দৃশ্যের জিঞ্জির
ক্যাবল স্টোনের সরণীতে জুড়ি গাড়িটির পেছনে ঘুরে ফিরে
দেখি—চলছে সর্বত্র খোলামেলা কী এক প্রেষণায় দেওয়া-নেওয়া,
নগরীর চকে হাট বসিয়েছে বনঘুঘু—বাঁধা পড়ি দৃশ্যের জিঞ্জিরে
অশ্বযুথের পদশব্দ অবতলে ছড়িয়ে দেয় প্রতিধ্বনির আলেয়া;
দেখা মেলে সূর্যের—ঢুকে পড়ি গাছবৃক্ষের সাবুজিক সংসারে—
উদ্যানে সুস্থির হয়ে হয়ে আসা জনপদ যেন
লবনাক্ত হয়ে আছে ভালোবাসার কবোষ্ণ ক্ষারে;
পুষ্পভূক পতঙ্গের মতো কান্তিতে চঞ্চল রূপমৃত্তিকা আজ
পা কয়েক সামনে—পশরা নিয়ে প্রদর্শনী বসিয়েছে বর্ণাঢ্য পাথর,
চোখের ছানির মতো মুনস্টোনের অবয়বে ধূসর কারুকাজ—
আখরোট কাঠের খেলনা গির্জাঘর,
পাশে অ্যাম্বারের মধুতে জারিত হয়ে আছে অযুত বছরের জীবাশ্ম
আমার ভেতরে পুড়ে অপ্রাপ্তি—পুড়ে পুড়ে নিমিশে হয় মুক্তাভষ্ম।
বাদ্যযন্ত্রহাতে কিমানো পরা নারী
শুনি তারের মৃদু ঝংকার
কিমানো পরার নারীটির হাতে বাদ্যযন্ত্র—
জানতে ইচ্ছাও হয় না কী সমাচার,
বাজাচ্ছে কি জ্যান ঘরানার মন্ত্র—
কোথায় যেন নিরলে তৈরি হয় সুদূরের সেতু,
চলে—সমুদ্রজলে পরিমিত পারাপার;
ফোয়ারার চত্বরে মেঘলা দুপুরের পাটভাঙা আলো
পুতুলনাচের সুতোয় বাঁধা জলের দৌড়ঝাপ—
রোদে একটি ডানা যেন ঝলসালো,
ম্রিয়মান হয় বুঝি মনস্তাপ;
ভেদ করে ঔকগাছের পত্রালি আঁধার
শ্বেতপাথরের মূর্তিতে উড়ে এসে বসে চিল,
জলে যুক্ত হয় প্রতিফলনের সম্ভার—
আচ্ছন্ন হয় সাবুজিক সংসারের দৃশ্যনিখিল,
পাখিটি চঞ্চুতে খুঁটে খুঁটে পান করছে জল—
খুঁজি বাদ্যযন্ত্রের বেদিতে ফিরে যাওয়ার অহেতুক ছল।
মরক্কো লেদারে বাঁধাই অভিধান
ভালো লেগেছে হরেক শৈলীর স্থাপত্য কলা
পেনাং-এর মন্দিরে দাঁড়িয়ে একবার দেখেছিলাম—
কিভাবে অমিতাভ শোভিত মিনার ডেকে আনে
মেঘভাসা আকাশের অনন্ত শরৎ,
খুঁটিয়ে দেখেছি দেয়ালগিরি অলিন্দ ও খিলান
কিন্তু কখনো ভাবিনি নির্মাণ করা জরুরি
নিজস্ব ভদ্রাসন—কুটির কিংবা ইমারত।
লিপ্ত হয়েছি রকমারি পেশায়—
নানা কারণে ধরা হয়নি দৌলত বৃদ্ধির পথ,
আচ্ছন্ন হয়েছি মেধা ও মেহনত বিক্রির নেশায়
স্বাক্ষরে সম্মানিত করিনি উল্লেখযোগ্য কোনো দাসখত;
যেতে হয়েছে যুদ্ধক্ষেত্রে
শত্রুমিত্রের সংঘর্ষে হয়েছি উদ্বেলিত—
নিয়েছি পক্ষ—তবে হতে চাইনি সৈনিক,
চিত্রকলায় উদ্ভাসিত হয়েছে নারীদেহের লবণারিক্ত লাবণ্য
সংবেদনের ইন্দ্রপ্রস্থে জ্বলেছে কখনো পরাক্রান্ত পাবক বন্য
হইনি প্রেমিক;
মানচিত্র থেকে মুছে গেছে সরণী
গন্তব্যের দুয়ার একে একে হয়েছে বন্ধ—
স্নায়ুবিক দোলাচলে দোদুল্যমান হয়েছে দ্বন্দ্ব,
দিনযাপনে দুর্দশাই তো ছিল প্রধান
কেতাবখানায় হন্যে হয়ে তালাশ করেছি—
আরও দিন কয়েক বেঁচে থাকার
মরক্কো লেদারে বাঁধাই এক অভিধান।
সীমান্ত অতিক্রম করে..
মাথায় ট্যাসেল জড়ানো তাজে চাঁদতারা
বড়শি বায় বাটিকের বর্ণাঢ্য বুবু পরা তিমনি গোত্রের বৃদ্ধ,
পাম ওয়াইনের ঠিল্লা মাথায় দুলে দুলে হাঁটে—
মেন্ডি সম্প্রদায়ের যুবতী,
নাড়ে হাত তারা দুজনে—আফ্রিকার উষ্ণতায় হই আমি ঋদ্ধ
বহতা স্রোতে বনভূমির ছায়া—
মহাকাশের কিরণে ক্রমাগত তৈরি হয় আলোজলের রতি;
পাহাড়ি নদীতে আধডোবা আগ্নেয়গিরির উৎক্ষিপ্ত
কালচে পোড়া শিলাপাথর,
বাজপাখির নীড় বাঁধা তরুবরের জখমে তৈরি হয়েছে আগর—
অজস্র আগুন-পিঁপড়ার বাঁকানো রেখাচিত্রে হেঁটে যায় চীনা ড্রাগন,
কোথাও যেতে ইচ্ছা হয় না আজ—
চলিষ্ণু জলে পাথরে ঠোকর খায় ভেসে আসা লোহিত রঙ্গন;
সিয়েরা লেওনের ব্রিজে দাঁড়িয়ে দেখা যায় এ দৃশ্য দু দণ্ড
কিন্তু কাউকে গুছিয়ে যায় না বলা,
চলমান মাইফেলে কে আন্তরিক কে-ই বা ভণ্ড—
সেনেগালের সীমান্ত অতিক্রম করে
গোলা রেনফরেস্টে এসেও থামে না ছিন্নমূল গোত্রের পথচলা।