দৃশ্যপট
তুমি যেন আসবে বলেছিলে! বললে আমায়– বুক ছোঁবে না, ইসস।
জন্মদিনে ইজেলজুড়ে আমি এঁকেছি তাই ছুটন্ত কার্নিশ।
অবেলা, তাই ঘরের কোণে বসি, বসন্তে ঝড় বৃষ্টি হওয়া ত্রুটি,
আঁধারে সুর আলোর এলোমেলো, কোথায় তোমার বাঘবন্দি জুটি।
চোরকাঁটা মাঠ চারশ তোষামোদে লাল করবীর লম্বা চুলে বাস,
জ্যোৎস্না ভেঙে ঢেউয়ের চূড়ায় জ্বলে কণ্ঠ ঘিরে রঙিন ফসফরাস।
একটি ফুঁয়ে পাঁচ আঙুলে দশ সাজিয়ে ছিলাম শীতের বাগান বাড়ি,
কথার পিঠে তোমায় বলেছি কি একমাত্র ভালোবাসতেই পারি?
বায়ুস্তরে সন্ধ্যা ঘন ভাসে, হায় কী দূর, দূরের কুঁড়ে ঘর।
শব্দ দিনের স্তব্ধ বসে থাকা যাত্রাবিহীন আমার স্থানান্তর।
দৃশ্যপটে মানচিত্র জাগে, ছেড়েছি তাই মনের কানাগলি,
শহরজুড়ে আকাশ ক্যানভাসে তোমার মুখের চিত্র এঁকে চলি।
জলহস্মিন সন্নিধিং কুরু
জীবন তো বেশ কেটে গেছে, কিছুদিন হয়ত বা যাবে,
স্মৃতির আধারে থাকা নীড় ভেঙে যাবে নয়ত ফুরাবে।
বাল্যস্মৃতিতে সবকিছু বেঁচে থাকে সূর্যের মতো,
আমার জীবনে মুজিবুর হয়ে আছে সূর্য সতত।
স্বাধীনতা অনেকে পেয়েছে, সংগ্রাম শেষে যারা পায়
ইতিহাস বলে শার্দুল, এ মুকুট নেতাকে মানায়।
দেশ নয়, উপমহাদেশ মেনেছিল তার কথকতা,
এগিয়ে এসেছে অন্যেরা, গৌন সকল বৈরিতা।
সে সময় সময়ের দাস, এশিয়ার মুক্তির গান
তার স্বরে উঠেছিল ফুটে পৃথিবীসেরার সম্মান।
জানি না, কারণ জানা নেই, জানি শুধু রাখতে পারিনি,
বুলেটে ঝাঁঝরা মৃতদেহ আঁকড়ে বলেছি– আমি ঋণী।
পারিনি তোমায় পিতা আমি বলতে–শেষের এই শুরু
গঙ্গায় তর্পণ করে বলি– জলহস্মিন সন্নিধিং কুরু।
ওঁ নারায়ণায়
নিয়তির গুলি বিঁধেছিল তার বুকে,
ইচ্ছে হলেই আকাশের তারা তিনি
. অক্লেশে ধরে ফেলতে পারতেন।
ইচ্ছে হলে তিনি ডায়াল ঘুরিয়ে বজ্রনির্ঘোষে
—না, না, মোলায়েম স্বরে
বলতে পারতেন—ইন্দিরা…
তীব্রদাহে পাকপ্রবাহ তখনও কথায় কথায়
. উড়ে আসত পুবের দিকে
দুহাতে সে গুলির স্রোত ঠেলে মানুষটি
. ছোট্ট দেশটিকে অবয়ব দিয়েছিলেন,
বাংলাদেশ।
. অথচ সভ্যতা অর্বাচীন
তার বুকে গুলির আলপনা এঁকেছে। বাহ।
অথচ আজ চল্লিশ বছরেরও পরে
. শতাব্দীর তীব্রতম অন্ধকারে
উচ্চারণ করি—
. ওঁ নারায়ণ পরাবেদা,
. নারায়ণ পরাক্ষরা,
. নারায়ণ পরাগতিহিঃ,
আমাদের সামনে থাকে একটাই উজ্জ্বল মুখ
শেখ মুজিবুর রহমান।
সীমান্তহীনতা চাই
সীমান্তে এসে দাঁড়ালেই আমি বড় বিপন্ন বোধ করি,
আমার রয়েছে পাসপোর্ট, ওপারে যাওয়ার ভিসা, সঠিক টিপছাপ,
আমন্ত্রণ ওপারের, অপেক্ষায় আশরাফ, ইকবাল, সোহাগ, সাহানা
উষ্ণ বুক পেতে…
আমি কাঁটাতার দেখে মাথা নিচু করি। তীব্রতম লজ্জায়।
সৃষ্টি সীমান্ত রচনা করেনি, দেশভাগও নয়,
আদ্যন্ত মানুষ ও স্বার্থ সাময়িক করেছে এমন বিভাজন।
শান্তির সাদা পায়রা ওড়ে হাডসন নদীর ওপরে,
এদিকে আসে না। রক্তের লাগ লাগে গাজা স্ট্রিপে,
ফিলিস্তিনি সীমানায়, ইরানে-ইরাকে, কোরিয়ায়।
ফেলানিরা লাশহয়ে ঝোলে কাঁটাতারে।
সীমান্ত মানে তবে প্রান্তের শুরু।
সীমান্ত মানে তবে প্রান্তের শেষ।
আমরা-ওরার রেখা বিভাজিকা।
আমরা কারা তবে?
যে মায়ের কানে আজও মহালয়া ভোরে চণ্ডীস্তোত্রের সাথে
মিশে আছে ভোরের আজান।
আমরা সে মায়ের সন্তান। মেনে নিতে পারি কাঁটাতার?
রেহানের শিক্ষক পিতা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ পড়ে মুজিবের
ছবির গায়ে স্বপ্নের হাত বোলান।
আমরা সে পিতার সন্তান। মেনে নিতে পারি এ সীমানা?
ওরা তবে কারা?
যে আশরাফ আমার কন্যার বিবাহে যজ্ঞদানী রচনা করেছে,
জ্বালিয়েছে হোমের অনল।
সে আমার ভাই। তার বুকে এখনও মোছেনি খণ্ডন?
সাহানা সোহাগ ইকবাল আসেনি এদেশে। তবুও তো
সাহানার বোনা কাঁথায় ঘুমোবে আমার উত্তরপুরুষ,
ইকবালের পাঠানো মোম জ্বলবে তার আগমনে,
সোহাগের সোহাগী চাদরে ঘুমোবে।
এরা পারে মেনে নিতে বিদ্বেষ, বিভেদ , বিভাজিকা?
তবে কিসের সীমানা এই মানবজমিনে?
সীমান্ত বড় অসহিষ্ণূ, সীমানা সৃষ্টি করে বোধ হিংসার,
যেন এ মাটি আল্লাহর নয়, যার জোর তার!
তাই সীমান্তহীনতা চাই।
কবিতায় এবং সঙ্গীতে, শিল্পে, কলায়, মননে, যাপনে।
অবাধে করতে পারি এপার-ওপার।
তাহলেই একদিন হতে পারে এ বাংলা তোমার আমার।