দূরত্ব-১
এখানে কফি নেই।
বিশেষত কফি আমার পছন্দও নয়
খুব বেশি হলে হঠাৎ কখনো এস্প্রেসো
খুব তেতো। এক চুমুক।
ওতেই শেষ। ব্যস-
এই নিঝুম রাত।
আমি স্বাধীন—একটি খোলা বারান্দা
কিনেছি জীবনের দামে।
প্রচুর হাওয়া আসে
প্রচুর পাখি বসে সকালের মতো
এক্কাদোক্কা খেলতে খেলতে দুপুরের
রোদ খুঁটে খুঁটে সন্ধ্যে নামায়।
আহা, ঝুম বৃষ্টি এখন আমার ঘরে।
যেন লালমাইয়ের বর্ষা আজও অবিরল ঝরছে এখানে।
সেই বসন্ত আকাশ মিনিয়েচার হয়ে রয়েছে এখানে।
এতদিন কোথায় ছিল! এইসব!
রাত মধ্য। ভীষণ চুপ। কথারা।
ভেতর বাহির একাকার…
ভেঙে পড়ে একা একা।
খুব ঠাণ্ডা এখানে কাঁচের দেয়াল।
তবু আমার কফিতে বসে না মন।
জ্বালি না দেশলাইয়ের কাঠি।
এক চুমুকে এস্প্রেসো শেষ করি
তারপর… আমাদের ছবি দেখি।
রাত মধ্য। হিম অজস্র।
কাঁটাতারের দূরত্ব বড় বেশি দীর্ঘ।
দূরত্ব-২
কিছু নয়
স্রেফ তুমি এসো।
বর্ষা নামুক।
কামুক বসন্ত উড়িয়ে দিয়ে।
কিছু জলে ধুয়ে যাক
আমাদের বিবর্ণ পাতাগুলো।
একাকী রাতের পাঠশালা।
মুখস্ত এইসব মন্ত্র।
সঙ্গ দিতে আসুক না হয় কিছু জোনাকির দল।
গভীর অক্ষরে জেগে থাকা ক্ষত
কেবল নিজেরে করে চলা প্রতারণা
গলে পড়ুক কিছু তো আজ।
তারপর, তোমার পছন্দ মতো
এক কাপ চা।
ইস্পাহানি মির্জাপুর।
কাঁটাতারের দূরত্বে…
দূরত্ব-৩
এক্ষুণি করে নেওয়া যেতো নতুন কোনো
পাণ্ডুলিপির খসড়া কিংবা দলিল।
যখন তখন জেনে নিতাম
যেকোনো কবিতার ব্যাখ্যা।
একাকী রাতের কপালে জ্বর ছুঁয়ে
দৌড়োতে ফার্মসিতে।
গোপালের ঘরের সামনে
দাঁড়াতাম সাবধানে।
সন্ধিপূজোর যজ্ঞের আগুন
গভীরে রেখেছি আজও।
অবিভাজ্য সকল।
অথচ ভাগ করে দিয়েছে কেউ।
এটুকু আমার—ওটুকু তোমার।
হতে পারতো সবটুকু আমাদের।
নিয়ত স্মৃতিতে আগুন জ্বালি সাবধানে।
আরও সাবধানে থাকি কাঁটাতারের দূরত্বে।
দূরত্ব-৪
হারিয়েছ রক্তরাগ সন্ধ্যার আকাশে
নিভেছে প্রদীপ ঝড়ের বাতাসে।
তুমি আলো নেভা রাত ভালোবাসো।
আমি ক্ষয়ে যাওয়া দীপ জ্বালাই ।
তুমি মালা ছুড়ে ফেলে দাও
আমি গাঁথি অবিরত।
এভাবেও হয়।
ইচ্ছেগুলো বলে দিয়েছি সব।
তোমার সকল ভেসে গেছে জলে।
আমি গড়ে তুলি ক্রমাগত।
তোমার ইচ্ছে নেই কিছু আর।
তবু জ্বালিয়ে রাখি অন্ধকার
হাতে রাখি কিছু রাত।
অমরাবতীর চূড়ায়
জেগে থাকুক কিছু বিষ।
কিছু প্রেম যদি সাথে রয়
কাঁটাতারে দূরত্বে…
কী বা এসে যায় কার…
দূরত্ব-৫
এখানে আঁধারের নিকষ ঘ্রাণ
আকাশের ভাঁজে বিচ্ছেদী চাঁদ।
মৌন কথা। তবু মুখর রাত।
ওখানে নিমগ্ন মাধবী সময়।
সুরে একা আমাদের গান…
কি-বোর্ডে ঝড়। কেঁপে ওঠে আকাশ
কাঁপে নক্ষত্র অথবা চাঁদের প্রহর।
এপারে জোৎস্নায় গুনি অক্ষর…
কখনো মাতাল
কখনো বিলাস
কখনো সঘন প্রেম
কখনো বিরহ।
পাতলা জলের মতো
কখনো নারীর অভিমান।
তারই নিচে কেঁপে ওঠে স্বপনের ঘর।
কাঁটাতারের দূরত্বে।
কখনো ভেসেও যায় জলে
জোৎস্না অথবা চোখের কাজল।
দূরত্ব-৬
জানে না সে। জানে না…
কখন কোন ধ্রুবতারা
তুলে নিতে হয় ছায়াপথ হতে
জানে না কখন মুছে দিতে হয়
অবসন্ন বিষাদের মায়া
কখন তুলে নিতে হয় রাজ্যপাট
ঘোর অমানিশার কালে।
আমি…
তার পায়ের ঘ্রাণ শুঁকে শুঁকে
চলে যাই অমর মেঘলোকে
নিক্কনে বিষণ্ন সেখানে যাপনেরও কাল
খঞ্জনার মতো।
বিছিয়ে রাখি চোখের মায়া
তার পদচিহ্ন বুকে তুলে নেব বলে।
তবু বিকেল…অন্ধকারে মরে গেলে পর
আবার মিশে যাই লোবানের ঘ্রাণে।
এবং
দূর থেকে দূরে যাই
কাটাতারের দূরত্বে…
দূরত্ব-৭
তুমি যেথা যাবে
আমি অন্য আর কোথা
কিছু ঘাস আর তৃণলতা
বরাবর সাথে থাক।
কিছু জোনাকির রঙ
কিছুবা আঁধার
যেখানে জ্বলে ওঠে
আত্মার শিখা।
শরীরে আমার আধো প্রেম
আধাআধি বিষ।
আধো মায়া
আধখানি তার মরীচিকা।
এই দূর বহুদূর
কাঁটাতারে ঘেরা।
দূরত্ব-৮
প্যাকেট খালি হলেই
কপাট খোলার শব্দে জেগে উঠি
আগুনের নিচেই একটা পুরো পৃথিবী আমার।
দুপুর নিরালা…
রাতমধ্য খুব নিঃস্ব হয়ে পড়ে।
আগুন যদিও বা পাওয়া যায়
ধোঁয়া জ্বালবার মালমসলা নেই।
এখানে বদলে যায় সহজেই মানুষের মুখ।
কঠিনতর রাজনীতিকের ভাষায়
কথা বলে ওঠে সাধারণ মানুষ
যদিও মানুষ মাত্রই রাজনৈতিক।
স্বদেশের মানচিত্রে একটা ভুল ভূখণ্ড আঁকা হয়ে যায়।
ভুল ডেস্টিনেশনে ব্যাখ্যা করে কেউ কেউ।
মরীচিকা আহা…
কেউ জানেনা এ আমার নয়
অনেক দূরের।
ছলনায় ছলনায় একটা জীবন।
কাটাতারের দূরত্বে।
দূরত্ব-৯
যে আমি ছুটে এসেছিলাম
পৃথিবীর মানচিত্র ভুলে
সে পথে কাঁটা ছিল।
যা আমি বিলিয়ে দিয়েছিলাম
লিখনপত্র ছাড়াই
সে পথে ভালোবাসা ছিল।
অথচ..দলিল ছাড়া কোনো
জমি আপনার নয়।
সীমানা বিহীন কোনো যুক্তপথ নেই।
কাঁটা ছাড়া কোনো পথে শুদ্ধতার
কোনো সুযোগ নেই।
জীবন এক বিস্তৃত দূরতিক্রম।
এখানে দিন আর রাতে
কাঁটাতারের দূরত্ব।
দূরত্ব-১০
বিকেল অন্ধকারে মিশে গেলে পর
রোদের ঝিলিকে ছড়িয়ে গেছে সূতীক্ষ্ণ বিষ
ধুতরা ফুলের মধু পরমায়ু হবে জেনে
খেয়েছে যে সে কী জানে মৃত্যুতে শোধ হবে ঋণ!
জননীর অবগুণ্ঠণে কৃষ্ণা তৃতীয়ার চাঁদ
জোৎস্নার অক্ষরে বুনে দিয়ে গেছে
এক মাতাল জীবন।
কেউ কেউ চেনে টাকা
কেউ চেনে মন
কেউ চেনে নারী
কেউ চেনে মদ
আমি চিনি প্রহরে প্রহরে প্রেম
চিনি অক্ষরে অক্ষরে কবিতা
আমি চিনি ভালোবাসা
চিনেছি অবশেষে জিঘাংসাও প্রবল
কাঁটাতারের দূরত্বে…আহা।