প্রেম-১
মাফিয়ার মতো একটা রহস্য রাত্রির কুকুর সারারাত ডেকে খোঁজ দিলো তোমার নাকি শাদা কাক-মন খারাপ। সাথে সাথে কলকাতার সমস্ত অলৌকিক টেলি-ফোনবুথ প্রসব যন্ত্রণায় চিৎকার করে ওঠে। হাতে আগ্নেয়গিরি নিয়ে গ্যাং ওয়ারে সামিল বন্ধুরা মাঝরাতে ফোন করে জানতে চায়—‘তার নাকি মন খারাপ?’ আমি আগুনের মাঝে খুঁজি স্যাটেলাইট থেকে বিচ্ছুরিত ঘুমবড়ি। লোরকার সাথে নিরুদ্দেশ কবরে শুয়ে টেনে দি আমার শুক্রাণুভেজা চাদর। আমার ব্যক্তিগত শ্যাওলারা পিকাসোর সন্ধানে চলে যায়—গায়ে তাঁদের চাই নতুন বসন্তের রঙ। মাথার মধ্যে আমার বয়ে চলা নদীতে আমি দেখতে পাই মৃতদেহ স্রোত, সেই মৃতদেহে জমে থাকে সুখী মানুষের গালে বস্তি বানিয়ে রাখা চমকালো জং।
প্রেম-২
তুমি যদি বলো মন খারাপ তবে এই সৎকার করা হাতে বাজাবো ভায়োলিন তোমার মন খারাপের উৎসবে—
তুমি যদি বল মন খারাপ তবে আমার ধারালো দাঁতের বিষে শেষ করে দেব সমস্ত চুতিয়া ভদ্রলোকের গায়ে সুগন্ধির মতো কারাগার—
তুমি যদি বলো উষ্ণতা চাও, তবে এই বিষ সমুদ্রের থেকে তুলে আনব রক্তাক্ত সূর্যের শেষতম বংশধরকে—
তোমার ভালোবাসার উচ্চারণে আমি রাবণের পিতা হব, তোমাকে নিয়ে যাব অন্য কোনো নক্ষত্রের প্রতিবেশী করে, সাথে মদ, সাথে কবিতার ধর্ষিত শব্দেরা—য্যানো অপ্সরা
প্রেম-৩
পাঁচটি সুখী নক্ষত্র দেবদারুবীথি বাঁশিতে ঠোঁট রাখলে তবে পুরনো পোড়া রোদের মতো একটি দাম্পত্য গড়ে ওঠে। তুমি জানো বাইরে যখন বরফ, তখন তোমার বুকের তিলের গভীরে আমার নিজেকে আড়াল করতে খুব ভালো লাগে। কিন্তু তক্ষুনি যখন শ্যাম ডাকে, বলে চলো মানুষের বুকে বুকে অশান্তির বুলেট মেপে গেঁথে দিতে হবে, তখন ভাবি আমি যে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছি চিরকাল। বারবার ভুল মানুষের স্নায়ুতে আমার বন্দুকের চমৎকার উত্তেজনা বেছে নিয়েছে, আমি কেবল চমৎকার একটা খুনি সেজে পার পেয়ে গেছি কাঁটাতার। তুমি জানো লিখতে আজকাল আমার কিডনিতে সংক্রমণ হয়, তুমি জানো এই চল্লিশটি খুন সয়ে যাওয়া চোখ এখন কেবল নতুন জন্মের স্পর্শ চায়, চায় একটি কমলালেবুর মতো গর্ভ। ক্রমাগত এই পুড়ে যাওয়া তালুর ভেতর তুমি একেকটি তামার পয়সা দেখেছ, দেখেছ বুলেট, কাঁকড়ার মতো হাসি, অলৌকিক ঘোড়ার খুরেরে শব্দ। দেখেছ কবরের মাটির মতো আমি তোমার স্তন চেপে ধরেছি, তোমার উরুর মধ্যে আমি নৌকার দাঁড় চালিয়ে একেকটি মহাজাগতিক দিঘিপারের স্বপ্ন দেখেছি। তোমার ঘাড়ের চুলের সাপকে আমি বশ মানিয়ে করে তুলেছি বারুদের হাওয়া-কল।
প্রেম-৪
তোমাকে ছুঁয়েছি আমি যখন সমস্ত সোনা-ঝুরি গাছেদের সন্তান একত্রে ডেকেছে তাঁদের আদিবাসী দেবতাকে
কলকাতার সমস্ত অট্টালিকার গোড়া থেকে কোপ মেরে গড়েছি একতলা বসতি, বসিয়েছি হাসিমুখ ভালোমানুষ গাছেদের উদ্বাস্তু সন্তানদের
তোমাকে ছুঁয়েছি আমি যখন ফ্রাঙ্কফুট বাঘকে বশ্যতা শিখিয়ে আমি ঢুকিয়ে দিয়েছি ফেরি-ওলা ঝোলার গভীরে
ভালোবাসা বাঁধ হলে আমার শব্দেরা রক্তের নদী থেকে বেছে নেবে পরশপাথর
আমার দানবমন এগারো- মাথা খুলে রেখে বেছে নেবে সূর্যের উদ্ধত ফুল
তোমার ভালোবাসা উচ্চারণে আমি বিষমাখা ঠোঁটে বেছে নেবো মৃত্যুর আয়ু
ছত্রিশটি শিকারা মিলে বাদামি স্বর্গের প্রতিটি গলির কোনে খুঁজে নেবে অরণ্যের বাসর
তোমাকে চেয়েছি আমি, পাহাড়ি স্পর্ধার পর যেদিন বাসা খুঁজে ফেরে নদী যাযাবর।