শকুন
টেকনাফ উপকূলে ঝাউবনে শকুনের দল খোশ গল্পে মশগুল
নোনা বাতাসের ডানা নিয়ে এসেছে সুঘ্রাণ
দূর বহুদূর থেকে ভেসে আসে মৃত্যুগন্ধ
ওই যে আকাশে উড়ে উড়ে চক্কর মারছে সাগর ঈগল
আর কয়েকটা দিন শুধু অপেক্ষার কাল গোণা
তারপর নীল ঢেউ পার হয়ে পৌঁছে যাবে
সাগরে নৌকায় ভাসমান মানুষের মৃতদেহে
একসাথে অনেক লাশের স্তূপে হবে নিরিবিলি ভোজ।
কোথাও মানুষ নেই
কে শুনবে ওদের বাঁচার চিৎকার আকুতি?
আন্দামান থেকে বঙ্গোপসাগর কূলে মানুষ এখন ব্যস্ত
মুদ্রার পেছনে
দাসের বাণিজ্যে
অস্ত্রের দখলে
নারীর নেশায়
হিংসার ভূগোলে
কে কোথায় মরে ঝরে গেলো তাতে কি বা যায় আসে
ডানা ঝাপটায় শকুনেরা আসন্ন মাংসের উৎসবে আনন্দ-উল্লাসে।
এই বুঝি ঢেউয়ে ঢেউয়ে মিশে যায় মুমূর্ষু উদ্বাস্তু প্রাণ
ঝাঁক বেঁধে শুরু হয়ে যাবে ক্ষুধাতুর শকুনের অভিযান।
দেবদারু
দেবদারু হয়ে কবে অঙ্কুরিত হয়েছি সে খবর কে জানে
দাদা বাবা শিখিয়েছে শিরদাঁড়া সোজা করে
সুনীল আকাশে মেলে দিতে সবুজ পাখনা
প্রতিবেশী লতাগুল্ম ঠাট্টা করেছে আমার ঋজু ও দৃঢ় ভঙ্গির জন্য
শিলাবৃষ্টি, বজ্রপাত, ঝড়ের ভাবনা মাঝে মাঝে করেছে বিক্ষত
ছিন্নভিন্ন হয়েছি, আবার মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছি
বারবার মজনু শাহের মতো।
দিনমান কাকের পীড়ন
রাতভর বাদুড়ের নির্যাতন
কখনো ঝঞ্ঝার তুমুল আঘাত
কখনো হৃদয়ে হেনেছে কুঠার
বাকিটা সময় রোদবৃষ্টি শিশিরের আহারবিহার।
আমার আকাশ ছোঁয়া মাথা
মাটির গভীরে মূল বিকশিত
দুচোখ আমার এক দিগন্ত ছাড়িয়ে দশ দিগন্তপ্রসারি।
আমি এখন দেখতে পাচ্ছি তুফান আসছে
দাঁত বের করে বিনাশের আনন্দে হাসছে
তাই এখনো যাদের ভাঙাচোরা মেরুদণ্ড
টিকে থাকার লড়াইয়ে তৈরি হয়ে নাও
উর্বর মাটিতে মাটিতে এবার ইস্পাতের শিরদাঁড়া বানাও প্রচণ্ড।
রূপান্তর
এইখানে মানব বসতি ছিল কোনো একদিন
প্রাণের গুঞ্জনে কোলাহলে স্বপ্নে আনন্দে রঙিন
জীবনের আবাদে বিবাদে জীবনই ছিল মুখ্য
কখনো ভোরের কমলতা কখনো বৈশাখী রুক্ষ
সারারাত শিশিরের স্নানে সকালের শীতলতা
আঁধার অরণ্যে জানি এখন সবই রূপকথা
ইতিহাসে নয়া বাঁক: বসতি জঙ্গলে রূপান্তর
আমাদের শৈশব কৈশোর চলে গেছে তেপান্তর
অনেক মানুষ আজ বাঘ সিংহ ভালুক শেয়াল
আমজাম ধানপাট ক্ষেতে সেগুন গরান শাল
মানুষের সংস্কৃতি সভ্যতা কৃতি বহমান ধারা
জঙ্গলে পশুর নখে ছিন্নভিন্ন বিস্মৃতির পাড়া
দিনভর জন্তুর উল্লাস রাতভর ভোজসভা
কতিপয় লোক ভয়ে ভয়ে জ্বালায় প্রাণের প্রভা
জানি না জঙ্গল থেকে কবে সেই জনপদ হবে
আমরা আবার প্রাণে প্রাণ ছুঁয়ে যাবো কলরবে।
রূপান্তর-২
আমার সামনে হেঁটে আসা এই লোকটা কোমল
কবুতর মনে হতো এতদিন
ধীরে ধীরে কাল ধারায় কিভাবে নিখুঁত শিকারি
সাগর ঈগল হয়ে গেল বুঝিনি তা।
আমার পেছনে ছুটে চলা ওই লোকটা নিরীহ
লাজুক হরিণ দেখেছি জীবনভর
সময়ের বাঁকে কিভাবে হঠাৎ চিতাবাঘ হয়ে
হালুম হালুম করবে ভাবিনি কোনোদিন।
ফুটপাতে বুক টান করা উঁচু মানুষটা এক
সময় সবুজ পেয়ারা গাছের রূপ ধরেছিল
আজকে আমার হাতে হাত রেখে প্রকাশ করল
নিজেকে একটা ক্যাকটাস ঢঙে।
রাজপথে সাঁই করে গাড়ি নিয়ে চলে গেল অতি
পরিচিত জন যাকে মনে হতো শেফালি বকুল
সুবাসের টানে কাছে যেতে মনে হলো আমি
এসেছি ধারালো ফণিমনসার কাছে।
দূর থেকে কোনো কোনো মানুষকে মনে করতাম
ঈশা খা মজনু শাহ মতিউর
কাছে গিয়ে দেখি মহতের নামে কথার কদম আঁকে
আসলে তারাই মুসোলিনী হিটলার হালাকু খাঁ।
অনেক মানুষ দেখেছি ময়না পরিযায়ী পাখির মতন
অগণন লোক কাছে এসে কথা বলেছে কড়ই গগন শিরিষ
দেবদারু নিম বটের মতন
কালের বদলে সেইসব লোক আজকাল যেন
মাছরাঙা চিল ভালুক শেয়াল বিষকাঁটালির ঝাড়।