মধ্যবর্তী
কনিষ্ঠা আঙুল ধরে হেঁটে যাচ্ছি,
পথের আড়ালে পড়ে আছে দীর্ঘপথ
জন্মান্ধ সময় আর ধূসর রোদ্দুর।
মধ্যবর্তী একটি প্রাচীন স্রোত
প্রবাহিত হচ্ছে শীর্ণ সমতটে,
তার ছড়ানো পাপড়ি থেকে
খসে যাচ্ছে ঋতুমতী নদী…
কনিষ্ঠা আঙুল ধরে হেঁটে যাচ্ছি,
পেছনে গড়িয়ে যাচ্ছে ঘুমঘর
মায়ামগ্ন সাপ আর নিদ্রিত দুপুর।
কনিষ্ঠা আঙুল ধরে হেঁটে যেতে যেতে
প্রলম্বিত একটি ক্রন্দন
নুয়ে পড়েছে দীর্ঘশ্বাসের পাশে,
আর অকস্মাৎ আমি ঘুমিয়ে পড়েছি
ছড়ানো একটি দিঘির ভেতর।
আমি ও ঈশ্বর
আমার ভেতর বয়ে চলে কোনো এক নদী, কোনো স্রোত নেই
অপুষ্টির এই নদীটিতে, শ্যাওলা জমেছে প্রচুর। আত্মার
আবর্জনায় জমেছে নীল। প্রণয়ের নীলে বিদ্ধ হতে হতে
পলাতক যযাতি নীলের খুব গভীরেই ডুবেছে অরণ্যে।
আমার ভেতর বয়ে যাওয়া নদীতে কুলকুল শব্দ নেই,
জেলেদের চলাচল নেই, মাছ নেই, মাছরাঙা পাখিদের
সুতীক্ষ্ণ শিকার নেই। জেলে, মাছ, মাছরাঙা পাখির চোখের
আলোয় ঝলক নেই। প্রতিটি শিকারে নিজস্ব সংকেত থাকে,
শিকারির চোখের কম্পনে সময় মুহূর্তে মুহূর্তে ভাগ হয়।
আর আমি বুকের ভেতর এক মরা নদী নিয়ে বসে আছি।
এখানে শিকার কিংবা শিকারির কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই।
আমি ঈশ্বরের প্রতিদ্বন্দ্বী নই অথচ ঈশ্বর খেলছেন এক
মনোহর খেলা। জন্ম মৃত্যু আর বিলাপ বিনাশ ভিন্ন ভিন্ন চালে
আমার বুকের স্রোতহীন নদী থেকে তুলে নিচ্ছেন চতুর ঈশ্বর।
একটি অসরল কবিতা
ল্যাম্পপোস্ট ভেবে হাফপ্যান্ট খুলে নিতেই সামনে এসে দাঁড়াল
ভূমিবিদ্ধ স্বর। কোনো কোনো ভ্রান্তিতে ভাঁজমুক্ত সন্ধিপ্রস্তাব।
তার অধিকাংশই মানা যায় না। আর সব কবিতাও একতালে
যায় না। কতক হত্যে দিয়ে পড়ে থাকা শূন্যতা। অরুণিমা এসে
উল্টে দিলে ছায়া—কয়েকটি গর্দভ গান তোলে মানুষের গলায়।
ল্যাম্পপোস্ট ভেবে হাফপ্যান্ট খুলে দিতেই চিকচিক, অসংখ্য বুননে
চুড়িদার পাজামা। মূলত তাতে আমার তাল ভালো যায়। আমি
চাই না চাই—অরুণিমা এসে বারবার খুলে ধরে কবিতা। কতক
সূচিকর্মে কতক স্পর্শে একটি নেংটি ইঁদুর গর্তে লুকায়। ফের
উল্টে গেলে ছায়া—কয়েকটি গর্দভ গান তোলে মানুষের গলায়।
ফাঁদ
সড়ক থেকে নেমে এসেছি জলে, দীর্ঘপথ অতিক্রম করে
একটি পরিত্যক্ত আপেলের মতো ভেসে যাচ্ছি শূন্যে।
জড়তা কখনো জ্যোতির্ময় নয়…
আড়মোড়া ভেঙে শালিকের ঠোঁটে ধরা দিচ্ছে মাছ।
মাছরাঙাদের ফাঁকি দেওয়ার আনন্দ সাময়িক এবং
পাখিদের ঠোঁটের স্বভাবে কোনো ভিন্নতা নেই…
অন্ধকার নেমে এলে অবশিষ্ট কিছুই থাকে না জীবনের।
পুনর্বার আনন্দ বঞ্চিত হলে, অতি তুচ্ছ একটি মাছের
জীবনের যতিচিহ্ন পড়ে থাকে পাখিদের তীক্ষ্ণ ঠোঁটের গভীরে।
এপিটাফ
নিমগ্ন প্রাচীন বৃক্ষ—জলে তার ছায়া
কাঁপে, আর বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যার আঁধারে
ডোবে চাঁদ কিংবা কুসুমের গাঢ় ঘুমে
স্পর্শে জ্বলে ওঠে, এই বুঝি জলস্রোত
ছুঁয়ে দেয় রতিবিদ্ধ মাছের শরীর।
নিমগ্ন প্রাচীন বৃক্ষ—তীব্র তীক্ষ্ণ হিমে
শুয়ে আছে নিরুত্তর জলের মৃন্ময়,
আর তার দেহে, খাঁজে কিংবা উৎকীর্ণ
শস্যের দানায় গ্রন্থিত রয়েছে স্থির;
এই পৃথিবীর আদিমতম কখন।