দূরতর ছায়া ছেয়ে থাকে
এক.
তোমাকে হলো না বলা: বনঘ্রাণ গেয়ে গেছে কেউ
আকাশে উড়ছে বক সন্ধ্যারাগে কোনো সাদা দিনে
দু’চোখে তিসির রঙ; দীর্ঘতর ছেলেখেলা কিনে
ঘূর্ণির বিভ্রাটে জিত ছিল কত—শত নদীঢেউ!
একবার ঢেউ হয়ে দেখো যদি অবলার কূল
জলপর্ব সত্য—সত্য বালিহাঁস, লেগে থাকে বুকে
পাতার আড়ালে বসন্তের জমানো অসুখে
সুদূরের মানসাঙ্ক—একা হয়ে ডাকে বুলবুল—
ফিরেছে দোলনচাঁপা একা পায়ে পূত শুক্রবারে
শীতের শরীর থেকে খসে যায় রোদের বুনন
কুয়াশা আগলে রাখে কবেকার মানগন্ধী মন
তোমার চাতালে গিয়ে ফিরে আসি একা জলাধারে
কবে গেলে জোড় খুলে প্রার্থনায় পুষি তাঁতঘর!
টাঙিয়ে রেখেছি তবু ডোবা চাঁদ,নিখিলের স্বর…
দুই.
হারানো চাতাল থেকে ফিরে খেলা করে কন্যাকাল
কণ্ঠির উচ্ছ্বাস নিয়ে ডাকে বেনে বউ বনঘরে
রাখালিয়া ছেঁকে টের পাই তোমাকেই মনে পড়ে
সান্ধ্যভাষা টেনে তোমাকে পড়ায় যেই সরুখাল—
দুকূলে কলমি ফুলে থেমে আছে একার আশ্বিন।
যেন তুমি ভুলে গেছ বৃষ্টির শেষের বনঘ্রাণ
চলে গেছ হৃদয়ে হৃদয় ঘষে পোড়ে আমাজান।
তুমি চলে গেলে পলির আদর ফেলে ভাষাহীন।
এভাবে গিয়েছি কত স্মৃতি থেকে স্মৃতির ভেতরে
কুঁড়ির মতন ফুটে একান্ন—দুর্দিন তামাশায়
তোমারে খুঁজিতে ফিরি বহুদূর ঝড়া বিদিশায়
একটি চুম্বনে আজ প্রাসাদের ভীত নড়বড়ে।
আমার চলার পথে ছিল যে কাঁটার অনুরাগ
তোমাকে কুড়িয়ে রাখি থরে থরে বিরহ-বেহাগ।
তিন.
পথে পথে ইতি লেখা, দূরতর ছায়া ছেয়ে থাকে
পিপাসার যেই ধারে চলে গেছে হীরামন পাখি
স্মৃতির এপাশে গাঢ় রাখালিয়া; আলেয়ার রাখী
ওভাবে যাবার পরে চোখ রাখি যেন নদীবাঁকে—
তুমি দৃশ্য খুলে দিয়ে রেখে যাও পাড়খসা দিন;
পাথর ভাসানো খেলা, আমি থাকি প্রেম ও পাথুরে—
চিতা বদলিয়ে অন্ধ হুতুমের গান যত দূরে
মৌন ফলে থাকে ঢের, তারপর একার আশ্বিন
আমারে যে খুঁড়ে খায় ইহকাল—ঋতুর কূজন
পলির আদর ফেলে তবু তুমি যাও মহাকাল
তোমার রূপের বান নেবো বলে কূলের কাঙাল
বেড়াজাল ছিঁড়েখুঁড়ে তবু যাও খেলতুতো বোন—
তুমি চলে গেছো নাকি!ধেয়ে এলো অপত্যের বান
হাওয়ায় আগলে রাখি শুধু চলে যাওয়ার ঘ্রাণ…