গল্পের শহর
অদূরে তাকিয়ে দেখো আঁধারের পাশে
তার ঘুমে মরে যায় গল্পের শহর
ঘুম কেটে ছুটে গেলে বাতাসে বাতাসে
কাহিনি দাঁড়িয়ে থাকে নিঝুম প্রখর
কেউ বাতাসকে চিরে ছড়ালে বকুল
চাইলে গোপনে তাকে ছুঁয়ে দাও আরো
কেউ নাকে পরে নিলে নাকছাবি ফুল
হাতভরে চোখজুড়ে ছায়া দিতে পারো
এইপথে চলে গেলে শিশুদের রাত
কারো বুকে থেমে থাকে সুবর্ণ সন্তাপ
তোমার জানালাজুড়ে প্রভাতের হাত
প্রভাতের হাতে রাখো চোখ আর পাপ
বুকের ভিতর পোষো অক্ষয় আঘাত
এই সত্য জেনে তুমি বাঁধো অভিশাপ
শব্দসম্ভব
শব্দসম্ভব প্রসন্ন ফিরে ফিরে আসে
ব্যাকুল সকাল ভাসে উলম্ব প্লাবনে
প্রাণের আপ্লুত তল উজাড় নির্বাসে
বিজন সন্ধ্যা যাকিছু আয়োজন জানে
প্রথম প্রয়াণে মৃত্যু ম্লান হয়ে থাকে
বালিশের ধবধবে পট আছে পড়ে
দীর্ঘচুলের রেখাটি কেউ পটে আঁকে
শস্যের বনে ঘ্রাণেরা নৃত্য হয়ে মরে
ফুলখেলা অবলীলা মদির অঞ্চলে
বিবিক্ত হেমজলেই ঘাসফুল বিষ
একখানি হাত ছুঁয়ে যায় রুদ্রকালে
আলোময় প্রাণায়াম ভোরের আশীষ
ভোরের বসন উড়ে উতল সকালে
শব্দসম্ভব প্রসন্ন দিয়ে যায় শিস
আপ্তবাক্য
গাঢ় ধোঁয়ার ভিতর খুঁজে নীলকমল
জীবনকে খুঁজেছে সে দেয়ালের কাছে
বন শেষে মাঠ আরো ধূসর শ্যামল
রাখলের অভিশাপ মাঠে গেঁথে আছে
বইয়ের মধ্যে খুঁজে অক্ষর জীবন
রাইফুলের গন্ধে সে ধাবমান ক্ষয়
খুঁজে খুঁজে সে গুটিয়ে নেয় রাইবন
স›ধ্যায় তেরোটি ফুল কুসুমিত হয়
ফুল শেষে ভুল শেষে ক্ষরণের গান
পতিত দিনের প্রান্তে ঘুঘুপাখি কাঁদে
অনুরক্ত হিম করে আগুন স›ধান
পুষ্পবিষ জমা হয় পূর্ণিমার চাঁদে
সপ্তপদী শব্দে বোনা মাঠজুড়ে ধান
আপ্তবাক্য লুকায়িত সায়ন্তনী ফাঁদে
দৃশ্যের বাইরে
দৃশ্যের বাইরে কেউ দৃশ্য দেখে যায়
তার চারপাশে ভাসে ঘ্রাণ চক্রমন
দুধশাদা কীট এসে কালিরোদ ছায়
তার সিঁথি ছিঁড়ে কাঁপে চকিত রাবণ
কারো আঙুলের ফাঁকে সর্বনাম ক্ষয়
নিজে নিজে সাঁঝবাতি নিম অভিলাষ
ঘড়িঝরা সময়ের পাথর এগোয়
শূন্যতার ঘরে কষি অনাবাদী চাষ
কেউ ফিরে ফিরে থির নদী কথকতা
উড়ে এসে পায়ে তার আঙুলের বন
সে ভাবে ঝড়ের মুখে ঢেউচুর কথা
বিষুবরেখার নিচে দাঁড়িয়ে দুজন
দেহ হতে মুছে গেলে সব গোপনতা
ভেঙে দিই পাখিটার নিঝুম কুজন
নিমফুল স্মৃতি
আমাকে স্পর্শ করো মিছিলের ভিড়ে
আমাকে স্পর্শ করো দূর পরমায়ু
নিয়ে যাও হাত ধরে বৈতরণী তীরে
তুমি আমি হয়ে আছি ঘূর্ণিময় বায়ু
আমাকে স্পর্শ করো নিজের ভিতর
আমাকে স্পর্শ করো স্রোতাধীর হাঁসে
বাদামের মধ্যে আমি বাদামের ঘর
সাঁতারের খেলা তার জ্বলে তালশাঁসে
আমাকে স্পর্শ করো কবন্ধ ধাঁধায়
আমাকে স্পর্শ করো জাহাজের গতি
গতিমুখে সবুজ গান একা বেজে যায়
নিশ্বাসের আড়ে পোড়ে যতিছিন্ন রতি
আমাকে স্পর্শ করে ভাঙো কামনায়
ঘুরে ঘুরে নিমফুল উড়ে যাও স্মৃতি