেই বঙ্গবন্ধুহীন বাংলাদেশ।
নদী চাও অথচ উজান থেকে নেমে আসা বানকে ভাবো
নাজায়েজ জল! তো তুমিই বলো—
হাজী দাদার জার থেকে জমজমের পানি নিয়ে কি
কোনো যমুনা বানানো যায়?
নদীর জলে ঝর্ণা মেশে, বৃষ্টি মেশে;
মেশে ময়লা, মাটি; আরও কত কী!
সব নিয়েই শুদ্ধ স্রাতস্বিনী।
জীবনটা খাঁটি সোনাও নয়, শুধু খাদও নয়,
খাদেও সোনায় সোনার অলংকার।
চিঠির উত্তর দাও বা না দাও, ভালোতো বাসোই;
মুখে ‘না’ ‘না’ শব্দ নিয়ে গাল পেতে দাও—
আমার তৃষ্ণার্ত ঠোঁটের সামনে;
এবং অর্থমন্ত্রীর মন নিয়ে আমার গালেও বরাদ্দ দাও
চুম্বনের বিশেষ বাজেট; প্রথম কিস্তি ব্যয়ও তাৎক্ষণিক।
তবু কেন যে চুম্বনকে অনুরাগের চাঁদাবাজি বলো!
হে মেয়ে, তুমি তো কবিতা ভালোবাসো; বাসি আমিও।
কিন্তু আজও বোঝোনি, কবির চুম্বন গোপনে
তাজমহল গড়ার যৌথ ফান্ড। আর এই ফান্ডে
বাইরের কন্ট্রিবিউশন গ্রহণীয় নয়,
হোক সে বন্ধু বেশী বিশ্বব্যাংক অথবা
লুটেরা স্থানীয় কোটিপতি।
প্রণয়ের ফান্ডে আমাদেরই দিয়ে যেতে হবে—
ভালোবাসার সিকি, আধুলি, নোট।
মাননীয় অর্থমন্ত্রী—রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মহোদয়,
দেখুন—
গরিবের ঘামে রোদ লেগে চিকচিক করছে ভ্যাট,
মুক্তবাজার অর্থনীতির দাগ টানা পথ ধরে
দিন দিন বেড়ে চলেছে করের পরিসীমা;
বাড়ুক্! শুধু এটুকু মিনতি—
দয়া করে আমাদের চুমুর ওপর ট্যাক্স বসাবেন না!
রাতরঙা ব্যাগ হাতে এক্সটার্নাল অডিট যাক মেগা প্রজেক্টের বাড়ি!
নক্ষত্র পর্ষদ
আজ আর তারা কেউ তারা নয়, তথাপি নক্ষত্র পরিচিতি;
মেঘবিহীন আকাশে নয়, কুবের নামের একটি সড়কে
রচিত তাদের কক্ষপথ; বলা যায় ধুলিছোঁয়া ছায়াপথ;
কিন্তু সূর্যের রৌদ্রশপথ ভুলে গিয়ে উজ্জ্বল সূর্যের নিচে
তারা এখন আঁধারের প্রমোটার; কী হয়েছে আলি বাবার—
এ প্রশ্নে মুখ খোলে না কোনো স্বাতী কিংবা অরুন্ধতি;
পরাবাস্তবতার চিত্রকল্প হয়ে কাজির কুরসিতে বসে চল্লিশ
চোরের প্রযোজক; আর মরজানার জন্মের ওপর নিষোধাজ্ঞা
লাল রঙের নোটিশ হয়ে ঝুলে আছে মাটিছোঁয়া দিগন্তে;
রাতের শরীর দেখে হাসে ডালে বসা সুমাত্রার বাদামি উল্লুক
গোপাল ভাঁড় নেই, এদের উলঙ্গতা নিয়ে গল্প রচবে কে?
অথচ এখানে বসে দরকার মতো উদীয়মান তারকাদের
কক্ষপথ দেখাতেন, পকেটভর্তি আলো দিয়ে সড়কে আজমে
তুলে দিতেন আকবরীয় আকাশের নক্ষত্রগণ, এমনকী
রাহুগ্রস্ত দিনরাতেও ম্লান ছিল না তাদের মহৎ নাক্ষত্রিকতা।
শূন্যস্থানের ঐশ্বর্য
ফিতা মাপা প্রাত্যহিকতায় দু’দু গুণে চার—
এই জ্ঞান নিয়ে—
বেহিসাবের বাগিচায় গুনতে যেও না
উদ্ভিদের অনুপাত;
সঙ্গমই শীর্ষ বিন্দু;
শিশুটি কি বিকলাঙ্গ
না কি বীর্যপাত শুকিয়েছে
গড়িয়ে ধূলায়—
মুছে দাও এইসব আঁতুড় জিজ্ঞাসা।
আনন্দ তো ফুটেছিল—
সেই তো আনন্দ; অতপর ড্রপসিন;
অতএব চিরজীবী হোক—
এক শূন্য মহাস্থান;
পূরণের দায়—
যদি থাকে আদৌ
খেলাপি ঋণের মতো ঝুলে থাক
চির কৌতূহলী ক’টি চোখের পাতায়!