নষ্টকাল
দুঃশাসন
এবং হাড়-যত পোক্তই হোক
শ্মশানে কিছুই এখন
আঙরা থাকে না আর
অমর হবার চেষ্টা, বৃথা তাই!
কালগুণে, আমরা তো মূর্তির কাঁধেও
চাদর চাপাই; সে কি এই জন্যে যে
তার গাও শিরশির করে!
হাঁটু মুড়ে থাকা
ছড়ি অনুগত
কিংবা চিৎকার-জাত ইতিহাস
সে কি সিঁদুর পাবে
লগ্নভ্রষ্টা হবে—সাতপাক দূরে থাক
ও অন্ধচোখ
আমাকে পবিত্র করো মন্তরে মন্তরে
অন্তরে জমা হয় ক্লেদ—জমে নিবিড়
অন্ধকার। অধরে ফুটলে পারিজাত
—তাকেও নিবৃত করো নিশ্চুপ! আঙুলে
অথচ কী কামাতুর আমার নাসিকা!
রুদ্ধ করো লোবানের করুণ ধোঁয়ায়
মন্তরে মন্তরে নত করো লুব্ধ দৃষ্টি
আকাশ দেখার সব বাসনা আমার
নতমুখ আমি, যখন ধূলোয় মুক্তি
খুঁজি; সেখানেও মন্তরের শেল, ফোটে
চূর্ণবিচূর্ণ করে আমার ভূতল। কী
বৈরি চরাচর! গোলাপ ভুলিয়ে মন্ত্র আমায়
কাঁটায় মুগ্ধ করে—এ-যে অন্ধ!
অন্ধ চোখের বন্ধ-খোলায় প্রভেদ কী?
সত্য ও কাক বিষয়ক জটিলতা
স্কুল-জীবনে আমি ও ছোটখালামণি ডাকযোগে বাইবেল পড়িতাম
কিছুদূর পড়ার পর চমৎকার লাল মলাটের দুইখানি ‘নতুন নিয়ম’ পাইলাম
আমাদিগকে খুবই আমোদিত দেখিয়া আম্মাজানের কণ্ঠে উৎসাহের সুর—‘নতুন
পুরাতন সব নিয়মই জানা দরকার’; কিন্তু পিতাজির ভিন্নমত, বলিলেন, ‘যা কিছু
ঈশ্বরের, তাহাতে নতুন-পুরাতন নাই।’
দিনকতক বাদে, আমরা কয়-মা-পুতে প্রেরিতদের মুখে একই কথা বারবার
শুনিলাম—‘তোমরা কাহারও কিছুই ধারিও না, শুধু পরস্পর প্রেম ধারিও’
পিতাজি বিচলিত হইলেন—না-জানি ইহারা কাহার-না-কাহার প্রেমে
খেলাপি হইয়া যায়! কহিলেন, ‘সন্দেহ নাই ইহাতেও সত্য আছে বটে! তবে
সবটা ঠিকমতো আইসে নাই; এসব কাকসত্য—বিভ্রান্ত হইও না।’
‘অসত্য, অসুর নির্মূল করে সত্য ও সুন্দরের প্রতিষ্ঠায় আমি যুগে যুগে আবির্ভূত
হই’—এসব বাণীও কি তবে কাকের মুখাপেক্ষী হবে! আমার নানিমা
একেবারে ভিন্নস্বাদের ফোড়ন দিলেন
ঘরোয়া বিতর্ক, কিছুক্ষণ নীরব থাকিয়া মুলতবি হইয়া গেলো; মিটিলো না
এখনো কে বা কাহারা মাঝেমধ্যেই আমার ভেতর তর্ক জুড়িয়া দেয়
সৌভাগ্য! নানিমাও সাথে সাথে ফোড়ন কাটেন—কোন সত্যটি কাক-নিরপেক্ষ
এবং কোনটি কাকের মুখাপেক্ষী হবে?
তারপর আমার মা, নানিমা, খালামণি—একে একে সকলকে মুক্ত করিয়াছি
বাইবেল পাঠের সেই ডাকবাক্সের নম্বর লুপ্ত হইয়াছে; কাক সত্য হবে না কি
সত্য কাক? কূটতর্কে বিস্তর দায়িক হইয়াছি শুধু কাহারো নিকট
হৃদয়ঘটিত কোনো দেনা নাই…
বাংলাদেশ একটা ড্রেন
ড্রেন! অনস্বীকার্য শর্ত নগরীর
যেমন বাংলাদেশ—সরু একটি ড্রেন মাৎস্যসাম্রাজ্যের
প্রাচীন, মজা একটি ড্রেন
মায়ানমার, একটি নির্মিয়মান ড্রেন; ভারত পাকিস্তান থাইল্যান্ড
যদিও বহতা নয় আর
পুঁজ বর্জ্য বমন বয়ে নিতে অক্ষম
সনাতন সকল উদ্দেশ্য সাধনে এরা অক্ষম
শুধু বাহ্যত খুব চাকচিক্য, বড় জাঁক
অলক্ষ্যে এরা শুধু ঝিনুক বিয়োয়—মুক্তোগর্ভ সব ঝিনুক!
বয়ে নিয়ে যায় ভাটিতে; একেবারে বহির্নোঙরে
কী অসম্ভব ক্ষীপ্রতায় সেখান থেকে তারা উজোয়!
আর স্বয়ংক্রিয়ভাবে পৌঁছয় মহাজনের হাওলায়
অতঃপর খুব স্বতঃস্ফূর্ত, সরব বিতর্কে
মাতে—হোয়াইট হাউজ, ডায়েট, ডাউনিং স্ট্রিট…
—কতটা দক্ষতায় এদের বহমান রাখা যায়
ঈশ্বর দূরে দ্যাখে কম
আজ থেকে বাইফোকালে দেখা শুরু
ডাক্তার বললেন—উচিত ছিল আরও আগেই
অভয় দিলেন, ব্যাপারটা খুব সাধারণ
কেউ কাছে, কেউ-বা দূরে দ্যাখে কম
চিন্তিত হওয়ার কিছু নাই
এই কাঙালের দেশে—পঁয়তাল্লিশ বছর!
কম তো দ্যাখোনি বাছা! যাকগে, কম দামে চশমা নিলাম
গ্লাস-ফ্রেম সাকুল্যে তিনশো টাকা, নাকের দু পাশে বিস্তর ফাঁকা
মোটামুটি আড়াল হলো, খুব অল্পেই। ভয়ে ভয়ে ছিলাম
না-জানি ছুরি-কাঁচি লাগে
ড্রপ দিলেন, দিনে তিনবার—একফোঁটা করে
আরও সান্ত্বনা, আমি নিকটকানা
অন্তত ঈশ্বরের মতো নই
ও শর্মা দূরে-তো কিছুই দ্যাখে না প্রায়
তার যা দৃষ্টির ছিরি!
তাতে মাইনাসে সবচে পুরু লেন্স…আর
ও রকম দূরকানা চোখে—যে কোনো ডাক্তার
লেমন-ড্রপ দেবে
ধূলোপ্রকল্প
আলগা দিয়ে ধরি; আবার কখনো ছাড়ি
ঠিকমতো ধরা হলে পর—এই শুরু
এই শেষ এরকম লঘুগুরু চালে
প্রকল্প খ্যালে সরকার। যেন-বা মনখুশি
শিশুদের—ভাঙার জন্যই গড়ে খেলাঘর
গড়তে আনন্দ যা, ভাঙায় তারচে বেশি
দাদারা কী সুরসিক! গাহেক-মাত্রে জানো
কানামেঘে বৃষ্টি হলো দাদা—কাদা সামলাও
আর ধূলোর জন্যে নতুন প্রকল্প লিখে আনো
ঠিক যেমত শর্ত সমঝোতা স্মারকের
মেঘপর্বে, একান্ত বাধ্য, অনুগত মেঘ
এবং বৃষ্টিপ্রকল্পে চাই ছাতা-বরদার
অতঃপর ‘বায়ুপ্রকল্প’—লেখ, ঝরাপাতা
এবং প্রচার করো বৃক্ষ যথাতথা—
আপন আপন প্রাণ হেফাজে রাখো
বর্ধিষ্ণু এবং কুঠার সহিষ্ণু হও; আর
কাঠুরে-সমাজ থেকে সাবধানে থাকো