২১
তুমিও কি চেয়েছ এই নিখিল অসুখ!
কাটা কাটা পাহাড়ের মায়া কভু ছাড়া যাবে না। সুনীল ছাত্রত্ব টুটে যাবে তবুও না। জারুল ফুলের চাহনিতে ফেটে যাচ্ছে বুক। এ পথ এখান থেকে শুরু হয়ে কোথায় যে চলে গেছে কে জানে! কোন অন্তিমে তবে প্রিয়ঝু-পাতার বসবাস? পাহাড়ের গুল্মলতা বৃথা যায়! পথের ধারের বুনো ফুলেরাও বৃথা যায়! তুমি যদি না জাগাও আজ পাথরে পাথরে অভিলাষ।
২২
পাগলের বেশ আমি নিয়েছি ক্যাম্পাসে।
লোকে বলে জাফরান কোন পুঁচকে শালা। কে বলেছে তাকে কবি হতে, কে দিয়েছে তাকে পাগলাকাণ্ডের অধিকার। কোথায় যাব বলো! কোথায় কোন ঝুপড়িতে আছে আমার মানব জন্মের সারাৎসার! বলি কি এ শীতে তুমি প্ররোচিত হও। হও ধীর-স্থীর। আসছে বসন্তে আমি শত শত নক্ষত্রের পিতা হব। নখ-দর্পণে ভেসে উঠছে সে সব আলোকিত মুখের তসবির।
২৩
ভালোবেসে দিনে দিনে হয়েছি চড়ুই।
হয়েছি অস্থির। হয়েছি দু’ভাগ। দ্বিখণ্ডিত পাহাড়ের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে পথ। সেই পথ মিশে গেছে চাকসুতে, ঝুপড়িতে। সেই মতো হয়েছি উদাস। তবু হৃদয় খোলেনি মধুমক্ষিকার। তাই বৃক্ষকে বলি না আজ ছায়া দাও। বলি শুধু চড়ুইটাকে ধৈর্য দিও আরও আরও ভালোবাসিবার।
২৪
গোলপুকুরের নিস্তরঙ্গ জলে তুমি ছিলে ঘাই তোলা মীন।
অর্ধেক নিষ্ঠুর ছিলে। অর্ধেক ছিলে তুমি অযথাই উদাসীন। তারছিঁড়া। ভবঘুরে। একদিন অযথাই তুমি প্রহার করেছিলে সন্ধ্যার বায়ুকে। সেই থেকে পুকুরের তীরে গেলে ভ্রম হয়। আমি কি জলাক্রান্ত, না কি জলে ভেজা। আমি কি প্রেমিক, না কি ছ্যাঁকা-খাওয়া সিংহ আমি সিন্ধু-গোছা কেশরবিহীন।
২৫
কখনো কি বাজাবে এই তোমাক্রান্ত দেহমাদল?
ছোট্ট এ ভূমিতেও দেখো পথ হারানোর কত ভয়! তুমি বিনা কী রকম এলোপাথারি ঘুরছে দেখো পথগুলো। একবার তোমাদের ক্লাসে গেলে ফিরে আসার আর পথ নেই যেন। আরও কত বিভ্রম হয়। জারুল গাছের তলে জেগে ওঠে কৃষ্ণচূড়া, জলপাই, না হয় আতাফল। এতসব বিভ্রম নিয়ে, কখনো কি বাজাবে তুমি এই তোমাক্রান্ত দেহমাদল?
২৬
অন্তিমে কি পাওয়া যাবে প্রেম, হৃদয় নিঃসৃত হেমলক?
একদিন এক পাগল আমাকে বলেছিল—‘তুই কি চেয়ারে বসেছিস? না কি দাঁড়িয়ে আছিস চেয়ারের ওপর?’ বসেছি না দাঁড়িয়ে রয়েছি, এ হিসাব মেলাতে পারিনি আজও। এই কথা ভাবতে ভাবতে যৈবন ক্ষয়ে যায়। ক্ষয়ে যায় দুরন্ত পা আর জ্যোৎস্না রাতের রূপালি স্যান্ডেল। তবু হিসাব মেলে না। কেউ কেউ বসতে পারে ঠিকই। কারও কারও ভাগ্যে থাকে শুধুই দাঁড়িয়ে থাকা। বেদনাসুপ্তির পথে কেবলই দাঁড়িয়ে থাকা।