পড়ে থাকে অহঙ্কার
সেই মনডাঙার কথা মনে পড়ে; যেখানে আমরা তুলনা করেছিলাম লাল আর শাদার; সবুজের সঙ্গে নীলের; বেদনার সঙ্গে দুপুরের; তারপর রং আর দুপুর এসে মিশেছিল আমাদের হাঁটু আর বাহুর ভঙ্গিতে। উতলা মনগুলোর স্বভাবই অমন; অতল গভীরে খুঁজতে চায় মনেরই স্বভাব, উজানে ছেড়ে দেয় পাতার ইশারা, ঢেউ-এ ঢেউ-এ অস্থির হয় পাড়ের মাটি। ‘ভাঙন’ না ‘ভাসান’ মানেই জলের পিঠজুড়ে ডিঙিদের উথাল-পাতাল আওয়াজ। আমরা মনডাঙার আকাশ থেকে নৌকাদের বর্ষারূপ দেখি, দূরগুলো চোখে মিলিয়ে যায়। আমরা একদিন ভৈরবে ভাসাবো মনডাঙার ডিঙি। তুমি মনে রেখো পূবালী বাতাসের স্বভাব।
ফড়িঙের পাখা পোড়ে
পেছনে কৈশোরের স্মৃতিময় রেলস্টেশন আর শৈশবের প্রিয় ব্রহ্মপুত্রের শীর্ণ বুক পেরিয়ে শীতস্নিগ্ধ এক রাতে পূর্ণিমার জলে গা ধুয়ে ধুয়ে হাঁটছি একা-নিজ গৃহের দিকে। শিশিরাক্রান্ত শর্ষেক্ষেত আর শাখা নদীর কুয়াশা ভেজা বালুময় জ্যোৎস্নামাখা পথে হাঁটছি শুধু একা…কুমারীর সতীত্বের মতো পূর্ণিমার পবিত্র তীব্র-তীক্ষ্ণ-স্বচ্ছ-ঘন আলোয় হাঁটছি একা…হাঁটতে হাঁটতে হাঁটতে হাঁটতে ভুলে গেছি পথের দূরত্ব, ভুলে গেছি হ্যারিকেনের ম্নান আলোয় ক্লান্ত চোখে জেগে থাকা জনক-জননীর কথা…নিঃশব্দ পথে হাঁটছি একা…জ্যোৎস্নার গভীর বিপন্ন আলোয় ভাসছে প্রান্তর, ঘুমন্ত গ্রাম, স্কুলঘর…আমিই শুধু একা বাড়ি ফিরছি…পূর্ণিমার অবসন্ন আলোয় হেঁটে হেঁটে…
খোলা চোখ
পাখিরা একটি নিরিবিলি সন্ধ্যা চায়। আর তুমি চাও শুধুই একটি পাখি সন্ধ্যা। নদীর তলায় ফুটে থাকে সন্ধ্যার রং। তুমি কম্পিউটার স্ক্রিনে দেখো গোধূলি। যখন যাচ্ছো বিকেল ঝাপটে ধরেছে তোমার খোলা চোখ। সরিষার পাতায় সারতে পেরেছো কী তা? ভর দুপুরের ছায়ারা মায়া হয়ে বসতো তোমার শরীরে, তখন নদীর চোখে বসতো বালিহাঁস- তুমি দেখো নি। জানি, ভেজা নারীর চেয়ে সুন্দর নয় কিছু, কিছু নয়। জানি, তোমার খোলা পিঠ থেকে রোদেরা চুষে নিয়েছে জল।