পরাহত পাখির আহত স্বর
ছায়া ছিল যেটুকু মেঘের, তাও ঢেকে দিলো বাজপাখির পালক
করুণাও উধাও কোথাও, চতুর্পাশে সকরুণ অবহেলা
যাদের ক্ষমতার দম্ভে কম্পমান রাজপথ আজ, তারাও একেকটি বাজ!
তাদের তো পাইনি সেদিন! ধূর্ত শেয়ালেরা খুঁজে নিয়েছিল সুগোপন গর্ত!
পিতৃহারা কন্যার ঘোর অন্ধকারে তারা ছিলো আত্মমগ্ন
অথচ পথের দোয়েল-কোয়েল গেয়েছিল গান সেদিন, বুবুর ডাকে—
সঁপেছে বুক রাজপথে, গ্রামে, গঞ্জে, নগরে, বন্দরে
তাঁদেরই আজ দেখি না কোথাও,
খুঁজে পাই না সভা সেমিনারের চেয়ারে,
মিছিল কিংবা শোভাযাত্রার সম্মুখভাগে
সেই সব স্বপ্নোজ্জ্বল চোখের উচ্ছল ডাহুক পাখি ডাকে না আর!
জয়বাংলা স্লোগানে যারা লুকিয়েছিল ইতিহাসের বাঁশবনে
একে একে সকলে অনুপ্রবেশ করছে, কৃতঘ্নের পথধরে
আমার ভয় হয়, নিশিরাতে যদি আবার ডাকে আহত স্বরে পরাহত পাখি,
এই বাজপাখি আবার উড়ে আশ্রয় নেবে বেগম পাড়ায়,
অদূর আগামীতেও কেউ রবে কি পাশে?
মায়া
অগাধ অসাড় অবসাদ
বিষাদের বিষণ্নতা
কালো গহ্বরও অবসাদগ্রস্ত
রাতের ঝোপঝাড়ে জোনাকপোকা ভিষণ প্রখর
জীবনের সঙ্গে জলৌকার মতো প্রাণ লেপটে থাকে
মাথার ভেতর কোনো এক বোধ কাজ করে
মানুষ তবু বাঁচে
তেলাপোকা টিকটিকি আরশোলা গিরগিটি
বুকের মাঝে একটি অশরীরী বোধ
মগজের রন্ধ্রে-রন্ধ্রে বিরিষের মতো শিং মারে
খুব গভীর রাতে আচমকা ঘুমের ঘোরে
কেঁপে কেঁপে মোচড় দিয়ে ওঠে
ব্যথায় টনটন করে দেহ
ধুঁকপুক ধুঁকপুক করে বুক
প্রাণেশ্বরীর মায়া তবু কাটে না।
প্রাণেশ্বরী
পরম প্রিয়তম প্রাণ প্রাণেশ্বরী,
এই জীর্ণ জ্বরাগ্রস্ত জীবনে কেন
জলৌকার মতো আটকে আছ?
প্রাণেশ্বরী তোমার কোনো আত্মমান নেই?
তুমি এত বেলাজ কেন?
প্রাণেশ্বরী আমার
তোমাকে লালনপালন করার মতো
আমার আর কোনো অবলম্বন নেই
জলৌকাও তার ক্ষিধে মিটে গেলে
ঝরে পড়ে দেহ থেকে
কিন্তু তুমি নির্লজ্জের মতো লটকে আছ
শীর্ণ দেহের প্রতিটি রক্ত কণিকায়
তোমার প্রতি এত মায়া কেন?
দেহকোষের প্রতিটি রক্তকণিকায় কি
এমন জৈব-যৌগ রসায়নে গড়া
তোমার বেলাজ মায়া?
যে-মায়ার কারণে
আমি হন্তারক হতে চেয়েও পারছি না।