আত্মবঞ্চনা
কিছু চিরকুট, ছেঁড়াগদ্যের মতো উড়িয়ে দিলেই কি নিভে যায় দহনকাল?
ভেজা কুয়াশার ভারী কান্নায় ঝরে যাওয়া রাতের মতো নিঃসঙ্গতা বাকরুদ্ধ করে রাখে এক নামহীন সম্পর্কের আত্ম-চিৎকার। কখন নিভে গেছে শুকতারা, নিভে গেছে আলোছায়াকাল, হিসাবের গরমিলে ভুল ছিল চন্দ্রতিথি। তবু জাগে প্রেম, নিষিদ্ধ রোদ, ছলকে ওঠা হাসির গোপন! হাওয়ার কাঁপনে জেগে ওঠা প্রবীণ জলাশয়ের মতো গহীনে জেগে ওঠে পুরনো সাময়িক!
সীমানা পেরিয়ে আসা প্রবল মায়ায় গচ্ছিত আত্মবঞ্চনার বীজ! রূপের সমস্ত ঐশ্বর্যে বিম্বিত হয়ে সূর্যের প্রস্থানে নুয়ে থাকা সূর্যমুখী জানে কতটা আগুন নির্বাপিত হয়ে আছে প্রতিটি পাপড়ির আড়ালে!
বার্ধক্য
রূপের জৌলুস আর যা-কিছু গোপন
টান টান ত্বক আর শরীরী বৈভব
অগোচরে মিয়ে গেছে একে একে সব
জরা ব্যধি দেহে বীজ করেছে রোপণ।
পলে পলে ফুরিয়েছে জীবনের রঙ
স্তিমিত হয়েছে চোখ চুলের কাজল
মন্থর হয়ে গেছে যত চলাচল
পুরনো লোহার মতো গিঁটে গিঁটে জং।
সময়ের ট্রেন কবে চলে গেছে দূর
শরীর ঠিকই তার রেখে দিছে ছাপ
আক্ষেপ হা-হুতাশ হোকনা প্রলাপ
আসবে না ফিরে আর হারানো দুপুর!
খুব বেশি বাকি নেই শেষ জংশন
ঘুণপোকা খেয়ে নিছে প্রিয় যৌবন!
তৎসম কৃষি
বাংলা ভাষার মতো আজকাল কৃষিপণ্যের ভেতরেও দুমদাম ঢুকে যাচ্ছে তৎসম (বিদেশি হাইব্রিড) বীজ। তৎসম, তদ্ভব আর বিদেশি শব্দের ভিড়ে যেমন ‘খাঁটিবাংলা’ শব্দ খুঁজে পাওয়া দুরূহ। কৃষিপণ্যও তদ্রূপ, হাইব্রিড বীজের খাদ্যশস্য কিংবা সবজির সমাহারে দেশি জাতের ফল কিংবা সবজির দুর্ভিক্ষ।
তৎসম সবজি বা ফলের আকৃতি-প্রকৃতি বেশ ঠাসা, ঠাঁট-বাটও কম না, তবু তৎসম শব্দের মতো উচ্চমর্যাদা এরা পায় না! তৎসম সবজি বা ফল কিনতে খাঁটি বাঙালির এখনো বেশ অনাগ্রহ। তাদের প্রতি খাঁটি গৃহিণীর আচরণও যেন ভ্রূ-কুঞ্চিত! কর্তার জিহ্বায় যদি না থাকে রসনার বাসনা, তবে গিন্নির কপালে জুটবে কর্তার ভর্ৎসনা।
আকারে বড় আর টসটসে দেখতে হলেও তা যে মুখরোচক না, সে কথা ভালোই জানে কৃষক! অবশ্য খাঁটি দেশি বিজে কৃষকের আবার নিরুৎসাহ, ফলনে কমজোর, সময়ও লাগে বেশি; তৎসম ফসলের চেয়ে আকারে ম্রিয়মান, ওজনেও নত! একদমই উঠে আসে না কৃষকের লগ্নি অর্থ! আর তাই, উন্নত জাতের ফলনে চলছে তোড়জোড়, বাঙালি ভুলতে বসেছে নিজস্ব স্বাদ, ঘ্রাণ আর ঝাঁজ। তাতে কী! সময় এখন উদার বিশ্বায়নের, পণ্যায়নের তো অবশ্যই, ‘অল্প খরচ, অধিক ফলন, অধিক লাভ’ সূত্রানুযায়ী নিজের আসন ছেড়ে দিয়ে তৎসম আর বিদেশিকে অধিষ্ঠিত করাই মহৎ কাজ।