কবি ও নেতা
কত কত মানুষ যে আশপাশে সামনে-পেছনে
কথায় কথায় বেলা বাড়ে আর বিকাল গড়ায়;
প্রধান অতিথি—নেতা বললেন, আমার সবচে
প্রিয় কবি আমারই অনুষ্ঠানে আজ সভাপতি;
তার অজস্র কবিতা মুখস্থ আমার
এত বড় কবি কবে এদেশে জন্মাবে!
পারলেন না এবার নিতে কবি। উঠে বললেন—
আমি তো লিখেছ বহু কবিতা—এবার বলুন
আমার কোন কবিতা আপনাকে করেছে বিমুগ্ধ?
নেতা বললেন, কোনটা যে রেখে কোনটা যে বলি…
এখন তো মনে নেই কোনোটাই।
এবার একটু নিচু স্বরে ধীরে বললেন কবি—
কোন বইটা আমার বেশি প্রিয় তবে?
রেগেমেগে নেতা বললেন,
ওই সব ছাইপাশ মনে থাকে কার!
বক্তৃতার ভেতর যে কেন এত ডিস্ট্রাব করেন!
কবি বললেন, স্যরি! এবার চালিয়ে যান নেতা।
বাংলা পাঁচের মতো মুখ করে নেতা বললেন—
‘কবিরা বড় ঝামেলা! এদের যে কারা ডেকে আনে!’
পলান পাগলের কথা
আশ্চর্য হলেও সত্য—পলান পাগল
যখন মেম্বার পদে ভোটে দাঁড়ালেন
পুরো গ্রাম পার হয়ে পরবর্তী গ্রাম
সমস্ত ইউনিয়ন চমকে-চমকে উঠেছিল
ঘটনা কি সত্যি
পলান পাগল নাকি ভোটে খাড়াইছে!
মাঠফাটা রোদ্দুরের মতো ঠা-ঠা সত্যি
গ্রামের ইজ্জত গেলো— গেলো গেলো মান!
এ গ্রাম তো পাগলের গ্রাম!
পলান পাগল যদি ভোটে জিতে যায়
তবে তো সমস্ত গ্রামবাসীও পাগল!
একটা ভোটও যেন না পায় পলান পাগল,
এমন দৃপ্ত শপথে একট্টা সবাই।
পলান পাগল তবু মেম্বার হলেন
নাম্বার ওয়ান—
তার বিজয় মিছিলে পরিচিত সব দামিমুখ।
পলান পাগল জামা খুলে
বাঁধেন মাথায়
নাচতে নাচতে ঘন ঘন
পানের লালচে পিক ফেলে কন:
‘হালার এই গ্রামের লোকের কী রুচি,
আমারেও ভোট দেয়!
আমারেও মেম্বার বানায়!
আমার মিছিলে আসে পাগলের সাথে
পাগল সাইজা নাচে!’
নদীর গল্প
বাঘা যতীনের দাপিয়ে বেড়ানো নদীটা এখন নেই
নেই সেই সেই পানসি নৌকা, সাম্পান সারি নেই
যৌবনে ঢেউ তোলা সেই স্রোত সেই সুর বাঁশি নেই
বিবর্ণ দিন রাত পড়ে আছে আঁধারে হারিয়ে খেই
কয়া বাজারের শুকনো ঘাটের পেছনে দাঁড়ানো সেই
দেবতীকে বলি, ‘তুমি নদী হও’, সে বলে, ‘সাহস নেই’
আবারও বলি, ‘তুমি হও ঢেউ— দুকূল উপচেপড়া
যৌবনভরা দেহ থাক আজ দুই পাড়ে ভাঙাগড়া’।
বিরান জমিনে ফলেনি ফসল কত দিন কেটে গেলো
স্বপ্ন দেখতে ভয় পাওয়া চাষি ছুটে যায় এলোমেলো
শ্মশানের মতো পড়ে আছে মাঠ চৌচির পিপাসায়
এখানে এখন তৃষ্ণাকাতর পাখিরাই কাতরায়।
দেবতীকে বলি, ‘তুমি হও নদী, হও খরস্রোতা নদী
দুকূল ভাসানো জলের দাপটে বয়ে যাওয়া নিরবধি’
দেবতী তাকায় আকাশের দিকে শূন্যদৃষ্টি মেলে;
তারপর মিশে যায় দিগন্তে আমাকে পেছনে ফেলে।