কোনো এক অখ্যাত কবির জন্য
এখন আর ডাকে না বান তোমার চোখের নদীতে
নির্ঘুম রাতের পাখিরাও
রক্তাক্ত করে না তোমার অস্তিত্বের শরীর
একদা তোমার মতো আমিও দেখতাম
ভালবাসার হীরণ্ময়ী স্মৃতিগুলো একে একে।
পদ্মদিঘির কালো জল হয়ে ভেসে বেড়াতো অনুভবের স্বচ্ছ আকাশে
এখন সেখানে কেবলি মেঘ কেবলি মেঘ
দেখা যায় না জল ভারাক্রান্ত সেই আকাশ
দেখি না কতকাল তোমার স্মৃতির কঙ্কাল
তুমি যে গ্রহের অধিকর্তা ছিলে
অদৃশ্য এক ইশারায় আমি নিক্ষিপ্ত হলাম সেখান থেকে
মহাশূন্যের নিকষ গহ্বরে
বিবমিষা স্বার্থের বেড়াজালে আবদ্ধ তুমি
যে চোখ থেকে ভালোবাসার অমিয়ধারা নিসৃত
হতো
সে চোখ থেকে এখন বিচ্ছুরিত হয় ঘৃণার আগুন
কালের ধূলির মতো
কেটে গেলো কতকাল উন্মাতাল আলোর নগরে
উদ্ভাসিত ত্রিমোহনী ত্রিতরঙ্গে হাসে আর ভাসে
মোহন রাখাল এক পাল ছেড়ে একা খেলা করে
হিজল তমাল তলে এই গঞ্জে প্রেমের উচ্ছ্বাসে
সময়ের খাল হয়ে বয়ে গেলো কতটুকু শ্রম
ধূসর আঙিনাজুড়ে থোকাথোকা অপ্রাপ্তির ফুল
পর্যটক পাখিগুলো অবশেষে বুঝে সেই ভ্রম
কেবল বুঝি না আমি। এ কেমন তার চক্ষুশূল
এইসব দিন আর নৃত্যকলা নানা অবক্ষয়ে
কালের ধুলির মতো উড়ে যায় শুধু বেখেয়ালে
তখন সে ক্লান্ত প্রাণ বলে উঠে আমি শিবালয়ে
একদা ছিলাম বটে। মাখামাখি জলজ শৈবালে
এখন নাচে না রাধা শশীলজ, অচেনা প্রান্তর
আহারে সোনার দেশ। প্রত্নতত্ত্ব রুদ্ধ তার স্বর।
দুঃখের খামে কষ্ট নামে
তোমার জন্য ইদানীং ভীষণ কষ্ট হয়।
কষ্টের লাভাস্রোতে ভেসে যাই অনন্তর
তোমাকে না দেখার কষ্ট
আমাকে অবিরাম তাড়িত করে
হতোদ্যম এই আমি অবিমিশ্র কষ্টের বেনোজলে
আকণ্ঠ নিমগ্ন হই বেলা-অবেলায়
কখনো কখনো কষ্টের পাথর ভেঙে এগিয়ে যাই
কখনো কখনো কষ্টকে
পাঁজরঘেঁষা সহোদরার মতো
আগলে রাখি বুকের ভেতর
কষ্টের ভেতর দেখতে পাই তোমার অবিনাশী স্মৃতি
দেখতে পাই কেমন করে কথা বলো আগ বাড়িয়ে
আমিও তখন লাগাম টেনে স্বস্তি খুঁজি ছাগ তাড়িয়ে
কখনো কখনো খুব কষ্ট হয়।
ভেসে যাই কষ্টের লাভাস্রোতে
ভাসতে ভাসতে দেখতে পাই
কষ্টেরা কেমন করে উড়তে থাকে হাওয়ায় হাওয়ায়
ঘরের দাওয়ায়। সবুজ আঙিনায় খোলা মাঠে
ঝোলা কাঁধে বনবাদাড়ে তেপান্তরে
কেমন করে কষ্টগুলো খেলা করে
আমায় নিয়ে রাত নিশিতে বেউথা ঘাটে
কালিগঙ্গায় রাত নামে, রাত ভেসে যায় জলের সাথে
দুঃখের খামে কষ্ট নামে কষ্টমাখা এই বিজন রাতে
ক্ষমা করে দিও
হৃদয়ে হৃদয় ঘষে যে আগুন জ্বেলেছিলে তুমি
সময়ের ব্যবধানে ধীরে ধীরে নিভে গেলো আজ
আমিও তোমার মতো নগরের পদধূলি চুমি
সাজিয়েছি একে একে তোমাকেই, সুষমা স্বরাজ
এইতো সেদিন আমি পৃথিবীর অক্ষরেখা আর
নগরের বুক থেকে তুলে এনে কতিপয় মিল
গেঁথেছি কবিতা গান ভেঙে দিয়ে অভেদ প্রকার
অখণ্ড হৃদয় আজ খান খান খণ্ডিত নিখিল
এখনো তোমাকে ডাকি টেলিফোনে ভুল করে আমি
না শোনার ভান করে পড়ে থাকো দূর বৃন্দাবনে
জেনে গেছি পৃথিবীর এ গোলার্ধে সুর্য অস্তগামী
নিরাকার অন্ধকার নেমে আসে নির্বোধ নয়নে
না ভোলার অক্ষমতা ক্ষমা করে দিও নিজগুণে
জানি না হৃদয় কেন বারবার প্রেম বীজ বুনে
আমার মৃত্যুর পর
আমার মৃত্যুর পর হয়তো তুমি আসবে
ভোরের ব্যকুল বাতাসে বকুলের ঝরে পরা পাতা মাড়িয়ে
এসে দাঁড়াবে আমার আঙিনায়
আর আমি কবরের অদৃশ্য জানালা দিয়ে দেখবো
কেমন করে তোমার ছায়ারা হেটে আসছে সাবলীল
তুমি অবাক নয়নে চেয়ে থাকবে
জলপাই গাছটার দিকে
আমার মৃত্যুর পর
কেমন করে তার লাল লাল পাতাগুলো সবুজ হয়ে যায়
দেখবে আমার হাতে গড়া বাগানের কাব্যিক লতাগুল্ম
কেমন করে গদ্যের মতো রুক্ষ হয়ে যায়
কুয়াশার চক্রবাল ভেঙে ভেঙে
কেমন করে সকালগুলো বিধবার মতো বিবর্ণ হয়ে যায়
আর গোধূলির বর্ণালি প্রহরগুলো
কেমন করে মিশে যায়
আমার ভূতপূর্ব অস্তিত্বের অন্ধকারে
আমার মৃত্যুর পর হয়তো তুমি আসবে