কোভিড নাইনটিন-৭
ডালে ডালে গন্ধরাজ আর একটি ফিঙ্গে পাখি
খুব ভোরে দুইটি কোকিল করে ডাকাডাকি
সুখতারা উঁকি দেয় ঐ আকাশে
চোখের পাতার নিচে পাখা মেলে কে?
শিমের সময় শেষ, কাকরোল লতিয়ে ওঠে মাচানে;
আতা গাছ ফাঁকা হলো, চালতা ভরবে ফুলে,
বৈশাখী ঝড় নামে মাঝরাতজুড়ে
জলের টঙ্কার চৌচালা টিনে
মনে মনে বকুলের মালা গাথি আমি
তোমারও কী আজ তবে একা যামিনি!
এই আঁধার কেটে যাবে, চাতক খেলবে মেঘে মেঘে;
কামিনীর সুবাসে ভরবে শ্মশানের বাতাস,
লাকডাউন খুলবে, তবু গোরস্থানে থাকবে ভয়াল নীরবতা—
রাতের রূপসীরা পাবে না খুঁজে কুটুম্বের ঠিকানা
জমজমাট পানশালায় ফিরবে না অনেকে আর
বিশ্বায়নের বিষদাঁত দেখিয়ে দিলো করোনাভাইরাস
ভেঙে পড়েছে পারিপার্শ্বিক সব মেকি বিশ্বাস
এই নৈর্ব্যক্তিক অবিশ্বাসের কালে
নিখাঁদ প্রেমের যাত্রা শুরু হলো তোমার আমার।।
কোভিড নাইনটিন-৮
কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে ছলছল বোরো জমি
তারাভরা সন্ধ্যা—রাত সরব হয়ে ওঠে
ঘ্যাঙোর ঘ্যাঙে
ব্যাঙের যৌবন থৈ থৈ
কানে বাজে অবিরত ঝিঁ ঝিঁ
পানের বরজের দরজা খোলা হয়নি কয়েকদিন
বৈশাখের বৃষ্টিতে প্রাণ পাওয়া পাতার চাহিদা বেশি
কিন্তু এবার পাইকার আসেনি
টমেটোর জমিজুড়ে রক্তলাল—
মাস্কে ঢাকা নাসারন্ধ্রে বাঙ্গি ক্ষেতের সুবাস
পাথারের তরমুজও আইসোলেশনে
কয়েকদিন বাজার খুঁজে ক্যাপসিকাম পাইনি
নেই সবুজ কপি ব্রোকলি
দোকানি জানালো ওসব আসে না এখন
লকডাউন চলছে
তাই বাজারে সব স্থানীয় পণ্য
দামও বেশ কম, শুধু লেবুর দাম গগনচুম্বি
দুনিয়াজুড়ে সামাজিক দূরত্বের ট্রেন্ড চলছে
ভিড় বাড়ছে সামাজিকমাধ্যমে
আমরা ক্রমেই একে অপরের পরিপূরক হয়ে উঠছি
তিন ফুট দূরত্ব ঘুচিয়ে হৃদয়ের ভাঁজে ভাঁজে ঘুরছি।।
কোভিড নাইনটিন-৯
আমাকে হৃদয়ে ভরে হারাও অন্তঃপুরে
না জাগুক দুটি চোখ রাতদুপুরে
ভয় মাখা ভ্রূ নিয়ে এসো না মেঘ ছুঁতে
পাখির কণ্ঠ হও সুরেলা সকালে
ঘরবন্দি প্রতিদিন—
আকাশজালে আত্মা বন্ধকী—
ঘোরের কারসাজি
ফেসবুকে ডুবে থাকি
হৃদয়ের ককপিট একেবারে খালি
তবু এই হিম হিম বোশেখ রাতে
মনের ভাঁজে মন লুকিয়ে থাকে
হৃদয়ের দোর খুলে হৃদয় ডাকে
আমরা করোনার কাছে ঋণী, তাই—
প্রাণপ্রতিঘাতের এই নিস্তরঙ্গকালে
ফুসফুস ভরে জিকির তুলে—
অলকানন্দার ঘুমে দোল খাও তুমি
আমি ঝুলে থাকা মাধবীর পুষ্পমঞ্জরি।