ছায়া
আমি হাঁটলে আমার ছায়াও হাঁটে
আমি হাত তুললে সেও তোলে
বাহ দারুণ তো!
আমি দুঃখ পেলে বিমর্ষ হই
কিন্তু সে হয় না…
আমি কাঁদলে সেও কাঁদে
কিন্তু তার কান্নার কোনো শব্দ নেই।
চড়ুই দুপুর
এতপথ হেঁটে হেঁটে
অন্ধকার পার হয়ে দূরে…
কোনো নির্জন গোপনে
একটি পাখি ডেকে যায়
নিজস্ব সুরে…
পড়ন্ত যৌবনী রোদে
পিপাসার্ত ঠোঁট খোঁজে
ছায়া ছায়া শীতল শীতল
ঘুম ঘুম দুপুরে
এক ঘটি জল—
শান্ত দেহ—মনোবল।
ফাঁকা বাইপাস
লু হাওয়ায় নুয়ে গিয়ে
যান্ত্রিক কোলাহল নিয়ে
চলে এঁকেবেঁকে—
কত পথ,কত নির্জন অরণ্য
পিছে রেখে,ফেলে দীর্ঘশ্বাস।
শুধু একটি চড়ুই দুপুর
তোমার—আমার
ফিরে আসে না আর…
সূর্যটা
কাশফুলের মতো খুব হালকা কষ্ট পাওয়ায়
সাদা কাপড়ে বেঁধে ফেলেছি হাত
খরগোশের পশমের মতো মোলায়েম ভাবে
. কেটে যায় রাত
জোসনা লেগে থাকে কুয়াশার গা’য়।
খেলাচ্ছলে অনেকেই বালুচরে লেখে নাম
নদীর ঢেউ এসে সেগুলোও ধুয়ে নিয়ে যায়
. ক’জনই বলো
. নামগুলো
. জানতে পায়!
সূর্যমুখীর মতো লাল সূর্যটা
একদিনের জন্য হলেও আমার—
চাই-ই চাই…
সৈয়দপুরের পথে মনোট্রেন
মনোমাঝে শব্দ প্রবাহিত হয় নানাভাবে—নানাকল্পে—
নানা উপমায়; পু…ঝিক…ঝিক…শব্দের মতোন
হৃদয়ে ট্রেন আসে, যায়…দূ…রে…
শ্যামল চোখ নিয়ে এক বৃদ্ধ বলে—বাবা মনোট্রেন কী
সৈয়দপুর যায়!
আর আমি তখন নিজ আত্মার সাথে গোপন
পরামর্শ করি, আরে বলে কী বাবায়—
মনোট্রেন কী সৈয়দপুর যায়
ও
দয়াল—
মনোট্রেন কী সৈয়দপুর যায়…
স্মৃতি, নদীপথে
শূন্যমিলনে ভেসে আসে মৎস্য
. কিশোরীর স্বর…
আর মনোপথে গভীর অতল জলে
লাফ মারে চকচকে রুপালি ইলিশ
পদ্মাপারের ফর্সা মেয়েটি
হয়ে যায় গোপন গুঁইসাপ
সান্ধ্য কুয়াশায় ভেজানো পত্রগুলো
অদূরে ভেসে যায়
. বিবর্ণতায়…
স্পেনফুল
[ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকা স্মরণে]
আইএসএস থেকে তোমার স্পেন দেখতে কেমন লাগে!
তোমাদের অলিভ গাছগুলি—
পাতা কুড়ানি মেয়েটিকে কী অতদূর থেকে দেখা যায়!
তোমার সবুজ দুচোখ এখন কী দেখতে পায় ঘোড়সওয়ার–
বদমাশ লোকজন অথবা গীটারের গহীন পথ ধরে
যাওয়া—আসা করা মরণ!
স্পেনফুল—
তুমিবিহীন এখনও মেয়েটি কুড়িয়ে নিচ্ছে পাকা পাকা অলিভ
হয়তো-বা কেউ তোমার স্মরণে অলিভ বাগানে
গাঁথছে জংলিফুলের মালা—
পাড়া-মহল্লায়-রেস্তোরাঁয় তোমার কবিতা পড়ে শোনাচ্ছে
কোনো তরুণ কবি।
আর তুমি—
খুব অভিমানে বসে বসে
ছুঁতে যাচ্ছো ভোরের শিশির!
প্রস্তুতিপর্ব
আমরা বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে
ছাতার ব্যবহার শিখেছি
বাদামি ডাহুকীঘুমে রোপণ করেছি
আমাদের যাবতীয় স্বপ্নবীজ
আগুন ব্যবহারের অনেক আগে
আমরা রমণীদেহে আগুন জ্বালিয়েছি–
যখন মানুষেরা পরতো পাতার পোশাক।
আর আমরা ধীরে ধীরে আকাশি নীলে
জ্যোতির্ময় আলোয় জ্বলতে জ্বলতে
পৃথিবীতে এসেছি অনেক পরে।
তারপর বিবেচ্যভাবে ঘুরতে ঘুরতে
অন্তহীন লোহিত নদীতে পুড়তে পুড়তে
বৃষ্টিতে ভিজতে শিখেছি।
চিররহস্য
এতরাতে কে কাঁদো তুমি!
দূর থেকে তোমার কান্নার শব্দ শোনা যায়।
আর আমি তো নক্ষত্র আলোয় অপেক্ষারত
এতরাতে কেন কাঁদো তুমি
আমার চেয়েও বেশি কী তোমার ক্ষত!
এই রাতে আমি কেন কাঁচা হলুদের গন্ধ পাচ্ছি
দূরের মেয়ে—
তোমার কান্নার রঙ কী হলুদ!
এতরাতে কে কাঁদো তুমি!
কে!
কে!
ভয় ও নির্ভয়ের কবিতা
ভ্যাঁসাল দিয়ে মাছ ধরার মতো ছোটখাটো দুঃখগুলো
ছেঁকে আনি দূর-দূরান্ত থেকে মনের আয়নায়
কোথায় কখন কী ঘটেছিল সবকিছু—
ধীরে ধীরে মনে পড়ে যায়…
খুব ছোটবেলায় ঘুমের ঘোরে ছোট ছোট
কুণ্ডলি পাকানো কালো দৈত্যগুলো
বড় হতে হতে কখনো—
সরষের মতো ছোট হয়
আর মনের মধ্যে তখনই শুরু হতো—
. জ্যাকেটভর্তি ভয়।
আর এখন যেকোনো যুবক
নির্ভয়ে দাঁড়িয়ে রয়…
পাতালঘরে
যেন আমি ধীরে ধীরে নিচে নেমে যাচ্ছি
একটা মায়াবী ঘন অরণ্যের ভেতর দিয়ে
আনমনে হেঁটে যাচ্ছি;
সামনে একটা লোহিত নদী আর ঘন কাশবন
তার ভেতর থেকে কী রকম একটা শব্দ টের পাচ্ছি
যেন নদীর ভেতর থেকে শব্দরা উঠে আসছে
যেন কাশবনের উপরে কবিতারা ভাসছে…
আর আমি উন্মাদের মতো ডেকে যাচ্ছি নিজস্ব স্বরে
মাটির নিচ দিয়ে যেন আমি চলে যাচ্ছি—
. পাতালঘরে…