বালিকাজ্ঞান
বৃষ্টির আদরে ধুয়ে যাবে কি আলতার স্বপ্ন! ধূপের গন্ধ
ভরা রাতের রূপালি কাচভেজা স্মৃতি তো ভুলিনি—
শাবকের পথভুলা গল্প লেগে আছে অনুভূতির অধিবেশনে
বৃষ্টির বিনম্রতা আমার দিকে তাকিয়ে সেই কবে থেকেই
কাঁদছে—বালিকাকুঠির; প্রথম দরজা খোলার আনন্দে।
বালিকা—চোখে কী লেগে আছে দুধফড়িঙের গোল্লাছুট;
বৃষ্টি পার্বণের ঘনসন্ধ্যা?
কসাইপাড়ার কাঁচা মাংসের গন্ধে যখন
ঘিনঘিনে মগ্ন হাসির ক্যানভাস,
তখনি রাতগুলো ভীড় করে প্রহরীর দীর্ঘ পিপাসায়।
কিসের টানে মিছে প্রেমে অন্ধমহাজন গাইছে উষ্ণগান
বালিকা তুমি কি বলতে পারো?
কেন ভুল করেও ভুলি না তোমার ধানি বুকমাঠের ঘ্রাণ…
বৃষ্টির মলিনতা যদিও না পায় বৈধতা
বালিকা—বিনামূল্যে শেখাব তোমাকে বৃষ্টিসূত্রের শুদ্ধতা
ফেরা
স্মৃতিফসিল নিয়েই নাটোর স্টেশনে দাঁড়িয়ে—একা
বাম পাঁজরে খামচি কাটে—ঘুম হারানো রাত
ঘামফুল ঘ্রাণ নিয়ে দেখি—লোকাল ট্রেনের নীরবতা
দেখি—কংক্রিটের কদমফুলে হলুদ আলোর সার্কাস
স্টেশন মাস্টারের হাতে—সবুজ জোনাকির দৃশ্যকল্প
ধাতব ধূসর রেল আর চাকার যাবজ্জীবন চিৎকার
সময় হারানো হরিণের ছোটাছুটি—বদলে যায়
উপমার উড়ন্ত ক্যানভাস।
জীবন’দা এখনো নাটোরে মগ্নচোখে একাকি হাঁটে
তাই বনলতা সবার হৃদপ্রাসাদে শাদা আলোর মহল
আমার বুকপকেটে
বাউল বাতাসের ভাঁজ আর অপেক্ষার সন্ন্যাস
তখনি গুনগুন করে গায়—বাড়ি ফেরা গান…
দখল
পৌরসভার পার দিয়ে যে পথ চলে গেছে অরণ্যে
সে পথেই কুঠুরি বাড়ি
পাশ দিয়ে সবুজের চাদর জড়ানো নদী
ঢেউয়ের পিয়ানোর সুরে ভাঙে—মাঝির ঘুম মনমঞ্জুরি
পাড়ঘেঁষা বালির বাকলে পড়ে থাকা হারানো মাস্তুল
কেড়ে নিতে চায়—মাছরাঙার শিকার সঙ্গীত
মাঝির চোয়ালে জেগে থাকা জুয়াড়ি জলের ফেনা
দ্যাখেনি—অন্ধপুরোহিত
কুঠুরির উঠোনে হারানো হিজলের পাতা
হালের হ্যারিকেন দিয়ে খুঁজেছিল মাঝি
তা দেখে ফেটেছিল বাঁশের খোঁড়ল;
জংলি পরি—অরণ্য করেছিল দখল…
শোধ
হারানো দিনের হনুমান হারিয়ে ফেলেছে ঘামের ঘণ্টা।
হামলে পড়ে, চোখের চাতালে হলুদ হরিণের চতুরতা
মাঝরাতের মাঝামাঝি খাটের খট্খট্ চালাকি সূত্রকলা
বোঝেনি প্রণয়ের প্রবণতা; রাত্রির গতরে লেগে থাকা ফুঁ
গড়ে কামের শিল্পবোধ—দেহে দেহে হবে পিরিতি শোধ।
বনখাগড়া
স্বেচ্ছাসেবক স্বেচ্ছামৃত্যুকে বাঁধে বাহুবৃক্ষের ডগায়
বিচ্ছেদের বজ্রবৃষ্টিতে ভিজে ফুলপরির একাকীত্ব
থেমে যায়—লকলকে আহাদ, মনের মন্দির মনমরা
তবুও মনোমুগ্ধ হয়ে দ্যাখে—চিলকোঠার চালাকি চিল
আর খোঁপা খোলা সেবিকার চুলে নীল ঘাসফড়িং
বন্য বেদনাবৃত্তের বনখাগড়ার গহীনে পাতে ফাঁদ
সেই ফাঁদে আটকে পড়ে জংলি পাড়ার চাঁদ…
সুগন্ধি সুনামি
নীল ফ্রক পড়া বালিকার বুক থেকে ওড়ে আসা ফড়িঙ
দেহের থরে-থরে সাজায়—রূপালি রোদের ক্যানভাস
কেড়ে নেয়—চোখের সারল্য; দৃশ্যশিকারির সাম্পান।
সমুদ্রপকূলে দিয়েছে কারফিউ—ওড়ে পর্যটকের চোখ
নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে দাঁড়কাকের প্রবাল প্রাণপ্রাচীর
বালিকার ঠোঁটের চাতালে হালের হাওয়া পাল তুলে
মগ্নতার প্লাবনে ভেসে যায়—উপকূলীয় বিলবোর্ড।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে দিয়েছে—দশ নম্বর সংকেত;
বালিকার খোলাবুকের ফাঁদ থেকে ওড়ে আসে সুনামি
আর নিরাপত্তাকর্মীরা জানে না—
তবু কেন পর্যটকরা বালিকা পূজারি…