তোমার অক্ষর ভুলে
পাখি যদি পোষ মেনে নিতো? ডানাও স্বাধীন ভেবে জমিয়ে রাখতো
উড়বার সাধ;
ভাষার পালক জড়ানো কেমন আছ রক্তপাত!
কিছুতেই হারাবে না…তোমার বুকের প্রসারণ—
ভাটিয়ালি সুরে মহিষের ওলান ছুঁয়ে বেজে ওঠে
প্লাস্টিকেরে ভেঁপু…
মিছিলে গুলির শব্দ শুনেছিলে?
আহত হরিণ শিকারের ভয়ে যারা কস্তুরির গন্ধ মেখেছিল—
বাঘের শরীরে বিষ;
জানি, ভাষার বিরোধ তুমি আরও
বহুকাল পুষে রাখবে খাঁচায় বন্দি—পাখির উড়াল।
আজো তোমার অক্ষর ভুলে আমি শুধু নিজের কথাই বলি
ভুল উচ্চারণে…সে কথা সবাই জানে,
তবু—ভুলে গেছি তোমার মন্ত্রের মানে
অক্লান্ত রান্নাঘর
খাদের কিনারে বসে আছে তোমার প্রাণ ভোমরাপাখি—
সে কেবল উড়ছে না, নিঃসঙ্গ প্রাণের কথা ভেবে;
লাঙ্গলের চাষাবাদ ভুলে গেছে চাষি…
দাঁতের মাড়িতে খড়খড়ে মাটি চিবোচ্ছে ট্রাক্টর।
ভাঙনের স্মৃতি চুরমার, চাক চাক শ্বাস ভর্তি ঝরঝরে ধুলো—
পাউডার মাখানো মায়ের ম্রিয়মান হাত টের পাচ্ছি,
পিঠের ওপর ঠেস দিয়ে আছে মোলায়েম তুলো।
উঠোনে মায়ের হাঁটাচলা প্রতিধ্বনি হচ্ছে কিচিরমিচির চড়ুয়ের ডাক,
খালপাড়ে ঝুঁকে আছে সজনের গাছ, আর্তস্বরে ডাকছে ভোরের কাক।
বাবা, একা একা ঘরে ফিরছেন…
বাজারের থলে হাতে উদাসীন আনাজের দর !
রাতের উপোসে ব্যস্ত বাবা ও মায়ের ক্লান্ত রান্নাঘর।
দুগ্ধবতী স্তন
উত্তাপে রুটির মতো ফুলে উঠলাম;
এতক্ষণ স্নিগ্ধ তুলতুলে সকালের নাস্তায় হাঁপাচ্ছ—
তেলছাড়া পরোটার মতো বিক্রি হচ্ছে
সকালের তাপ!
পাখিরাও খুলে ফেলে শরীর গরম, শীতপোষাকের ওম;
উলের নরোম ভোর জ্বলে ওঠে,
জ্বলজ্বলে রোদ ছড়ানো গ্রীবায়—
ধানের সৌন্দর্য দিয়ে গেছে পোকার কামড়…
অশ্রু ও রোদন রেখে গেছ দগদগে দুগ্ধবতী স্তন।
কাশফুল হাওয়া; সে-ও ফণা তোলে
কাশফুল রেখে দিলে দরজার কাছে…
ডোরবেল বেজে ওঠে, নদীতীর জেলেদের
নাও ভেসে আসে।
উড়ে যায় পাখিমেঘ, জি-মেইল ডানা…
আততায়ী হাতে, দাঁতে—দাঁত কষে
কামড় বসায় হানা।
জীবনের মানে খোঁজা জেলিফিস রূপে…
হাত রাখো রাধা আর রমণীর দুধে জ্বলেপুড়ে হও
একাকার ধুপে।
ভাইরাস বুঝে গেছ? অমর বৃত্তান্ত…
জ্বলজ্বলে চাঁদ তুমি, ঝুলে থাক জোছনায় সারারাত
নিরিবিলি হও শান্ত।
বিষাদের স্যুপে উপমা মাতাল হলে…
গোলাপের কাঁটা, লকলকে কাশফুল হাওয়া
সে-ও ফণা তোলে।
সজনে পাতার শীত
গোপনে হলুদ ঢেলে দেই সরিষার ক্ষেতে
হৃদয় জুড়ে ঝড়া শিউলির পাপড়িতে
চুমো খেতে।
হারিয়ে এসেছ হরিণীর পায়ে পায়ে চঞ্চলতা
তোমার নাভিতে পুড়ে যাচ্ছে উষ্ণ শুস্কপাতা।
কাঁটাতারে মিশে—যে দূরত্ব মুছে পারও দিতে;
পুজোর মণ্ডপে কালি সেজেছিলে, কালোকেশে
বাঁধতে রঙিন ফিতে…
বিভোর অতীত তুমি ফেলে রেখে গেছ
পাখির খাঁচায় অন্ধকার;
এপার-ওপার ঢেউয়ের—দগ্ধ পারাপার;
কেমন আছে স্বপ্ন তোমার, হারিয়ে যাওয়া অতীত…
মনে পড়ছে শরীর জুড়ে, সজনে পাতার শীত।
ভ্যানগঁগ একা দাঁড়িয়ে আছেন—
তোমার কথায় বৃষ্টি বিনিময় হলে
বক্ষবন্ধনি আলগা হয়ে যায়;
আঁকা ক্যাভাসে ভ্যানগঁগ একা দাঁড়িয়ে আছেন—
ব্রজমোহন কলেজের মাঠে,
ইলিশের চড়া দাম শুনে শহরের বুকে
পল্টির মুরগি বেশ বিত্রুী হচ্ছে;
মৃত মানুষের হাড়গোড় চুরি করে একদল জীবিত মানুষ
তবু—গোরস্থানে জমি কিনছে সবাই।
এতক্ষণ বৃষ্টিও কাটা ঘুড়ির মতোন উড়ছিল
ঝাঁকে ঝাঁকে যুদ্ধ বিমানের হামলায়;
ভাঙাচোরা পড়ে আছে স্লুইসগেটের মর্চেধরা
দেশে এতো মুদ্রস্ফীতি জ্বালানী তেলের আমদানি;
মৈথুনের মতো আবেগে গলবে তোমার গর্জানি।
ডলার ডিগবাজি দেয়
লাল জবায় চিঠির বাক্স ভরে গেছে
তোমাকে আবার রোদ ঠেলে দেখতে ছুটেছি
ক্যাপসিকাম রঙের দোকানে।
চোখে কম দেখি বলে, চশমার কাঁচে ভেঙে ফেলি
অফিসার্স ক্লাবের মদের গ্লাস ছুড়ে—
ভদকার মতো ঢেলে দেই সূর্যমুখী রান্নার তেল;
রাশান বোমায় মমি ফাটে, ট্রাক্টরের চাকায়
চেঁচে ওঠে লেনিনের স্ট্যাচু…
ভাঙ্গাচোরা ডানা জাপ্টাচ্ছে বিধ্বস্ত বিমানের ভেঁপু
ধাতব মুদ্রার দাম ক্রমশই—
কাগজের মুদ্রায় বিবর্ণ হচ্ছে ঘামের দুর্গন্ধে,
আর বিশ্ববাজারে ডলারের দামে ডিগবাজি দেয় সার্কসের ভাঁড়।
শহরের আলিগলি ভেবে
বেদনার মধ্যে সুখদুঃখ বসবাস করে,
মোলায়েম শীতের প্লাস্টার দিয়ে ঢাকে
ভাঙাচোরা ক্ষত;
খাদে পড়ে মোটরবাইকের বেঁকে যাওয়া চাকা
নাগরিক কষ্ট ঘোঁচাতে বেজায় ব্যাস্ত এ শহর
পরিচ্ছন্ন কাজে সুইপার কলোনীর মেয়েরাই
তিব্বত স্নোর মতো সুন্দর!
সড়কের পাশে পরিপাটি বোগেনভেলিয়া ফোটে
ফাইকাস ঝুঁরির দোলনায় শহুরে মেয়েদের
ববকাটা চুল দোল খায়
কাঁটাতারের দেয়াল বসা টুনটুনি পাখি।
পুরোদস্তুর সড়ক কুড়োনি মেয়ে
তোমার পাশ দিয়ে প্রতিদিন রাতে আমি
ঘরে ফিরি—
তোমাকেই শহরের আলিগলি ভেবে।
টুথপেস্ট লেখা
লেবুখালি ব্রিজ টপকে শহর পাল্টাচ্ছে ভাড়াটে বাড়ি,
কারখানার ভেঁপুতে ব্যস্ত—
শ্রমিক কলোনি,
পলাশপুর বস্তির শিশুস্বাস্থ্য কেন্দ্র,
ক্যান্সারের এত রোগী,
তবু ডায়বেটিকস হাসপাতালের পাশে
সটান কির্তোনখোলা নদী;
মাঝেমধ্যে খেলা দেখতে দর্শক গ্যালারিতে
ঠায় বসে থাকে স্টেডিয়াম;
মহল্লার চারপাশ ঘুরে এসে দেখি—
দৈনিকের পাতা বিজ্ঞাপন মালে ঠাসা,
জুটমিলের বস্তা বস্তা সাময়িকী চাপে
থেঁতলে বেরচ্ছে টুথপেস্ট লেখা।
আটপৌরে নদী
ছেলেবেলা থেকে তোমাকে নদীর এলার্জিতে
ডুবে থাকতে দেখেছি;
তুমি কুয়াশার জলে,
পাঙাশ মাছের মতো ভেসে উঠতে নদীতে।
কুয়াকাটা বিচে সাঁতার কাটতে,
আর ভেজা শেমিজ পাল্টাতে সাপের খোলস;
অথচ কখনো তুমি কীর্তনখোলা পার হতে
বেদিনীর মতো ঊরু,
প্রেমিকের মুখ দেখি, উত্তাল নদীর স্মৃতি
পাড়ি দিচ্ছে মাঝি…
তোমার জীবনের মতো বয়ে গেছে—
আটপৌরে মরা নদী…
ওপারে অপ্সরী কাউয়ার চর।