আহা শূন্যতা
আহা শূন্যতা! কী যে ভারী বয়ে বেড়ানো…
তোমার বিভ্রান্ত বিশ্বাসে
দম আটকে আসা নিঃশ্বাসে
আমার সময় কতটা দুঃসহ!
তার কতটুকু তুমি জানো?
প্রিয়তমা শোনো,
ভালোবাসাহীনতায়
বেঁচে থাকাও বেদনাময়
পলে পলে কত, আঘাতের ক্ষত
সুতা কাটা ঘুড়ির মত
নাটাইয়ের দিকে বিদ্রূপ করে
ভীষণ তামাসায়।
কিভাবে বুঝবে এসব?
তুমিও যে সময়ের স্রোতে
ভাসাতে জানো নাও,
ভাসাও ভাসাও…
ভেসে যাওয়া তরী
পাড়ের খোঁজ রাখে কতটুকু
আমাকে বোঝাও।
আজ ক্লান্ত হয়ে তোমার
দরজায় কড়া নাড়ানো
শূন্যতা! আহা শুন্যতা!
কী যে ভারী বয়ে বেড়ানো।
তুমি সম্ভবত গোল্ডফিশের প্রেমে পড়েছিলে…
তোমাকে হাজার বছর দেখি না!
তোমাকে দেখার জন্য আমি অনন্ত অপেক্ষায়!
আসলে তোমাকে আমি কোনো দিনই দেখি নাই।
তোমার সঙ্গে আমার প্রেম ছিল!
তোমার আমার গোপন অনেক কথা ছিল!
তবুও তোমার কাছে আমি যেন, যাচ্ছেতাই।
তোমার সঙ্গে আমার একবার দেখা হবার কথা ছিল
তারিখ-সময়-লোকেশন তোমারই ঠিক করা
রাতে যখন তুমি জানালে আমাদের দেখা হবে
সারারাত ঘুমাতে পারিনি, বিছানায় এপাশ ওপাশ নড়া।
খুব ইচ্ছে, প্রথম দেখায় তোমাকে একটা উপহার দেবো
ফুল না বই? না কি একটা লাল শাড়ি?
সাত সকালে কোথায়ও দোকান খোলা থাকে না
তবুও ভোরের আলো আগেই উঠে পড়ি।
সারারাত না ঘুমিয়ে খুব ভোরে
মেইন রোডে দাঁড়িয়েছি
দোকান খোলার অপেক্ষায়।
কী অবাক! একটা দোকানই খুলেছিল
রঙিন মাছের দোকান
ওই দিন ভোর সাড়ে ছয় টায়।
দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকায়
দোকানি আমাকে বললো, কিছু নেবেন?
বললাম, প্রিয়তমার জন্য খুঁজছি বই অথবা জামা।
দোকানি বললো এখন তো মডার্ন যুগ
আপনি জারসহ দুইটা রঙিন মাছ নিন
একটা মাছ আপনি, আরেকটা আপনার প্রিয়তমা।
এই বলে দোকানি জারসহ দুইটা গোল্ড ফিশ
ধরিয়ে দিলো আমাকে।
গোল্ডফিশ দুটো এত চঞ্চল! এত চমৎকার!
নেশা লাগলো তামাকে।
কায়দা করে জারসহ মাছ দুটো নিয়ে
পৌঁছালাম তোমার স্কুলের সামনে
কল দিতেই জানালে তুমি
হাতে অনেক কাজ। দেখা হবে অন্য কোনোখানে।
আমি বললাম তোমাকে গিফট দিতে চাই
তোমার জন্য সুন্দর দুটো মাছ আছে।
হুট করে বলে দিলে তুমি, ফিরিয়ে নিয়ে যাও
অথবা রেখে যাও স্কুলের গার্ডের কাছে।
মাথা নিচু করে জারসহ মাছ রেখে এসেছি স্কুলে
তোমার সঙ্গে আজও আমার দেখা হয়নি।
তুমি সম্ভবত গোল্ডফিশের প্রেমে পড়েছিলে।
অনেক পরে জেনেছি, গোল্ডফিশ
কিছু মনে রাখতে পারে না,
তার সঙ্গে থাকো বলে তুমিও
কিছু মনে রাখতে পারো না।
তোর কপালের টিপটা
ক্যান পারিস না আপন হতে?
তোর দিকেতো চেয়েই ছিলাম
আপন করে নিয়েই ছিলাম
আমার কিছু গভীর রাতে।
তোর জন্যে কবিতা লেখা
স্বপ্নে বিভোর কিশোর বেলা
তোকেই নিয়ে ঘুমের আগে
হাজার কথার চিঠি লেখা।
না না ছলে সামনে যাওয়া,
কে কি ভাবলো সেসব কিছুর
তোয়াক্কাটা না করে যে
উড়তো বুকে রঙ্গিন হাওয়া।
বুঝতি সবই বোঝার মত
অবহেলার জালের ভাজে
আটকে রেখে দিনে রাতে
কস্ট দিলি অবিরত।
তোর কি আর মর্জি হয় না
পাল্টা কিছু আবেগ দিতে
তোর কপালের টিপটা আজ
ছুড়ে দেনা আমার হাতে।
আমি একটু বাঁচতে চাই
বাঁচতে গিয়ে না হয় আমি
হঠাৎ করে মরেই গেলাম
তবু তোর আলতো হাতের
কোমল কিছু ছোঁয়া পেলাম।
একদিন বৃষ্টিতে ঝাউবনে আবডালে
খুব করে বুকে নিয়ে শীতের নিবারণ
একদিন মাথা রেখে তোর কোলে
খুঁজে নেবো কান্নার কারণ আর অকারণ।
একদিন ফড়িংয়ের সব রঙ কেড়ে নিয়ে
তোর মুখে মেখে দেবো
একদিন বিকেলে গাঢ় এক চুমু দিয়ে
তোর রাগ ভেঙে দেবো।
একদিন জোৎস্নার নীল রাতে
অজস্র চুম্বনে তোর বুকে এঁকে দেবো, গাঢ় নীলপদ্ম
একদিন ক্লান্তির ভোর রাতে
নোনা জলে ডুব দিয়ে শেষ হবে, প্রেম প্রেম যুদ্ধ।
একদিন আমাদের পিঠজুড়ে
থরে থরে জেগে যাবে, ফুল ফোটা খামচির দাগ
একদিন ভালো লাগা মিলেমিশে
লেনদেন ভুলে গিয়ে, শেষ হবে রাগ অনুরাগ।
একদিন রাত হলে একসাথে জড়িয়ে
চারপায়ে আঙুল ঘষে ঘষে
অবাধ্য কিছু চুমু তোর ঠোঁটে উড়িয়ে
মরে যাবো দুজনেই রাত্রির শেষে।
আরও পড়ুন: হুমায়ূন আহমেদ : হাওরের হাওয়া ॥ কাজী মহম্মদ আশরাফ